প্রথম পাতা
সাক্ষাৎকার
ইলেকশন নরমাল হবে মনে করার কোনো কারণ নেই
মুনির হোসেন
৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার
সরকার আর নির্বাচন কমিশন যতই চেষ্টা করুক না কেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে মত দেবে। তখন তারা নির্বাচন বন্ধ করে জরুরি অবস্থা জারির কথা বলবে। এ রাষ্ট্রবিশ্লেষক আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কখনো সংবিধানের বাইরে যাবে না। কিন্তু সংবিধানের মধ্য থেকে কী করা যায়- তার নিয়ন্ত্রণ ইতিমধ্যে অনেকটা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই নির্বাচন থেকে জরুরি অবস্থার দিকেই এগুচ্ছে দেশ। তিনি বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায় আর জরুরি অবস্থা জারি হয়, তাহলে দেশ কার্যত গণতন্ত্র পরিপন্থি হয়ে যাবে। তখন জরুরি অবস্থা থেকে বিশৃঙ্খলার দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সংবিধান নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন হবে না। অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, আমরা একটা জাতীয় বিপর্যয়ের মধ্যে আছি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চায় তাতে দেশ একটা গণ্ডগোলের মধ্যে পড়ে যাবে। সে রকম গণ্ডগোলের মধ্যে পড়ে গেলে সংবিধানের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী নির্বাচন হবে না। এ সম্ভাবনা বাতিল করে দেয়ার কোনো কারণ নেই। এ শিক্ষাবিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। অবশ্যই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু শক্তি তো লাগবে। শক্তি হচ্ছে জনগণ। সেই জনগণকে এভাবে বিভক্ত করে রেখে শেখ হাসিনার নীতি সাফল্যের দিকে যাবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমানে যেভাবে বিএনপিকে মামলা-মোকদ্দমা ও দমন-পীড়ন করে নিয়ন্ত্রণ করছে এ রকম নিয়ন্ত্রণ সব সময় করা যাবে না। শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় গেলে তখন এমন কিছু আর করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হয়ে গেলে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল সংঘবদ্ধভাবে সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করবে। আবার পুনরায় ক্ষমতায় আসলে শেখ হাসিনা বর্তমানে যে মর্যাদার আসনে আছেন সেই মর্যাদার আসনে আর থাকতে পারবেন না। তাকে অমর্যাদাকর অবস্থায় নিয়ে যাবে বিএনপি ও অন্যান্য দল। তখন রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুরাও শেখ হাসিনাকে অন্ধভাবে সমর্থন দেবে না। সংলাপের প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে ‘ঔদ্ধত্য’ আচরণ করছেন তাতে সংলাপের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তবে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিয়ে সংলাপ করালে সেটি ভিন্ন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এমন চাইবে বলে মনে হয় না। তারা জরুরি অবস্থার দিকে যাবে এবং সেটি সংবিধান অনুযায়ী। তার মতে বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে কথা বলেন তা গণতন্ত্রবিরোধী। দলটির অন্যদের রেসপেক্ট করা উচিত। কেবল নিজেদের সবকিছু মনে করা এবং অন্যদের অসম্মান করা গণতন্ত্রবিরুদ্ধ কাজ। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপের প্রশ্নে অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের হাত ধরেই অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাস, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় প্রতিনিধিদের চিঠি দিয়ে বলেছেন- সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় এই সরকার অবৈধ। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ- এই সরকারকে বৈধ সরকার হিসেবে গণ্য করবেন না। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে অনুরোধ করছি যেন এই সরকারকে দমন করা হয় এবং কোনো রকমের আর্থিক সহায়তা না দেয়া হয়। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহায়তাও দেবেন না। পত্রিকায় শেখ হাসিনার এই চিঠির কথা প্রকাশের পর অনেকে এটার বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি আমি নিজেও লিখেছি যে, অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের কাছে যাওয়া দরকার। জনগণকে সংগঠিত ও উন্নত চিন্তা-চেতনা দেয়া যেন তাদের তারা সমর্থন দেয়। সেটা না করে বিদেশি শক্তিগুলোকে চিঠি দেয়া রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। আমরা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে অনুরোধ করবো তারা যেন রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এ রকম কাজ আর না করে।
