ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট তীব্র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৭ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার
mzamin

ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা টাকা দ্রুত কমছে। ফলে বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাত তীব্র তারল্য বা নগদ টাকার সংকটে পড়েছে। এতে বেশির ভাগ ব্যাংক তাদের কার্যক্রম চালাতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ সংকট মেটাতে প্রায় প্রতিদিনই ধার করছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো সুদহার বাড়ালেও ব্যাংকগুলোর ঋণ বা ধার কমেনি। চলতি বছরের প্রথম ৪ দিনে ব্যাংকগুলো মোট ধার করেছে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তথ্যমতে, গত নভেম্বর শেষে উদ্বৃত্ত তারল্য কমে ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। আগের মাস অক্টোবর শেষে যা ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। আর গত জুন শেষে ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২০২১ সালের জুনে।

বিজ্ঞাপন
উদ্বৃত্ত তারল্য কমার অর্থ হলো- অনেক ব্যাংক এখন চরম তারল্য সংকটে রয়েছে।

সূত্র জানায়, আমানতের চেয়ে ঋণ প্রবাহ বেশি বেড়ে যাওয়া, ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য কমে যাওয়া, নগদ টাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনা, ঋণ আদায় কম হওয়া এবং খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সংকট বেশি হওয়ায় ধারের মাত্রাও বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম চারদিনে ব্যাংকগুলো মোট ধার করেছে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বুধবার ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২১ হাজার কোটি টাকা এবং এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে কলমানি মার্কেটসহ অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। এ ছাড়া বছরের প্রথম দিন সোমবার ধার করেছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০ হাজার ৫০০ কোটি এবং কলমানি মার্কেট থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি এবং কলমানি মার্কেট ও অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে করেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার কলমানি ও অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে ধার করেছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।

একই সময়ে কল মানি রেট ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কল মানি হলো এক থেকে ১৪ দিনের ম্যাচিউর সময়কালের একটি ন্যূনতম স্বল্পমেয়াদি ঋণ, যা চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধ করতে হয় এবং আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। গত বুধবার গড় ওভারনাইট কল মানি রেট দাঁড়িয়েছে ৯.২৪ শতাংশ, যা গত বছরের জুলাইয়ের একই দিনে ছিল ৬.৩৭ শতাংশ।

সরকারের খরচ চালানোর বড় মাধ্যম ট্রেজারি বিল ও বন্ড। কারণ, রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত হারে হচ্ছে না। তা ছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিবর্তে এখন ভাঙানোই হচ্ছে বেশি। আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেয়াও বন্ধ করেছে সরকার। এজন্য ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে টাকা ধার করছে সরকার, যা দিন দিন বাড়ছে। এতে ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদে টাকা ধার করেছে সরকার, যা বিদায়ী বছরের জুনে ৮ শতাংশের নিচে ছিল। ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বীমা, করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায়েও ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেনা যায়।

একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সমপ্রতি সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ আমানতের হারের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি সুদ পাওয়ায় গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করছেন।
বৃহস্পতিবারের নিলামে সরকার যথাক্রমে ১১.১৫ শতাংশ, ১১.২০ শতাংশ এবং ১১.৫০ শতাংশ সুদে ৯১ দিন, ১৮২ দিন এবং ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ৬ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। 

আমানত সংগ্রহে সরকার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে ব্যাংকিং খাত এখন চরম তারল্য সংকটে ভুগছে।
আরেকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, তারল্য সংকটের কারণে তারা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। 
এদিকে রোববার অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যাংকগুলোর বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্যাংকগুলোর বাইরে টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডলার সংকট মেটাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে প্রচুর টাকা উঠিয়ে আনছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নেয়া হয়েছে। এতে করে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ঋণ না দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে তুলতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাজারে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, দেশে গত নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯.৪৯ শতাংশে নেমেছে। তবে এই হার গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৯.৬৩ ও ৯.৯৩ শতাংশ।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status