ঢাকা, ১৬ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মিত্রদের জেতাতে কারচুপি করেই হারতে হবে আওয়ামী লীগকে

সালেহ্‌ উদ্দিন
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

কিংস পার্টি এবং আওয়ামী লীগের মিত্রদের জেতাতে হলে কিছু আসনে কারচুপি করেই হারতে হবে আওয়ামী লীগকে। এছাড়া ভোটে  আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। এদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে ‘তলে তলে’ এবং ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে আসন সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। চারদফা বৈঠকের পরও আসন ভাগাভাগি নিয়ে দফা-রফা হয়নি। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন তা নিয়েও জোর তদবির চলছে। জাতীয় পার্টি ছাড়াও তৃণমূল বিএনপি বিরোধী দলের নেতার পদ প্রত্যাশা করছে। প্রধান বিরোধী দলের আসন নিশ্চিত করতে যতগুলো সিট প্রয়োজন জাতীয় পার্টি নির্বাচনের আগেই তা নিশ্চিত করতে চায়। এ নিয়ে সরকারি দল পড়েছে উভয় সংকটে। তারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে গোপনে সমঝোতা এবং প্রকাশ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন দেখাতে চায়। সরকারি দল আন্তর্জাতিক মহলকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে চাইলেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে জাপার অনড় মনোভাবের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন
আসন ভাগাভাগি ছাড়া জাপা এবং ১৪ দলের শরিকদের নির্বাচনে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। 
বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে ভোটের নিয়ন্ত্রণ প্রধানত ৫টি দলের হাতে। এ দলগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। দেশে তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে চারটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এরমধ্যে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট প্রদত্ত ভোটের ৩১ শতাংশ বিএনপি, ৩০ ভাগ আওয়ামী লীগ,   ১২ ভাগ জামায়াত এবং জাতীয় পার্টি পায় ১০ ভাগ ভোট। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৪ শতাংশ, বিএনপি ৩৩.৬০ শতাংশ, জাতীয় পার্টি ১৬.৪০ শতাংশ এবং জামায়াত ৮.৬১ শতাংশ ভোট পায়।

২০০১ সালের ১লা অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি ২৫২ আসনে ৪০.৯৭ শতাংশ আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ৪০.১৩ শতাংশ, জাতীয় পার্টি ৭.২৫ শতাংশ এবং জামায়াত ৩১ আসনে প্রার্থী দিয়ে ৪.২৮ শতাংশ ভোট  পায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৯ শতাংশ বিএনপি ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ, ৭ শতাংশ  জাতীয় পার্টি এবং ৪ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পায় জামায়াত। এই দলগুলোর বাইরে একমাত্র

ইসলামী আন্দোলনের (চরমোনাই) ২ থেকে ৩ শতাংশ ভোট রয়েছে। এই ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের মোট ভোটারের ৯০ শতাংশ বড় এই চারটি দলকে ভোট দেন। বাকি ১০ ভাগ ভোট ছোট ছোট দলগুলো ভাগ করে নেয়। জাতীয় পার্টি ছাড়া  এই ১০ ভাগ ভোটের রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ নির্বাচনকে অসম ভোটের লড়াই বলে অভিহিত করেছেন। সত্যিকার নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এই দলগুলোর বিজয়ী হওয়া দূরের কথা জামানতও হারাতে হবে। 

