ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বাজারে নতুন করে দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের

স্টাফ রিপোর্টার
২০ নভেম্বর ২০২৩, সোমবার
mzamin

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বেঁধে দেয়া এসব পণ্যের দাম কার্যকর হয়নি। উল্টো এরমধ্যে কিছু পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। লাগামহীন দামে বেকায়দায় সাধারণ মানুষ। আলু, পিয়াজের পর এবার নতুন করে কারসাজি শুরু হয়েছে চিনি নিয়ে। বেড়েছে আটা-ময়দা ও মসুর ডালের দামও। দোকানিদের ভাষ্য, মূলত ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব আমদানিকৃত পণ্যের দাম দেশের বাজারে আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সাধারণ ক্রেতারা বলেছেন, হাতেগোনা কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শেষ। সঠিক তদারকি ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। 

সরজমিন রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ রায়ের বাজার, হাতিরপুল বাজার, পলাশী বাজার, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা চিনি কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। খোলা আটা কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটা কেজিপ্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

বিজ্ঞাপন
কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দেশি (ছোট) মসুরের ডাল ১৫০ টাকা এবং আমদানিকৃত (বড়) মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি করা হচ্ছে পিয়াজ, রসুন ও আলু। দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা এবং আমদানি করা পিয়াজ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি রসুন প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। তবে ডিম ডজনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে খুচরায় ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারও কিছুটা স্থিতিশীল। মোটা ও চিকন চাল কেজিতে তিন-চার টাকা বৃদ্ধি  পেয়েছে। এক কেজি ব্রি-২৮ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জনপ্রিয় চিকন চাল মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং নাজিরশাইল মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আব্দুল হাই নামে কাওরান বাজারের এক চিনি ব্যবসায়ী বলেন, মূলত ডলারের দাম আগের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন টাকা দিলেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই কারণেই চিনি, আটা, মসুরের ডালসহ আমদানিনির্ভর এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সাপ্লাইয়াররা যেই দামে পণ্য দিবে, আমরা তার সঙ্গে বিভিন্ন খরচ যোগ করে পণ্য বিক্রি করি। এখানে আমাদের কারসাজির কোনো বিষয় নেই। এই ব্যবসায়ী পণ্য দেখিয়ে বলেন, ৪৫ টাকার খোলা আটা এখন ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আর ১১০ টাকার দুই কেজি ওজনের প্যাকেটজাত আটা ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। চিনিও ১০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

রিয়াজ নামে আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি মণে (৩৭.২৩৭ কেজি) চিনির দাম বেড়েছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। শুক্রবার প্রতি মণ চিনি ৫ হাজার ৫০ টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৪ হাজার ৮০০ টাকার কাছাকাছি।

গত ১লা নভেম্বর চিনির বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে চিনি আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক অর্ধেক কমানো হয়। কিন্তু তার কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। বরং এরমধ্যে দুই দফা চিনির দাম বেড়েছে। বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু। আমদানির পর কিছুটা কমলেও এখনো সাধারণের নাগালের বাইরে রয়েছে পণ্যটি। রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন আলুর কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে বছরজুড়ে এই আলুর দাম থাকে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। 

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসের মাঝমাঝি সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়। প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (খোলা) মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১৭ টাকা, খুচরা মূল্য ১২০ টাকা এবং প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (প্যাকেট) মিলগেট ১১৯ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২১ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করে। কিন্তু তদারকির অভাবে এ দাম কার্যকর করতে পারেনি সরকার। পিয়াজ ও আলুর দামও নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণলয়, যা আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। 

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা। আর গত এক সপ্তাহে বেড়েছে কেজিতে প্রায় দুই টাকা। সঙ্গে মাঝারি ও সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা। বাজারে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, যা এক মাস আগে ৫০ থেকে ৫২ আর এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা। মাঝারি আকারের মধ্যে প্রতি কেজি বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। আগে এই চালের দাম ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। আর প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা পর্যন্ত।

ওদিকে দাম বেড়েছে আটা ও ময়দারও। বাজারে খোলা আটার কেজি ৫০ টাকা এবং প্যাকেট আটার কেজি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও খোলা আটা ৪২ থেকে ৪৫ এবং প্যাকেট আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ওদিকে গত সপ্তাহে খোলা ময়দার কেজি ৫৫ থেকে ৬০ এবং প্যাকেট ময়দার কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে এখন খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৬ এবং প্যাকেট ময়দার কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

সয়াবিন তেলের দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৮১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম দুই টাকা বেড়েছে। 

ভারত থেকে ডিমও আমদানির অনুমতির পর ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। খুচরা বাজারে এখন প্রতি ডজন ডিম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩০ টাকা দরে। যা পাড়া-মহল্লার দোকানে ১৪০ টাকা। 

এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ ও রসুন। বাজারে ১৩০ টাকা দরে দেশি পিয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পিয়াজের এই দাম দ্বিগুণেরও বেশি। আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। 

দেশি রসুনের কেজি ১৮০ টাকা, আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রসুনের দামও অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা, আর আমদানি করা আদার কেজি ২২০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে আদার দাম।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status