তিনি বলেন, যতদিন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল ততদিন তারা এই কাজ করেছে। তারা ক্রমাগত দূতাবাসগুলোকে বলেছে- বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন। এভাবে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি কাজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শুরু করেছে। তখন আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে তা ভুল ছিল। যেটি জাতি রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। তার ধারাবাহিকতায় দেশ এখনো পর্যন্ত গণতন্ত্রের ওপর দাঁড়ায়নি। আজকে এটার জন্য এককভাবে বিএনপিকে দায়ী করা যাবে না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি তিনটা দলকেই দায়ী করা যায়।
এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, যে দলটির নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন, সেই দলের কাছ থেকে আমাদের আশাও বেশি ছিল, হতাশও বেশি হতে হয়েছে। এ কথা এজন্য বলছি যে এখনো সতর্ক হওয়া দরকার। আজকে যে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন কথা বলছে, লোক পাঠাচ্ছে এটা হচ্ছে বাংলাদেশ যে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠেনি তার প্রমাণ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আজ শেখ হাসিনা যেভাবে কথা বলছেন আমি মনে করি এটা ভালো। কিন্তু এর জন্য জাতীয় ঐক্য দরকার। সেটিকে ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষ শক্তি বলে দেশকে যেভাবে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে সেক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা কঠিন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে বলে তারাই ক্ষমতায় থাকবে, জনগণ তাদের নির্দেশে চলবে। বাকিরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী- এই বিভাজনটা সম্পূর্ণ অনুচিত। কোনো সুস্থ, স্বাভাবিক মনের নাগরিকের এ রকম প্রতিহিংসা জাগিয়ে রাখা ঠিক না। প্রতিহিংসা তৈরি হতে পারে, কিন্তু ছয় মাস, এক বছর, দুই-তিন বছর পর তো মানুষ সেটা ভুলে গিয়ে কাজ কর্ম করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো অন্য কাজ করছে। এ রাষ্ট্রকে আমাদের সকলের রাষ্ট্র হিসেবে কীভাবে গড়ে তোলা যায়, এ জাতিকে কীভাবে আমরা উন্নত জাতিতে পরিণত করতে পারি সেভাবে কাজ করা উচিত। এগুলো আওয়ামী লীগও হারিয়ে ফেলেছে, বিএনপিও হারিয়ে ফেলেছে।
পাঠকের মতামত
আমেরিকা আর ভারতের যৌথ প্রযোজনায় মঈন ফকরুর কাঁধে ভর করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।সেই আমেরিকা আবার তাদের নিজেদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না।
অল্প কথায় সুন্দর বিশ্লেষণ। এই লিখাটাই ব্যপক প্রচার হওয়ার দরকার।
দলকানা ব্যক্তি দলের জন্যে যেমন দলের জন্যে ক্ষতিকর তেমনি জাতির জন্যেও। সময় উপযোগী বক্তব্য, ধন্যবাদ।
অসাধারণ! এসময়ে এমন সত্য তুলে ধরা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সত্য তুলে ধরার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
Perfect Said sir
জাতির দুরদিনে এ রকম সত্য কথা বলতে পারে এরকম জাতীয় বীরদের জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। স্যার কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রবিশ্লেষক!!!
এই রকম সৎ সাহসী লোকের অভাব বলে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। স্যারের দীর্ঘজীবন কামনা করছি।
Thank you sir, excellent observation and explanation. We need you with us.
