ঢাকা, ১ জুন ২০২৫, রবিবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

সুজনের আলোচনা সভায় বক্তারা

কিছু সংস্কার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে দ্রুত নেয়া সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার
৩০ মে ২০২৫, শুক্রবার

রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবিত বিভিন্ন সংস্কারের মধ্যে অনেকগুলোই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কিংবা অধ্যাদেশের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব। গতকাল সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এই সভার আয়োজন করে। 
সংলাপে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ, সুজন স¤পাদক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, বিচারব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক  সোহরাব হাসান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার ও এডভোকেট দিলরুবা শারমিন প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। 
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, সুজন দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় সনদের কথা বলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রতিষ্ঠার পর জাতীয় সনদ যেটা  আমরা জুলাই সনদ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলছি। সামনে জুলাই মাস যেটা আমাদের উদ্দেশ্য জুলাই মাসে সনদ তৈরি করা। 
তিনি বলেন, জাতীয় সনদ তৈরি হলো বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কী রকম রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তুলবে, নাগরিকের সুবিধাগুলো কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে, প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে কি পারবে না-তার জন্য এক ধরনের সামাজিক চুক্তি। 
সংবিধান পরিবর্তন হয় জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে অধিকাংশ সংবিধানের মেয়াদ সাড়ে ১৬ বছর। ব্যতিক্রম আছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দীর্ঘদিন ধরে আছে। ফরাসি সংবিধান দ্রুত পরিবর্তন হয় কারণটা কী, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকের যে আকাক্সক্ষা,  সেই আকাক্সক্ষাকে ধারণ করার চেষ্টা করে। যারা এটাকে সেক্রামেন্টে পরিণত করেন তারা জনগণের আকাক্সক্ষাকে বুঝতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত সংবিধান তৈরি করে জনগণ। জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন সেখানে থাকবে। এ কথা আমি বলছি কারণ জাতীয় সনদের সঙ্গে এর সংযুক্তিটা কোথায়। সংযুক্তিটা হচ্ছে একটি রাষ্ট্র যেটাকে আপনি রিপাবলিক বলেন। রিপাবলিকের বৈশিষ্ট্য হলো রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে তৈরি করবে যে একে অপরাপরের ওপর নজর রাখতে পারবে। 
তিনি বলেন, আমরা একটি ডেমোক্রেটিকের চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি এই কারণে ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো একটি ডেমোক্রেটিক রেডি করা। ৭২ সালের সংবিধানের মধ্যে সেটার সামান্য সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ক্রমাগতভাবে সেটাকে স্টিপআপ করা হয়েছে। 
আলী রীয়াজ আরও বলেন, আপনি যদি সংবিধানকে সেক্রামেন্ট মনে না করেন একেবারে ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না। কোনো সংবিধান এ রকম হতে পারে না। 
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যৌক্তিকভাবে জনপ্রত্যাশার যে চুম্বক সংগ্রহ (মতামত জরিপ) করা হয়েছে। সেটার মধ্যে নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক জনপ্রতিনিধিত্ব বিষয়গুলোরই প্রতিফলন ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করার মোটাদাগে কর্তৃত্ববাদ প্রতিহত করার সুপারিশমালাগুলো। যেটার মধ্যে বিশেষ করে নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন উপস্থাপনা করেছে। যেগুলোর বেশির ভাগই সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুজনের যে চাওয়া সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য এই চুম্বক ডকুমেন্টটি (মতামত জরিপ)। ঐকমত্য কমিশনের সবগুলো রিপোর্টও যদি বাস্তবায়ন হয় ততদিন পর্যন্ত কাজ হবে না। যতদিন পর্যন্ত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা না যাবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উচ্চকক্ষ এমনভাবে হবে যারা সব দলের প্রতিনিধিত্ব নয়, সমাজের সর্বক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। ফলে নিম্নকক্ষ যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়। উচ্চকক্ষের মাধ্যমে যেন পরিবর্তন আসে জনগণের স¦ার্থে, জনগণের কল্যাণে। তাই উচ্চকক্ষটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নারীরা এই দেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি। তাদের সেই দাবি অর্ধেকের বেশি প্রতিনিধিত্ব। নারীরা সত্যিকারার্থে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভিত্তিতে জিতে আসতে পারে। সেজন্যই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি। 
ক্ষমতা কুক্ষিগত করার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যিনি জিতবে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে তিনি হবেন সংসদীয় নেতা । কাজেই সংসদীয় দলের নেতা হবে প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি যদি সংসদের নেতা হন, তাহলে কিন্তু সমস্যা আছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী হবেন নির্বাহী বিভাগের প্রধান, সংসদ হলো আইনসভা। আইনসভার প্রধান এবং সংসদের প্রধান একই হলে ক্ষমতার যে পৃথকীকরণ নীতি সেটা বিঘ্নিত হয়।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড়  ঝুঁকি হলো একই ব্যক্তি যদি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হন; তাহলে কিন্তু এক ব্যক্তি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পথ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে যাওয়া আমাদের স্বৈরাচার সৃষ্টি হওয়ার বড় ভূমিকা  রেখেছে। তাই আমি মনে করি এক ব্যক্তির তিনটা শাসন আমাদের স্বৈরাচার সৃষ্টির বড় ভূমিকা রেখেছে। 
সংস্কারগুলোকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৬টা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। কতোগুলো সংস্কার অধ্যাদেশের মাধ্যমে এবং কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়। যেগুলো সরকার অধ্যাদেশ এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারেন। সেগুলো আমরা সরকারের কাছে দিয়েছি এবং সরকার এগুলো বিবেচনায় নিয়েছেন। এবং দ্রুতই আমি আশাকরি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত, পুলিশ সংস্কার সংক্রান্ত এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংক্রান্ত  যে প্রস্তাবগুলো সরকারকে দিয়েছি। এগুলো অধ্যাদেশ এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে করা যায়। সরকার দ্রুতই এগুলো বাস্তবায়ন করবেন। এর ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে আমরা একধাপ এগিয়ে যাবো।  
দিলরুবা শারমিন বলেন, বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ভর করছে জনগণের ওপর। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কোনোকিছুই সম্ভব না। নারীদের সংরক্ষিত আসনের এই দয়াদাক্ষিণ্যের এমপি আসন কেন নেবো? বর্তমান নারী আসনের ব্যাপারে যে প্রস্তাবনা সেখানে নারীদের সম্মান দেয়া হয়েছে। মেয়েরা এখন না বলতে শুরু করেছে। একবার না বলা শুরু করা মানে আত্মসম্মান চলে আসা।
মনির হায়দার বলেন, মানুষের জীবনের মুক্ত দিন মুক্তভাবে কথা বলতে পারা। প্রবাসীদের বড় একটা অংশকে কেন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিধান করা হবে না। যেখানে রাষ্ট্রের বড় একটি অর্থনৈতিক রেমিট্যান্স আসছে প্রবাসীদের থেকে। 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status