আওয়ামী লীগের মিত্র ১৪ দলের শরিকদের কয়েকটি সর্বশেষ ২০০১ সালের নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জেপি ০.৪৪, জাসদ ইনু ০.২১ ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন) ০.৭ ভাগ, ন্যাপ ০.০১ ভাগ ভোট  পায়। এই দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছাড়া আর কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ছাড়া আর সকল প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়। এর পর থেকে ওই দলগুলো এককভাবে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০০৮ সালের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন এবং ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের বিতর্কিত দুটি নির্বাচনে তারা মহাজোটের শরিক হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। একমাত্র আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছাড়া বাকিরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক জাসদ ৩ ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, তরীকত ফেডারেশন ২টি এবং জেপি ১টি আসন পায়। ১৪ দলের বাইরে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ২২টি এবং বিকল্প ধারা ২টি আসন পায়। বিগত ৩টি নির্বাচনে এই দলগুলোকে কখনো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কখনো প্রশাসনিক সহায়তায় বিজয়ী করে আনে আওয়ামী লীগ। এই দলগুলো এবারো আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চায়। চারটি কিংস পার্টিও এই আসন ভাগাভাগির মধ্যে যুক্ত হয়েছে।

এরমধ্যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে তলে তলে আসন ভাগাভাগির চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে গুলশান ও বনানীর দুটি  বাড়িতে গোপনে  গোপনে চারদফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ দাবি করেছে আসন ভাগাভাগি নয় সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব তার প্রক্রিয়া নিয়ে তারা আলোচনা করছেন। কিন্তু এই আলোচনা গোপনে কেন হচ্ছে তার সঠিক কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ দেশের সবগুলো গণমাধ্যমে প্রতিদিনই  আসন নিয়ে তাদের মধ্যে ভাগাভাগির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ ঘটনাকে ভোটারদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন সরকার আন্তর্জাতিক মহল এবং দেশের মানুষের চোখে ধুলা দিতে গোপনে জাতীয় সংসদের আসন বণ্টন করছে। একটি সাজানো এবং নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনকে  প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখানোর অপচেষ্টা বলে তারা অভিহিত করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ৪০টি আসন এবং  সংসদের বিরোধদলীয় নেতার পদের দাবিতে অনড় রয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে ২৫ থেকে ৩০টি আসন দেয়ার কথা বলেছেন। তারা প্রত্যাহারের বদলে ‘প্রক্রিয়ার’ মাধ্যমে  জাপার প্রার্থীদের জয়ী করার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু জাপা সব আসনে নৌকা প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দিয়েছে। সংসদের বাকি আসনগুলোতে তারা সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের তার দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক  বৈঠকে বলেছেন, চিন্তা করবেন না সম্মানজনক আসন ছাড়া নির্বাচনে যাবো না। ৪০/৫০টি আসন ছাড়া সমঝোতা হবে না।

জানা গেছে, সরকার যেমন জিএম কাদেরকে বিশ্বাস করে না জিএম কাদেরেরও সরকারের প্রতি সন্দেহ রয়েছে। জিএম কাদের মনে করেন সরকার তৃণমূল বিএনপিকে বিরোধী দল করতে পারে নতুবা ২০১৪ সালের মতো জিএম কাদেরকে হারিয়ে জাপার অন্য কাউকে বিরোধীদলীয় নেতার পদে বসাতে পারে। এই সন্দেহ অবিশ্বাসের মধ্যেই সরকারি দল আসন নিয়ে জাপার সঙ্গে সমঝোতা করতে চায়। একটি আঞ্চলিক শক্তি জাপাকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রাখতে ভূমিকা পালন করছে। ওই শক্তি জিএম কাদেরের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তাদের চেষ্টা ও আশ্বাসে জিএম কাদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য দাবি করেছেন শুরুতেই তাদের ৫০টি আসনের আশ্বাস দেয়া হয়।
আসন নিয়ে সমঝোতা করতে চাইলেও সরকারি দল নৌকা প্রতীক এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহারে রাজি নয়। তার বদলে তারা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিজয়ী হওয়ার গ্যারান্টি দিতে চান। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে ৭/৮টি আসন ছাড়া অন্য আসনগুলোতে জাপাকে জেতাতে হলে হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে কারচুপির মাধ্যমে হারাতে হবে অথবা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হলে এই নির্বাচন যে আসন ভাগাভাগির নির্বাচন হচ্ছে  তা দেশ-বিদেশে প্রতীয়মান হবে। এ কারণে  উভয় সংকটে পড়ছে সরকারি দল। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের আন্দোলনের সঙ্গী জামায়াত ও শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মতো বড় দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় জাপাকে যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে রাখতে চায় সরকারি দল। 

