ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

টানা বৃষ্টিতে ঢাবি’র হলে হলে জলাবদ্ধতা ভোগান্তি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার

গত বৃহস্পতিবারের টানা বৃষ্টিপাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ১৮টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের। সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে প্রায় প্রতিটি হলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে পানি। কোনো কোনো হল বিদ্যুৎহীন ছিল কয়েক ঘণ্টা। গতকাল বিকালেও বেশ কয়েকটি হলে পানি দেখা গেছে। সরজমিন দেখা গেছে, সড়ক, আবাসিক হল, বিভিন্ন প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের সামনে, ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত মোড়সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব এলাকা ছিল হাঁটু থেকে কোমর পানির নিচে। যার ফলে সড়কে কমে আসে রিকশা। বাইক, সাইকেল নিয়েও বের হতে সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। হলগুলোতে খাবার দোকানগুলোও এদিন বন্ধ হয়ে যায় সময়ের অনেক আগেই। সব মিলিয়ে ভোগান্তির একটি রাতই পার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এদিন ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পরেও হল থেকে বের হতে ব্যর্থ হন হাজী মুহম্মদ মহসীন হলের শিক্ষার্থী মাহফুজ। 

রাত ৯টার দিকে অনেকটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরে দুইটা টিউশনি ছিল। বৃষ্টি থামার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও লাভ হয়নি। উল্টো টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে আজিমপুরের জন্য মিনিটের মধ্যেই রিকশা পাওয়া যায়। তবে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, এখনো রিকশা পাইনি। দু’একটা রিকশা যেতে চাইলেও ভাড়া দাবি করছে স্বাভাবিকের থেকে দ্বিগুণ তিনগুণ বেশি। তাই বাধ্য হয়ে টিউশনি বাদ দিয়ে হলে চলে যাচ্ছি। প্রায় একই অভিযোগ সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী নূরের। তিনি বলেন, মেডিকেলে এলাকার এক ডেঙ্গু রোগীকে দেখার জন্য রাতে বের হই। স্বাভাবিক সময়ে হল থেকে ৩০ টাকা ভাড়া। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) চাইলো ৬০-৭০ টাকা। উপায় নেই অনেকটা বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই যেতে হয়েছে। হলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও শাহনেওয়াজ হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য হলে মাঠ ও হলের সামনের প্রাঙ্গণে পানি উঠলেও এ দু’টি হলের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। টানা বৃষ্টিতে রাত ১১টার দিকে এই দুই হলের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ে। গণরুমগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় নবীন শিক্ষার্থীরা আসবাবপত্র, তোশক, বালিশ নিয়ে উপর তলায় বন্ধু কিংবা পরিচিতদের রুমে সিট ভাগাভাগি করে থাকেন। বিশেষ করে নিচ তলার ওয়াশরুমগুলোতে পানি ঢুকে পড়লে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। দেখা দেয় খাবার পানির সংকটও। অনেকে খাওয়া-দাওয়া কিংবা অন্যান্য কাজের জন্য রুম থেকেও বের হতে পারেননি। এরমধ্যে কুয়েত মৈত্রী হলে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হওয়ায় রাত সাড়ে ১১টা থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিলেন ছাত্রীরা। দুর্ভোগের একরাত পার করা শিক্ষার্থীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। 

মাওয়াতুল জান্নাত রুপা নামে কুয়েত মৈত্রী হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী গতকাল সকালে ফেসবুকে লিখেন, রাত (বৃহস্পতিবার) সাড়ে ১১টা থেকে হলে বিদ্যুৎ নেই। কবে আসবে তাও জানি না। তাই স্বাভাবিকভাবে লিফটও বন্ধ। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। রাত থেকে পানি একটুও কমেনি। হল থেকে বের হওয়ার কোনো অবস্থায় নেই। হলের শোচনীয় অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী লিমা আক্তার বলেন, এমন জরুরি অবস্থা মাথায় রেখে কোনো পূর্বপ্রস্তুতি কেনো নেয়নি প্রশাসন? এই রাতে মেয়েগুলো তাদের জিনিসপত্রসহ কোথায় যাবে? সন্ধ্যা থেকে যখন পানি বাড়তে শুরু করে তখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাত ১১টার দিকে পানি রুমে প্রবেশ করে। এখন আমরা ওপরের তলায় অবস্থান করছি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পরে গতকাল বিকাল ৪টায় বিকল্প ব্যবস্থায় হলটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়। ওয়াশা থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে খাবার পানিও। সার্বিক বিষয়ে হলের প্রভোস্ট প্রফেসর নাজমুন নাহার মানবজমিনকে বলেন, সকাল থেকে হলে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের খোঁজ-খবর রাখছি। তাদের খাবার পানি ও বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা আমরা করেছি। তবে এটি সত্য যে, পানি কমছে খুবই ধীরগতিতে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। অনেকটা একই অবস্থা ছিল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও শাহনেওয়াজ হোস্টেলের শিক্ষার্থীরাও। গতকাল সকালেও হলের সামনের প্রাঙ্গন ও সড়ক ছিল পানির নিচে। উন্নত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার না থাকা ও পানি চলাচলের ড্রেনগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মাকসুদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বেশকিছু হলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে কুয়েত মৈত্রী, বঙ্গমাতা হলে হল প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে শিক্ষার্থীদের পানি, খাবার ও বিকল্পভাবে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেয়া হচ্ছে। পানি যাতে দ্রুত নামানো যায় এজন্য আমরা সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা নিচ্ছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্যাম্পাসের ভেতর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনোযোগ দেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জলবদ্ধতার বিষয়টি ঢাকা শহরেরই একটি বড় সমস্যা। ক্যাম্পাসের কিছু কিছু জায়গায় রয়েছে যেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা আরও উন্নত হতে পারে। বিষয়টা নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একত্রিতভাবে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status