ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

প্রশিক্ষণের নামে প্রমোদ ভ্রমণ

ছুটি শেষেও যুক্তরাষ্ট্রে আইসিটি’র ৭ কর্মকর্তা

সিরাজুস সালেকিন
১৮ জুন ২০২৩, রবিবার

কারিগরি প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অধিদপ্তরের ৭ কর্মকর্তা। সরকারি আদেশে (জিও) তাদের সফর ৫ দিনের। ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও তারা দেশে ফিরেননি। কী  কাজে, কোন প্রকল্পের অংশ হিসেবে তারা যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছেন তা জিও’তে উল্লেখ নেই। সফরে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা হলেন, অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) এস এ এম রফিকুন্নবী, আইসিটি বিভাগের উপ-সচিব এস এম শফিক, অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার আব্দুল্লাহ আল রহমান, মো. হারুন অর রশিদ, এ এস এম হোসনে মোবারক, আব্দুল্লাহ বিন সালাম ও মো. গোলাম মাহবুব। গত ৩রা জুন তারা নিউ ইয়র্কে পৌঁছান। ১০ই জুন তাদের দেশে ফেরার কথা। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ওই কর্মকর্তারা কাজে যোগ দেননি। মানবজমিনের হাতে আসা একটি জিও অনুসারে এ সফরের অর্থায়ন করেছে ইনফ্লো টেকনোলজিস নামের সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। তবে সফরের অর্থ জোর করে বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞাপন
আর  জিও-এর কপি ওয়েবসাইটে মাত্র একদিনের জন্য প্রকাশ করে তা সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

 ওয়েবসাইটে না থাকায় এই সফর নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে। প্রশিক্ষণের নাম করে ওই কর্মকর্তারা প্রমোদ ভ্রমণের আয়োজন করেছেন বলে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্র মতে, যে প্রতিষ্ঠানটির আমন্ত্রণে ওই কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন সেটি কোনো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বা এনজিও নয়। এ ছাড়া এটি তথ্য ও প্রযুক্তি অধিদপ্তর বা বিভাগের কোনো প্রকল্প বা কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণ বা সরবরাহের কোনো চুক্তিও নেই। জিওতে উল্লেখ আছে প্রতিষ্ঠানটি এই দলের সকল সদস্যের ব্যয়ভার বহন করবে। অর্থাৎ তাদের বিমান ভাড়া, যানবাহন, আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থাও করবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের  কাছ থেকে সরাসরি অর্থ না নিলেও তাদের পেছনে প্রতিষ্ঠানটির একটি বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এই কর্মকর্তাগণের মধ্যে ৫ জন প্রোগ্রামার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের ইডিসি প্রকল্পে প্রকিউরমেন্ট, ফাইন্যান্সসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, জিও’তে ইনফ্লো টেকনোলজিস অর্থায়নের কথা থাকলেও তারা পুরো সফরে অর্থায়ন করেনি। ইডিসি প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রভাব খাটিয়ে সফর খরচের টাকা নিয়েছেন এই কর্মকর্তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কহীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণ গ্রহণ এবং তাদের খরচে বিদেশ ভ্রমণ এক ধরনের উপহার।  বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উপহার গ্রহণ সম্পূর্ণ অনৈতিক।

 এ ছাড়াও সরকারি কর্মচারীর নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে তার কর্ম অধিক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা শিল্প প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো সংস্থায় ব্যক্তিগত আতিথেয়তা পরিহার করা। এ বিষয়ে প্রশাসনিক আইন বিশারদ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, অভিজ্ঞতা বিনিময় বা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম আয়োজনের বিষয়টি অবশ্যই প্রকল্পের ডিপিপিতে উল্লেখ থাকতে হবে। দপ্তরের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সফর আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ওই সব প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুবিধা প্রদান। এধরনের কর্মকা-ের কারণে কর্মকর্তারা অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন।  এদিকে ডলার সংকটের এ সময়ে এমন বিতর্কিত সফরকে আড়াল করতে ওয়েবসাইট থেকে জিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বহির্গমন ও বহিঃবাংলাদেশ ছুটি সংক্রান্ত জিওগুলো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি  বিভাগের এই ৭ কর্মকর্তার জিও ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর দ্রতই তুলে নেয়া হয়। 

 বিভাগের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন সময়ের জিও খুঁজে পাওয়া গেলেও এই জিওটি কেন তুলে নেয়া হলো সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। জিও প্রকাশ করে তা আবার সরিয়ে ফেলার ঘটনায় এ সফরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ছুটি ছাড়াই কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোস্তফা কামাল।  জিওর তারিখ থেকে বর্ধিত সময় তারা কেন অবস্থান করছেন এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহাপরিচালক বলেন, সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী টিকিট না পাওয়ায় ওই কর্মকর্তাদের ফিরতে দেরি হয়েছে। তবে তারা দেশে ফিরেছেন কিনা তা পরিষ্কারভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি।  অবশ্য এই সফরকে অধিদপ্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইসিটি অধিদপ্তরের সাড়ে ৪০০ প্রকৌশলী রয়েছে যারা সাইবার সিকিউরিটি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করে। তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের সহায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে ওই কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পাঠানো হয়েছে। তারা কী নিয়ে আসবে, কী অর্জন হবে তাদের এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করেছি। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status