শুধু যে জাপার প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে হবে তা নয় চারটি কিংস পার্টি থেকে কয়েকজনকে জিতিয়ে আনতে হবে। সরকারি দল জিতিয়ে না আনলে তৃণমূল  বিএনপি, বিএনএম, সুপ্রিম পার্টি এবং কল্যাণ পার্টির কারওই জেতা সম্ভব নয়। এই চার কিংস পার্টির দেশের কোথাও সংগঠন নেই। কয়েকটি জেলায় কাগুজে কমিটি রয়েছে। বিএনএম শুরুতে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত ৮২ জনকে মনোনয়ন দেয়ার কথা  জানায়। যদিও ইসির হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন আসনে বিএনএমের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৯ জন।

২৩০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল বিএনপি। এরমধ্যে পাঁচজন সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্যরা হলেন মৌলভীবাজার-২ আসনে এম এম শাহীন, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের এম এ আউয়াল, সাতক্ষীরা-৪ আসনের এইচ এম গোলাম রেজা, ঝিনাইদহ-২ আসনে নুরুদ্দিন আহমেদ, মেহেরপুর-২ আসনে আবদুল গণি। দলের চেয়ারম্যান তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ), নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা হুদা মুন্সীগঞ্জ-১, মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। এরমধ্যে এম এম শাহীন ছাড়া আর কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অবস্থায় নেই। শমসের মবিন এবং তৈমূর আলমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের যথাক্রমে একজন সাবেক মন্ত্রী এবং একজন বর্তমান মন্ত্রী প্রার্থী আছেন। এই দু’জন ওই আসনে শক্তিশালী প্রার্থী। 

তৃণমূল বিএনপি’র কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই। দলগত অবস্থানের দিক থেকে আওয়ামী লীগের পরে এখানে বিএনপি’র শক্ত অবস্থান রয়েছে। কিন্তু বিএনপি’র কর্মী সমর্থকরা শমসের এবং তৈমূরকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে মনে করে। বিএনপি’র সমর্থকদের বিরাট অংশ ভোট বর্জন করবে। ফলে ভোটের মাধ্যমে এই দু’জনের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে শমসের এবং  তৈমূর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।  তৈমূর প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তৃণমূল বিএনপি সংসদের প্রধান বিরোধী দল হবে। এ বিষয়ে তাদের নাকি আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। সংসদের বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে হলে কমপক্ষে ২৫টি আসন প্রয়োজন। তৃণমূল বিএনপি’র ২৫টি আসনে জয়ী হওয়ার মতো বাস্তব কোনো অবস্থা মাঠ পর্যায়ে নেই। এমন সংখ্যক আসনে জিততে হলে কারচুপি ছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারানো কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। একই অবস্থা কল্যাণ পার্টির ক্ষেত্রেও। মোট ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে কল্যাণ পার্টি। এরা নিজ নিজ এলাকায় অখ্যাত। এমনকি কোনো কোনো প্রার্থী ওই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাও নন। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম ইতিপূর্বে ঢাকা ১৭ এবং চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবারো তিনি এ দুটির কোনো একটি আসন চেয়েছিলেন। কিন্তু এ দুটি আসনে জাপা এবং আওয়ামী লীগের দু’জন প্রার্থী রয়েছে। একটি সংস্থার নির্দেশনায় তিনি কক্সবাজার-১ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। নিজ এলাকায় প্রার্থী না হয়ে কেন তিনি অন্য এলাকায় প্রার্থী হয়েছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, এই এলাকা আমার মহাসচিবের বাড়ি। তাই এই এলাকাকে সুবিধাজনক মনে করেছি। তাহলে আপনি পরগাছা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দেবো। ওই আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র খুঁজছেন ওই এলাকার ভোটাররা। 
কক্সবাজার-১ বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আহমেদ। তাকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ভোটের মাঠ থেকে তিনি না সরে দাঁড়ালে শুধু কারচুপি না মহাকারচুপি করে জেনারেল ইবরাহিমকে জেতাতে হবে। এ মত এলাকার মানুষদের।

