ঢাকা, ১৬ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

‘আমি পিছিয়ে যাবো না সবচেয়ে দুর্বলদের পক্ষে ওকালতি চালিয়ে যাবো’

১২ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  (ডব্লিউএইচও) ছয়টি অঞ্চলের মধ্যে তিনটিতে নতুন আঞ্চলিক পরিচালক (আরডি) নির্বাচন করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল (SEARO)  মাত্র ১১টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত, তবুও বিশ্বের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও বেশি বাস এই অঞ্চলে। দুটি SEARO সদস্য রাষ্ট্র নেপাল এবং বাংলাদেশ, তাদের প্রার্থীদের আঞ্চলিক পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনীত করেছে। আমি বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী হতে পেরে সৌভাগ্যবোধ করছি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের জন্য  ‘আঞ্চলিক পরিচালক’ নির্বাচন অভূতপূর্ব মনোযোগ এবং সংবাদ কভারেজে  জায়গা করে নিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনাগুলো আমার প্রার্থিতা সম্পর্কে এবং এই পদে আমার যোগ্যতা নিয়ে  সন্দেহ প্রকাশ করে। তারা তাদের নিবন্ধে যে যুক্তিগুলো দিয়েছে তা পক্ষপাতদুষ্ট এবং স্টেরিওটাইপ।

প্রথমেই যে বিতর্ক সামনে আসে তা হলো- আমার মা যেহেতু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাই আমার মনোনয়ন স্বজনপ্রীতিতে ইন্ধন যোগায়। যদিও আমি মনে  করি যে, আমার মায়ের অবস্থানের কারণে আমার সম্পর্কে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই  করা অনিবার্য, কিন্তু যা দুর্ভাগ্যজনক তা হলো আমার এত বছরের কাজ, অধ্যয়ন এবং কৃতিত্বগুলো মুছে ফেলা হয়েছে। পাবলিক ডোমেনে থাকা সত্ত্বেও, নিবন্ধগুলোতে চ্যাথাম হাউসের গ্লোবাল হেলথ প্রোগ্রাম বা তাদের কমিশন ফর ইউনিভার্সাল হেলথের সঙ্গে আমার কাজের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি আমি যে মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ে WHO-এর ডিজির উপদেষ্টা ছিলাম বা আমি প্রায় এক দশক ধরে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত WHO-এর বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য ছিলাম সেই বিষয়টিও এড়িয়ে গেছে তারা।

বিজ্ঞাপন
শুধু তাই নয়, আমি বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য পরিকল্পনার প্রধান উপদেষ্টা  অথবা  বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮-এর একজন প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ ছিলাম- তারও কোনো উল্লেখ নেই। তারা আমার  শিক্ষাদানের কার্যক্রমকে এড়িয়ে গেছে, এবং তাদের পাঠকদের জানায়নি যে WHO আমাকে ২০১৪ সালে জনস্বাস্থ্যে  শ্রেষ্ঠত্বের  সম্মানে পুরস্কৃত করেছে।

নিবন্ধগুলোতে উল্লেখ নেই যে, আমি বর্তমানে সাংগঠনিক নেতৃত্বে আমার ডক্টরেট ইন এডুকেশন (EdD) শেষ করছি। এটি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের কর্মক্ষমতা উন্নত করার লক্ষ্যে  জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য একটি অনুশীলনকারী-ডক্টরেট ডিগ্রি। সারা বিশ্বের অগণিত নারীর মতো দুঃখজনকভাবে  আমাদেরও পেশাগত ক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে তুলনা করার সময় বিভিন্ন মানদণ্ডে ফেলা হয়। আমার অভিজ্ঞতাকে  ইচ্ছাকৃতভাবে মুছে ফেলা এবং আমাকে কেবল  ‘মায়ের মেয়ে’ হিসেবে ফোকাস করা লিঙ্গ বৈষম্যকে প্রাধান্য দেয়।

