বিশ্বজমিন
নতুন ‘দাবার চাল’ দেবেন প্রেসিডেন্ট
বিশৃঙ্খল হয়ে উঠবে পাকিস্তানের রাজনীতি!
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
(১ বছর আগে) ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:১৩ অপরাহ্ন
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তান কী আবার বিশৃঙ্খল হয়ে উঠবে! আলামত তা-ই বলছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)। তারা শুমারি সম্পন্ন করে পার্লামেন্টের আসন পুনর্বিন্যাস করে জাতীয় নির্বাচন দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তাতে সাংবিধানিক সংকট দেখা দেবে। কারণ, তা করতে হলে নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। নির্বাচন চার মাস বা তারও বেশি সময় পরে হবে। এক্ষেত্রে পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে (পিপিপি) পিতা-পুত্রের ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পিপিপির সহসভাপতি আসিফ আলি জারদারি। সঙ্গে সঙ্গে তার ছেলে ও সদ্যবিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি পিতার এ বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলেছেন, ওই বক্তব্য তার পিতার একান্তই ব্যক্তিগত, দলীয় নয়। নির্বাচন হতে হবে ৯০ দিনের মধ্যেই। তবে কি ক্ষমতায় থাকা সাবেক জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) এই নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবে নাকি ভেঙে যাবে! এ আলোচনা এখন পাকিস্তানের হাটে, মাঠে, ঘাঁটে।
এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সময়ে নিয়োগ দেয়া তার অনুগত প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি রাজনীতিতে নতুন দাবার চাল দেবেন বলে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তিনি নিজে থেকে খুব শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন বলে সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। তিনি যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন তাহলে বর্তমান ক্ষমতাসীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রেসিডেন্ট এই ত্রিমুখী লড়াই কোথায় গিয়ে, কিভাবে শেষ হয় তা বলা কঠিন।
এমনিতেই নির্বাচনকালীন সময় চলছে এখন। এ সময়ে দেশের রাজনীতি বহুধাবিভক্ত। বিভিন্ন সূত্র ওই বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইনমন্ত্রীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আলভির আলোচনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইনমন্ত্রী মনে করেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার এক্তিয়ার হলো নির্বাচন কমিশনের। প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের সূত্রগুলো বলছেন, প্রেসিডেন্ট যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন তাহলে তা হবে ভুল পদক্ষেপ। এমনিতেই দেশ নির্বাচনমুখী।
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) প্রেসিডেন্টের কাছে অনুরোধ করে একটি চিঠি লিখেছে। দলের জেনারেল সেক্রেটারি ওমর আইয়ুব খান ওই চিঠিতে প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেয়ার অনুরোধ করেছেন। গত ৯ই আগস্ট জাতীয় পরিষদ, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়। তাতে অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এর ফলে দেশের বিষয়আশয় এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব বর্তায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর। কিন্তু আইয়ুব খান ওই চিঠিতে লিখেছেন- ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের ১৯৭৩ সালের সংবিধানের ৪৮(৫) অনুচ্ছেদের অধীনে প্রেসিডেন্ট যখন জাতীয় পরিষদ বিলুপ্ত করেন, তখন অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। এতে আরও বলা হয়, এ ধারাটি সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায়ের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন মোহাম্মদ সিসতাইন খান, অন্যরা-নির্বাচন কমিশন, পাঞ্জাব ও খাইবার পখতুনখাওয়ার প্রাদেশিক নির্বাচনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সুয়োমোটো মামলা। এসব পরিষদ অপরিপক্বভাবে ভেঙে দেয়া হয়েছিল। ওই চিঠিতে এমনি করে বিভিন্ন যুক্তি, আইনি ধারা উল্লেখ করে সংবিধান ও আইনের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট আলভিকে নির্বাচনের একটি তারিখ ঘোষণায় তার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে দেশবাসী তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন।
পিএমএলএন নেতৃত্বাধীন পিডিএম গত ৯ই আগস্ট ভেঙে দেয় জাতীয় পরিষদ। একই সঙ্গে সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রাদেশিক পরিষদও সময়ের আগে বিলুপ্ত করা হয়। ফলে ৯০ দিনের মধ্যে এসব নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে সংবিধানে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন হতে হলে আগামী ৯ই নভেম্বর সেখানে নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু দেশে নতুন করে শুমারি শুরু হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বলছে, ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব না। নির্বাচন হতে পারে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে। যদি তা-ই হয় তবে পাকিস্তানে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে। তবে বিদায়ী সরকার সে দিকটাকে ঠিক করে গেছে। তারা পরিষদ বিলুপ্ত করার আগে কাউন্সিল অব কমন ইন্টারেস্টের (সিসিআই) মিটিং করেছে। সেখানে সর্বসম্মতভাবে ৭ম পপুলেশন অ্যান্ড হাউজিং সেনসাস ২০২৩ গৃহীত হয়েছে। সংবিধানের ৫১(৫) ধারা অনুযায়ী, নতুন শুমারিতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিটি প্রদেশ এবং কেন্দ্রীয় রাজধানীতে পার্লামেন্টের আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাস হবে। সিসিআইয়ের অনুমোদনের পর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ১৭ই আগস্ট ঘোষণা করেছে, নতুন করে পার্লামেন্টের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করতে সাংবিধানিক সময়সীমা ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এ সময় তারও বেশি লাগবে। ফলে ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব হবে না।