১৪ দলের শরিক জেপি (মঞ্জু) ছাড়া জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন), এবং তরীকত ফেডারেশনকে বিজয়ী করার দায়িত্ব এতদিন আওয়ামী লীগ পালন করেছে। এবার আওয়ামী লীগ তাদেরকে তার বিরুদ্ধে পাতানো নির্বাচন করতে বলছে। জেপি ছাড়া এই দলগুলো গতবারের ৭টি আসন তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য দেন-দরবার, কাকুতি-মিনতি করছে। আওয়ামী লীগ তাদের জন্য ৫টি আসন এবং জেপির জন্য ১টি আসন ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। এসব আসনে নৌকার প্রার্থীও থাকবে না বলে ১৪ দলের নেতারা আশ্বস্ত করেছেন। নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করা হলেও একমাত্র হাসানুল হক ইনু ছাড়া অন্য সকলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী করে জেতার মতো অবস্থা ১৪ দলের ওই শরিকদের নেই। সেজন্য তারা আওয়ামী লীগের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও প্রত্যাহার চান। কিন্তু সরকারি দল আন্তর্জাতিক মহলের দোহাই দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহারে রাজি হচ্ছে না। 
তবে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে এলাকায় মঞ্জু এবং ইনুর জয়ী হওয়ার মতো অবস্থা রয়েছে। বিপদে পড়েছেন রাশেদ খান মেনন। তিনি চীনাপন্থি রাজনৈতিক নেতা। যে কারণে একটি আঞ্চলিক শক্তির তার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। ওই আপত্তির কারণে তার মনোনয়ন ঝুলে রয়েছে। মেনন এখনো জানেন না তিনি কোথা থেকে ভোট  করবেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি ও তার দল নির্বাচন না করারও হুমকি দিয়েছেন। এতদিন ঢাকায় ভোট করলেও  তিনি বরিশাল-২ এবং বরিশাল-৩ আসনে  মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এখন তিনি বরিশাল-২ আসন চান। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শাহে আলমের স্থলে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসকে নৌকা দেয়া হয়। তালুকদার মো. ইউনুস বরিশাল-১ আসনে নবম এবং বরিশাল-২ আসনে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। বরিশাল-২ আসনে তাকে নৌকা দেওয়া হলে তালুকদার মো. ইউনুসকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হবে।

নির্বাচনে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বিকল্প ধারা। তারা নৌকা নিয়ে দুটি আসনে নির্বাচন করতে চায়। এরমধ্যে মাহী বি চৌধুরীর মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপি’র অন্তরা সেলিমা হুদাও মনোনয়ন দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগ মো. মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী করলেও অন্তরার প্রতি সহানুভূতি রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া  জাতীয় পার্টির এ আসনে  শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের সমর্থনে নৌকার প্রার্থীকে প্রত্যাহার চায়। নৌকার প্রার্থী থাকলে মাহীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

নিবন্ধিত সাতটি ইসলামী দল বা এই ধারার রাজনৈতিক দলের সাড়ে চারশ’র মতো প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এত প্রার্থী দিলেও সরকারের সহায়তা বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় না পেলে তাদের একজনেরও ভোট করে জয়ী হওয়ার মতো অবস্থা নেই মাঠে। তাদের ভোটে যাওয়ার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের আনুকূল্য পাওয়া।

ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে কেবল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের গত দুটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল। দলটির প্রধান  সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি গত দুটি নির্বাচনের মতো (২০১৪ ও ২০১৮) এবারো চট্টগ্রাম-২ আসনে তরীকতের প্রার্থী।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাছাইয়ে তরীকত ফেডারেশনের ৪১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নজিবুল বশরের আসনটি ছাড়া তরীকত থেকে আর কারও জয়ী হওয়ার মতো অবস্থা নেই। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বশরেরও জয় পাওয়া কঠিন। কারণ, তারই ভাইয়ের ছেলে অপর কিংস পার্টি সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান  সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদও এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তৈয়বও প্রার্থী হয়েছেন। তৈয়ব চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ সমঝোতার স্বার্থে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও তৈয়ব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে থেকে গেলে নজিবুলের জেতা কঠিন।

তরীকত ফেডারেশনের বাইরে সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল ইসলামী ঐক্যজোটের (মিনার)। ইসলামী ঐক্যজোট ৩৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। দলটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা সরকারি মহল থেকে দুটি আসনের ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন। সেগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) ও কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসন। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আমিনী ও কুমিল্লা-২ আসনে যুগ্ম মহাসচিব আলতাফ হোসাইন প্রার্থী হয়েছেন। দু’জনের সঙ্গে সরকারি মহলের বিশেষ যোগাযোগ বা সখ্য রয়েছে। তার ভিত্তিতে ইসলামী ঐক্যজোট নির্বাচনে গেছে। ওই সূত্রেই তারা আসন সমঝোতার আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

যদিও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান আলম; যিনি সেই আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারের মৃত্যুর পর গত ৫ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জয়ী হন। শপথ নিলেও তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি। তার আগেই একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপ্তি হয়ে যায়। এবার তাকে বাদ দেয়াটা কঠিন। অন্যদিকে কুমিল্লা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ। তিনি নিটোল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। তার পক্ষে একটি আঞ্চলিক শক্তির সহানুভূতি রয়েছে।

পাঠকের মতামত

এই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তথা ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর তৈরী ভোটার তালিকায় যখন ১ কোটি ২৪ লাখ ভুয়া ভোটার বাদ হয়ে তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ভোটে দেখা যাচ্ছে যে আওয়ামী লীগের ভোটের হার ৪৯%, যা বিএনপির ৩৩%+ জামাতের ৪.৫%+ জাতীয় পার্টির ৭% এর যোগফল (=৪৪.৫%) এর চেয়েও বেশি।। এই একটা ডাটাই সবকিছুর উপসংহার সহজে টেনে দিতে পারে ।।

রহিম
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

ফিতনা কাকে বলে কয় প্রকার ও কি কি আঃলিগ কে দেক হিসাব মিলে যাবে


১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:৫৯ পূর্বাহ্ন

এসব জগা খিচুড়ি মার্কা নির্বাচনের নামে বলিউডের ফিল্মের শুটিং চলছে তাহা দেশবাসী এবং বিশ্ববাসী জানে।

ইসমাইল
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:৩৩ পূর্বাহ্ন

এসব খবর পড়তে ও এখন অসহ্য লাগে।

A R Sarker
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৮:৩৪ অপরাহ্ন

এই নির্বাচন নির্বাচন খেলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতেও লজ্জা লাগে।

বোকা
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:৪১ অপরাহ্ন

ভাইসাব ! ভাইসাব !! বাজারে আসছে সম্পূর্ণ নতুন আলাপ !!! এতদিন শুনছি ভোটে জিততে কারচুপি করন লাগে, অহন শুনতাছি হারতেও বলে কারচুপি করন লাগবো — কি তামসা ??

Akram H Manik
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১:৩৭ অপরাহ্ন

আঞ্চলিক শক্তি বলতে ইন্ডিয়া

কয়েস আহমদ
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

তাহলে বোঝা গেল তেলেসমাতির নির্বাচন! কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায় বলা মুশকিল!

হারুন রশিদ মোল্লা
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১১:২২ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status