গোটা দেশটাকে গত ১৪/১৫ বছরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। জাতিকে এমন বিভক্ত করা হয়েছে যার শেকড় অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। এখান থেকে কবে নাগাদ জাতি উঠে আসতে পারবে জানি না। আমার কেন জানি মনে হয়ে দেশ ৫০ বছর পিছিয়ে গেছে। এটা কি করে হতে পারে যে একটা দল এটা বুঝাবে যে তারাই স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আর অন্য সবাই স্বাধীনতা বিরোধী? মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আর অন্যরা বিপক্ষ? যারা তাদের মতের সাথে মিলে চলবে তারা মুক্তিযোদ্ধার দল আর ভিন্ন মত পোষণ করলে বা কোন অন্যায়ের বিরোধিতা করলেই সে রাজাকার। কি আশ্চর্য এক বিভক্তি! কি আশ্চর্য বিভেদ জাতির মধ্যে তৈরী করা হয়েছে।
Right Sir.
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জনাব মুনির হোসেন আপনার বেশীরভাগ মন্তব্যের সাথে একমত পোষন করছি । আমার কাছে কেমন যেন মনে হয় আমাদের দেশের রাজনিতীবিদরে চিন্তা ভাবনা, ধ্যান ধারনা, কথাবার্তা, কাজকর্ম সবকিছুই বিকৃতি হয়ে গিয়েছে । সরকার কোন একক ব্যক্তি দিয়ে তো হয় না এর সাথে অনেক উচ্চ শিক্ষিত গেয়ানি গুনিজন জড়িত থাকে মনে হয় এদের শিক্ষায় কোন সমস্যা আছে । এক জনে ভুল করলে অন্য জনে শুধরায়ে দিবে এ দেখি সবাই একই সুরে একই পথের পথিক হয়ে যায় । পরবর্তী প্রজম্ম এদের কাছ থেকে কে শিখবে বুঝে আসতেছে না । দোয়া করি মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিক । মানবজমিন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ রইল আমার এই লেখায় দোষনীয় কিছু থাকলে শো করার দরকার নেই ।
১৯৭২ সাল থেকেই আমরা যে কত ভুলের মধ্যে দিয়ে চলে এসেছি এবং এখনও চলছি, স্যার তার সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন থেকে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। আমিন।
বেশী বলেন নি।জনগনের মনের বর্তমান সঠিক ধারনা দিয়েছেন
Very impressive & important analytical view, Thanks
ঠিক বলছেন স্যার। আওয়ামী লীগ নিজে করলে ঠিক আর বিরোধীরা করলে ষড়যন্ত্র বা অন্যায়!
দেশের বর্তমান ও আগামীতে আমাদের ভাগ্যের ভবিষ্যৎ বার্তা টি স্যারের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে।এর চেয়ে স্পষ্ট বার্তা আর কিছুই হতে পারে না।মানবজমিন করে ধন্যবাদ।
Excellent observation, I fully agree with him
অল্প কথায় সুন্দর বিশ্লেষণ। এই লিখাটাই ব্যপক প্রচার হওয়ার দরকার।
দীর্ঘ দিন পর মিডিয়াতে সন্মাননীয় অধ্যাপককে পেয়ে ও তাঁর সময়োপযোগি নির্মোহ পর্যবেক্ষনে মনে কিছুটা স্বস্তির ভাব অনুভূত হলো। বিদগ্ধ জ্ঞানী সমাজ জাতির এ হেন ক্রান্তি লগ্নে তাঁদের পর্যবেক্ষন ও পরামর্শ দ্বারা বিবাদমান পক্ষগুলোকে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে প্রভাবিত করে দেশের সেবা করবেন এটাই কাম্য। ক্ষমতার দাপট ও সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলিয় কাজে ব্যবহার করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা সব সময় দেশ ও দলের জন্য কল্যানের হয় না। সন্মাননীয় অধ্যাপকের এমন পর্যবেক্ষন বিবেচনায় নিলে উদ্ভূত সমস্যা সমধানে বিবাদমান পক্ষগুলি ও দেশের নাগরিকগন নিশ্চিত ভাবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষ পাবে।
মন্তব্য করুন
প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন
প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]