ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

অস্থিরতা কাটছে না ডলারের বাজারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৯ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার
mzamin

দুই সপ্তাহ ধরে আবারো অস্থিরতা বিরাজ করছে ডলারের বাজারে। প্রণোদনাসহ সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা দরে রেমিট্যান্স কেনার নির্দেশনা থাকলেও অনেক ব্যাংক ১২৪ টাকা দরেও ডলার কিনেছে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও আমদানিতে এসব ডলারের দর ১১১ টাকা হওয়ার কথা। এছাড়া খোলাবাজারেও ডলারের দাম ১২৭ থেকে ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠতে দেখা গেছে। 

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটকে কাজে লাগিয়ে লাভের আশায় একটি শ্রেণি নগদ ডলার কিনে ঘরে রাখছেন। এ প্রবণতা বেড়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন গুজবে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২৭ টাকায় উঠেছিল। অবশ্য পরে তা কমে ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যদিও ব্যাংকে ১১৪ টাকা এবং মানিচেঞ্জারগুলোর জন্য নগদ ডলার বিক্রির সর্বোচ্চ দর ১১৭ টাকা ধার্য করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামীতে ডলারের দাম কমবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নাই। ফলে ডলারের বাজারে কবে স্বস্তি ফিরবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ডলার ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সাধারণ ক্রেতারা ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পারছেন না। আবার মানি চেঞ্জারগুলোয়ও নির্ধারিত দামে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে খোলাবাজারই এখন ডলার জোগানের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন
এতে ডলারের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। এতে করে বাড়তি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে তাদের। 

একজন খাদ্য আমদানিকারক জানান, বর্তমানে ব্যাংকে এলসি খুলতে গেলে সরকারি রেট ১১১ টাকা কেউ রাখে না। তারা দাম বাড়িয়ে ১২৫ টাকা নেন। অথচ এক সপ্তাহ আগে ব্যাংক আমার কাছ থেকে ডলার প্রতি ১১৫ টাকা করে জমা রেখেছে। না দিলে এলসি খোলা যাবে না। এই হলো ডলারের বাজারের অবস্থা। 

চিকিৎসার জন্য ভারত যাবেন আয়নাল হোসেন। তিনি বলেন, প্রথমে একটি মানি এক্সচেঞ্জ থেকে বলা হলো ডলার নেই। কিন্তু পাশেই থাকা একজন বললেন, ডলার প্রতি ১২৭ টাকা করে দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত ১২৭ টাকা দরেই ডলার কিনতে হয়েছে। 
রাজধানীর মতিঝিল, গুলশান, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জে ডলারের রেট একইরকম। ১২৫ থেকে ১২৭ টাকা চাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কেউই নির্ধারিত দামে ডলার বিক্রি করছেন না।

মতিঝিলের একটি মানি এক্সচেঞ্জের মালিক বলেন, আসলে বাজারে ডলার নেই। ব্যাংকগুলোই বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। ফলে বেশি দামে কিনে আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা।
গত সপ্তাহের শুরুতে খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ছিল ১২১ থেকে ১২২ টাকা। শেষ দুইদিনে তা বেড়ে ১২৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৭ টাকায় ওঠে। তবে পরে ডলারের দাম ১২৫ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে।
ব্যাংকগুলোয় বর্তমানে প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য ১১৪ টাকা আর ক্রয়মূল্য ১১৩ টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলার দিচ্ছেও না, কিনতেও পারছে না। কারণ খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়ায় প্রবাসী ও বিদেশফেরত ব্যক্তিরা সেদিকেই ঝুঁকছেন।

পল্টনের মেক্সিমকো মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদেশ থেকে আসার সময় যারা ডলার নিয়ে আসেন, তাদের কাছ থেকেই আমরা ডলার কিনি। এটাই তাদের মূল উৎস। কিন্তু কালোবাজারে ডলারের দাম বেশি। তাই প্রবাসীরা সেখানেই ডলার বিক্রি করে দিচ্ছেন। সরকারি রেট তো কম। প্রবাসীরা কেন আমাদের কাছে ডলার বেচবে? এ ছাড়া এখন সরকারি নজরদারি অনেক কড়া। ফলে যারা শিক্ষা, চিকিৎসা বা ভ্রমণের জন্য বিদেশ যাবেন তারা চাহিদামতো ডলার পাচ্ছেন না। কারণ মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে ডলারের ঘাটতি আছে।
এবিবি’র সাবেক সভাপতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে ডলারের রেট গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং এলসি খুলে ব্যবসা করার ওপর ব্যবসায়ীরা জোর দিচ্ছেন। সেজন্য ব্যবসায়ীদের চাহিদা মেটাতেই ব্যাংকগুলোকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর কাছেও পর্যাপ্ত ডলার নেই।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সংকটের মধ্যেও ডলারকে বাজারমুখী না করে একে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক একেক সময় একেক পলিসি নিচ্ছে। ফলে যারা কারসাজি করে, তারাও এটার সুযোগ নিচ্ছে। বাজারদর অনুযায়ী দাম নির্ধারণ না হলে এটার সংকট মিটবে না। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ডলারের বাজারে কারসাজি রোধ করতে ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ তারা নিয়েছেন, যার প্রভাবে হয়তো শিগগিরই বাজারে দাম কমে আসবে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান দুই উৎস রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় নিম্নমুখী। বাংলাদেশ ব্যাংক কতটা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে- সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। 

এদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ই অক্টোবর দেশের রিজার্ভ ছিল ২০.৯৫ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম৬) অনুযায়ী, ১৫ই নভেম্বর তা নেমে আসে ১৯.৬০ বিলিয়ন ডলারে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে দেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে বলে জানা গেছে। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে রেমিট্যান্স কিছুটা বেড়েছে। প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে এসেছিল ৯২ কোটি ডলার। তবে ডলার সংকট থাকায় ধারাবাহিকভাবে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status