ঢাকা, ১৬ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

রাজনীতির কারণে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সেবার মান তলানিতে

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ জুন ২০২৩, সোমবার
mzamin

রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে থাকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। মূলত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র আধিপত্য এর জন্য দায়ী। রাজনীতির কারণে ঐতিহ্যবাহী এ হাসপাতালের সেবার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। হাসপাতালটিতে রয়েছে সুশাসনের ঘাটতি। যা দীর্ঘকাল চলছে।  গতকাল ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি আরও বলেন, পরিচালনায় বিরাজ করছে অথর্ব অবস্থা। অবাক করার বিষয় হলো-প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো অর্গানোগ্রাম নেই। এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয় জনবল। অভ্যন্তরীণ যে আয়-ব্যয়ের হিসাব থাকে সেটা যথানিয়মে সংরক্ষণ করা হয় না। সে কারণে হাসপাতালটিতে আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন
প্রতিষ্ঠানটিতে সুশাসন ও আস্থার ঘাটতি থাকায় টিআইবি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকায় হলি ফ্যামিলি হাতপাতালে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। জবাবদিহিতা ছাড়া একটা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবা শুধু একটা খাত নয়, এখানে একটা মানবিক দিক রয়েছে। হাসপাতালের জিনিসপত্র কেনাকাটায়ও রয়েছে অস্বচ্ছতা। প্রতিষ্ঠানটিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তথ্য অধিকার আইনের লঙ্ঘন হয়েছে এখানে। এ সময় তিনি ১৪টি সুপারিশ তুলে ধরেন। 
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এই হাসপাতালটি পরিচালনা করে। পদাধিকার বলে রেড ক্রিসেন্ট-এর চেয়ারম্যানই এই হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ  করেন। বর্তমানে মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আব্দুল ওয়াহহাব রেড ক্রিসেন্ট-এর চেয়ারম্যান। 
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র দেয়া সুপারিশগুলো হলোÑ ১. বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি অর্ডার, ১৯৭৩ বা প্রেসিডেন্ট’স অর্ডার নং ২৬, ১৯৭৩ সংশোধন করে চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা হ্রাস করতে হবে; আয়-ব্যয় ও কার্যক্রম ও নীতি-সিদ্ধান্ত বোর্ডসভার সর্বসম্মত ভিত্তিতে গৃহীত হতে হবে এবং বোর্ডের নিকট জবাবদিহি সাপেক্ষে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ কর্তৃক বাস্তবায়িত হতে হবে। ২. হাসপাতালের জন্য একটি কার্যকর এবং বাস্তবসম্মত মানবসম্পদ কাঠামো/আর্গানোগ্রাম তৈরি করতে হবে। ৩. একটি পৃথক বিধিমালার প্রণয়ন করে হাসপাতালটির ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল স্তরের কর্মী নিয়োগ, পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা ও দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. হাসপাতালটির সুনাম পুনরুদ্ধার এবং হাসপাতালে সেবার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং অবকাঠামো সংস্কার ও মেরামতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৫. প্রয়োজনীয়তা যাচাই সাপেক্ষে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ৬. হাসপাতালে আয়-ব্যয় এবং ক্রয়সহ সকল কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে; একটি বার্ষিক ক্রয়-পরিকল্পনা তৈরি এবং সকল ধরনের ক্রয় নিয়ম মেনে সম্পাদন করতে হবে। ৭. হাসপাতালের বিভিন্ন তথ্য স্ব-প্রণোদিত তথ্য প্রকাশ সম্পর্কে তথ্য অধিকার আইনের সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী প্রকাশ করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে নিম্নোক্ত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে- হাসপাতালের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব নিশ্চিতে সকল ধরনের নথিপত্র সংরক্ষণ ও নিয়মিতভাবে বাৎসরিক ভিত্তিতে খ্যাতিসম্পন্ন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বাধীনভাবে নিরীক্ষা করতে হবেÑ প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়সহ প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে হবেÑহাসপাতালের ওয়েবসাইটে প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সেবা সম্পর্কিত তথ্যের নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবেÑ হাসপাতাল প্রদত্ত সকল সেবা, সেবা মূল্য, সেবা প্রদানের সময়সূচি ইত্যাদি উল্লেখপূর্বক একটি পরিপূর্ণ নাগরিক সনদ এবং সেই সঙ্গে তথ্য বোর্ড প্রণয়ন এবং এটি হাসপাতালের প্রধান ফটকে প্রদর্শন করতে হবে; বিভাগ অনুযায়ী কর্তব্যরত চিকিৎসকের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন ও প্রদর্শন করতে হবেÑ হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে জনগণকে জানাতে এবং উৎসাহিত করতে প্রচার প্রচারণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি অনুযায়ী কর্ম সম্পাদনভিত্তিক বার্ষিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৯. সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য দায়ীদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত করে কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ১০. হাসপাতাল পরিচালনা ও তদারকিতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি স্বাধীন হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। ১১. সেবাগ্রহীতা কর্তৃক অভিযোগ দাখিলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অভিযোগ নিরসন করে সেবার মান উন্নয়ন করতে হবে। ১২. হাসপাতালের সকল ধরনের ক্রয়ে সংশ্লিষ্ট আদেশ ও নিয়মনীতি কঠোরভাবে পালন করতে হবে। ১৩. হাসপাতালের সকল ধরনের নিয়োগ ও পদোন্নতি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, পক্ষপাতহীন এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করতে হবে। ১৪. কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক আচরণবিধি প্রবর্তন করতে হবে এবং এটি তাদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।  

উল্লেখ্য, ঢাকা, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ক্যাথলিক মেডিকেল মিশনারিজের মাধ্যমে ১৯৫৩ সালে (১৫ই মার্চ) স্থাপিত হয়। ক্যাথলিক মেডিকেল মিশনারিজ ১৯৭১ সালে হাসপাতালটি ডিড অফ গিফট নং ৭৬৯৬/১৯৭১-এর আওতায় বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির কাছে হস্তান্তর করলে নামকরণ হয় হলি ফ্যামিলি রেডক্রস হাসপাতাল। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি করার ফলে হাসপাতালের নাম পরিবর্তিত হয়ে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল হয়। ২০০০ সালে মেডিকেল কলেজে হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে এবং তখন থেকে এটি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে পরিচিত। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কনসালটেন্ট তাসলিমা আক্তার ও  মো. মাহ্ফুজুল হক।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status