ঢাকা, ৮ মে ২০২৪, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

মেট্রোরেলের টয়লেট ব্যবহারেও টিকিট, ক্ষোভ

সুদীপ অধিকারী
২৬ আগস্ট ২০২৩, শনিবার
mzamin

শুক্রবার দুপুর ২টা বেজে ১৭ মিনিট। মেট্রোরেলের মিরপুর আগারগাঁও স্টেশন। ইশতিয়াক আহম্মেদ নামে একজন যাত্রী দৌড়ে টয়লেটের দিকে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে বাদ সাধলেন টয়লেটের বাইরের টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসা এক মহিলা। টয়লেটের ভেতরে প্রবেশের আগে কাটতে হবে টিকিট। মূল্য ১০ টাকা। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় আর তর্কে জড়ালেন না ইশতিয়াক। পকেট থেকে টাকা দিয়ে তাকে যেতে হলো ভেতরে। কাজ শেষে বেরিয়ে বললেন- এত টাকা খরচ করে টিকিট কেটে মেট্রোরেলে চড়তে এলাম। স্টেশনের ভেতরের টয়লেট ব্যবহারেও আবার টিকিট কাটা লাগছে।

বিজ্ঞাপন
এমনই এক ভুক্তভোগী রাফসান। তিনি বলেন, মেট্রো একটা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। একেতেই আমরা একগাদা টাকা খরচ করে টিকিট কাটছি। বিনিময়ে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা মিলছে না। এর ওপর আবার জরুরি প্রয়োজনে বাথরুম ব্যবহারে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। মেট্রোরেলের টয়লেট কোনো তৃতীয়পক্ষকে ইজারা দেয়া কর্তৃপক্ষের মোটেও উচিত হয়নি। রায়হান নামে আরেক যাত্রী বলেন, অন্য রেলস্টেশনে সকল ধরনের মানুষ প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু মেট্রোরেল স্টেশনে নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে টিকিট কাটার পরই প্রবেশ করতে হয়।

নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ ভালো। যে কেউ চাইলেই স্টেশনে প্রবেশ করে অরাজকতা করতে পারে না। তাই সদিচ্ছা থাকলে অন্য অবকাঠামোর মতো টয়লেটও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে মেট্রোরেল কর্র্তৃপক্ষ। তবে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনের টয়লেটটির দায়িত্বে থাকা মহিলা বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। আমরা এখানে চাকরি করি। আমাদের যেই দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আমরা সেইভাবেই কাজ করছি। তার হাতে থাকা ‘বৈশাখী সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড’ এর টিকিট দেখিয়ে বলেন, আমাদের এই টিকিট কোম্পানি থেকে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ১০ টাকা। যা আমাদের মুড়ি বই দেখিয়ে কোম্পানির লোককে হিসাব বুঝিয়ে দেয়া লাগে। 

এদিকে মেট্রোরেলের মিরপুর শেওড়াপাড়া স্টেশনে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। সেখানেও পাবলিক টয়লেটের সামনে টিকিট নিয়ে চেয়ারে বসে আছেন এক তরুণী। কেউ টয়লেট ব্যবহার করতে গেলে সেখানেও কাটা লাগছে ১০ টাকার টিকিট। এমনই এক ভুক্তভোগী মেট্রোর যাত্রী ওবায়দুর রহমান। নরসিংদী জেলা থেকে ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। মেট্রোরেল নিয়ে তার অনেক কৌতূহল। এজন্যই বউ-বাচ্চাকে নিয়ে এসেছিলেন মেট্রোয় চড়তে। তারও প্রয়োজন পড়ে টয়লেট ব্যবহারের। টিকিট কেটে টয়লেট ব্যবহারের পর ক্ষোভ ঝাড়লেন তিনিও। ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি বিশে^র বেশকিছু দেশ ভ্রমণ করেছি। কিন্তু কোথাও এমন মেট্রোর টয়লেটে টাকা নেয়া দেখিনি। সেখানে উপস্থিত এক আনসার সদস্য বলেন, শুধু এখানে না কাজীপাড়া, মিরপুর-১০ সবখানেই টয়লেটে টাকা নেয়া হয়। মূলত মেট্রোরেলের টয়লেটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণার জন্য এই টাকাগুলো নেয়া হয়। তবে নিয়মিত চলাচলকারী  অনেকেই আবার এই টাকা নেয়াকে খারাপ চোখে দেখছেন না। 

তাদের দাবি- ১০ টাকার বদলে এই টাকার পরিমাণটা একটু কম হলে ভালো হয়। এদিকে মিরপুর শেওড়াপাড়া স্টেশন থেকে বের হওয়ার পরে কাজীপাড়া, মিরপুর-১০ সহ অন্য স্টেশনে গিয়ে তেমন কাউকে আর টয়েলেটের সামনে টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-৬) যুগ্ম সচিব অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) খোন্দকার এহতেশামুল কবীর বলেন, মেট্রোরেল চালুর প্রথমদিকে দেখা গেছে অনেকেই আমাদের টয়লেটগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে তছরুপ করেছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে। এজন্য বাধ্য হয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টয়লেটগুলো তৃতীয়পক্ষের কাছে ইজারা দিয়েছি। টাকা নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে অন্য সকল পাবলিক টয়লেটেই ইজারাদাররা টাকা নিয়ে থাকেন। এখানেও ঠিক সেভাবেই টয়লেটগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজের জন্য নির্ধারিত টিকিটের মাধ্যমে টাকা নেয়া হচ্ছে। কিছু জায়গায় ব্যবস্থাটি চালু হয়েছে। বাকি স্টেশনগুলোর টয়লেটগুলোই ধীরে ধীরে ইজারার আওতায় আনা হবে।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status