ঢাকা, ১২ মে ২০২৫, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

মৃগী রোগের আধুনিক চিকিৎসা

ডা. এমএ হক, পিএইচডি
৩০ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার

মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্সের স্নায়ুকোষসমূহের অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ক্রিয়ার ফলে খিঁচুনি হয়। বার বার স্নায়ুবিক কারণে খিঁচুনি অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়াকে বলা হয় মৃগী রোগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয়- ‘নিউরোলোজিক্যাল ডিজিজ’। মানব মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীতে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে এই রোগ দেখা দেয়। মস্তিষ্কের কোষগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল রাখে। কোনো কারণে মানবদেহের কার্যপরিচালনাকারী মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপক ও নিবৃত্তিকারক অংশদ্বয়ের কার্যপ্রণালীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করে। ফলে, খিঁচুনি হয়। সুস্থ-স্বাভাবিক একজন ব্যক্তি যদি হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে কাঁপুনি বা খিঁচুনির শিকার হন, চোখ-মুখ উল্টে ফেলে কিংবা কোনো শিশুর চোখের পাতা স্থির হয়ে যায়, একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অথবা মানসিকভাবে সুস্থ কোনো ব্যক্তি যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে, তখন তাকে মৃগী রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

মৃগী রোগের কারণ: মৃগী রোগ হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মৃগী রোগ জেনেটিক প্রবণতা দ্বারা সৃষ্ট হয়। এ ছাড়া নিম্ন্নোক্ত কারণগুলো থেকে মৃগী রোগ হতে পারে:
- জন্মের আগে বা জন্মের সময় বা পরে মস্তিষ্কে আঘাত।
- মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব।
- সংক্রমণের কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে।
- মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে।
- মস্তিষ্কে পুষ্টির অভাব।
- মস্তিষ্কে প্রদাহ।
- মস্তিষ্কের টিউমার।
- অধিক মাত্রার জ্বর।

মৃগী রোগের লক্ষণ: মৃগী রোগীর মধ্যে নিম্নলিখিত যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
- হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে খিঁঁচুনি শুরু হওয়া ও পর্যায়ক্রমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া।
- হঠাৎ জ্ঞান হারানো।
- হঠাৎ নমনীয়ভাবে ঢলে পড়া।
- শরীর শক্ত হয়ে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যাওয়া।
- ঘন ঘন কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়া।
- হঠাৎ মাথা বা পিঠ কিংবা পুরো শরীর সামনে ঝুঁকে আসা।
- হাত থেকে আকস্মিক কিছু ছিটকে পড়া।
- হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করা এবং হাত-পা ও মুখের অস্বাভাবিক নড়াচড়া শুরু হওয়া।
- শরীরের কোনো অংশে ভিন্ন ধরনের হঠাৎ অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া।
- ছোট বাচ্চাদের শরীর হঠাৎ ঝাঁকি খাওয়া।

রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষাসমূহ
- রোগী এবং প্রত্যক্ষকারীর নিকট হতে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা।
- ইইজি।
- রক্ত পরীক্ষা।
- মস্তিষ্কের এমআরএই এবং সিটি স্ক্যান।
- সিএসএফ পরীক্ষা।

চিকিৎসা: খিঁচুনির অথবা মৃগী রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। একশ্রেণির অভিভাবকগণ মনে করেন যেহেতু এদের চিকিৎসায় মডার্ন মেডিসিন কার্যকর হচ্ছে না; বছরের পর বছর ওষুধ সেবন করেও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না সেহেতু এদের কোনো চিকিৎসা নেই। তিনি একটু সচেতন হলেই দেখতে পাবেন তার প্রতিবেশী বর্তমানে বিকল্প চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করছেন।

অতএব, খিঁচুনি অথবা মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের অভিভাবকগণ হতাশ না হয়ে উপকৃত হওয়া অভিভাবকের নিকট থেকে চিকিৎসার তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করলে আপনিও এই সমস্যা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

লেখক: পিএইচডি (স্বাস্থ্য), এমফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)। চ

েম্বার: নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, (ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের একটি প্রতিষ্ঠান), বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রিন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭০৭-০৭৩১৪১

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status