নিবন্ধগুলো আমার অধ্যয়ন এবং কাজের নির্বাচিত ক্ষেত্র- ‘মনোবিজ্ঞান’- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদের জন্য  জন্য উপযুক্ত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। আমি যখন আমার কর্মজীবন শুরু করি, তখন আমি জানতাম যে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক কাজ করা দরকার। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যে ভুল ধারণা মানুষের মনের মধ্যে রয়েছে তা দূর করার  চেষ্টা করতে শুরু করি আমি। দুর্ভাগ্যবশত দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে  মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকেই খোলামেলা  আলোচনা করতে চান না। বহু বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর  আমরা এই ধারণা  কিছুটা পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি- কিন্তু আমি স্বীকার করি যে এখনো অনেক কাজ করা বাকি আছে। সমালোচকরা  যখন এই নির্বাচনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের চেয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য দিকগুলোকে প্রাধান্য দেন তখন বিষয়টি উপেক্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

WHO নিজেই মানসিক স্বাস্থ্যকে মূল্যবান সম্পদ বলে মনে করে।  এটিকে  সুরক্ষিত করার জন্য অংশীদারদের সঙ্গে সমানে তারা কাজ করে চলেছে। কারণ বিশ্বব্যাপী প্রতি আটজনের মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে, মনোবৈজ্ঞানিক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কাজকে খাটো করে দেখা  অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। আমার বৃহত্তর পেশার পক্ষে আমি উচ্চস্বরে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই- মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কোনোভাবেই জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকার জন্য নিকৃষ্ট বা অনুপযুক্ত নয়। বরং আমি দাবি করি যে, এই জাতীয় বিশেষজ্ঞের একজনকে    WHO-তে বিদ্যমান টেকনোক্র্যাট এবং আমলাদের পাশাপাশি নেতৃত্বের টেবিলে  থাকা বাঞ্ছনীয়।

অবশেষে, SEARO-RD নির্বাচনের কিছু প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ তার প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার জন্য জোরপূর্বক রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে। সত্যি বলতে কি, SEARO সদস্য দেশগুলোতে এই ভাষ্যকারদের বিশ্বাসের অভাব ভয়ঙ্কর। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের এজেন্সি এবং স্বাধীনতা রয়েছে প্রার্থীদের মূল্যায়ন এবং নিজের   পছন্দ  ব্যক্ত করার। কোনো ভয় ভীতি তা পরিবর্তন করতে পারে না। রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে একজন দায়িত্বশীল লেখকের উচিত ব্যক্তিবিশেষের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এই নির্বাচনে বাংলাদেশ এবং নেপালের প্রার্থীদের মধ্যে নীতিগতভাবে সঠিক মানুষকে নির্বাচন করা। এর ফলে দুটি দেশের মধ্যে কোনোটির জনস্বাস্থ্যের ফলাফল ভালো রয়েছে সে সম্পর্কে আরও যুক্তিসঙ্গত বিবেচনা করা সম্ভব হবে। আমি আমার দেশের  জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সাফল্য দেখে  গর্বিত এবং WHO SEARO-এর আঞ্চলিক পরিচালকের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনীত হতে পেরে আমি গর্বিত।

এই প্রচারণায় আমরা যে প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি তা দুটি দুর্ভাগ্যজনক সত্যকে পুনর্ব্যক্ত করে। প্রথমটি হলো বৃহৎ প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক এবং সংস্থাগুলোর  স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা সর্বদা পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ। দ্বিতীয়টি হলো যে নারীরা যখন বড়  প্রতিষ্ঠানগুলোতে  ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তখন তারা  ভয়ানকভাবে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার  হন। এই প্রচারে আমরা উভয়ের একটি বিষাক্ত ককটেল দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি পিছিয়ে যাবো না। আমি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বলদের পক্ষে ওকালতি চালিয়ে যাবো, আমি আমার আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের আমাদের  ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে থাকবো, এবং আমি যা সঠিক মনে করি তার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো। ভীত-সন্ত্রস্ত মন্তব্যকারীদের কাছে আমার বার্তাটি সহজ: একজন নারী  বা তার অভিজ্ঞতাকে ভয় পাবেন না, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভয় পাবেন না এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর  নিজেদের সিদ্ধান্তকে বিশ্বাস করতে শিখুন।’

সূত্র: ipsnews.net
সায়মা ওয়াজেদ অটিজম এবং এনডিডি, বাংলাদেশের জন্য জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন, সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিষয়ভিত্তিক রাষ্ট্রদূত হওয়াসহ একাধিক পদমর্যাদার অধিকারী।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status