বাংলারজমিন
সীতাকুণ্ডে কৃষকদের দুঃখের শেষ নেই বর্ষার আগেই খাল সংস্কার জরুরি
আবদুল্লাহ আল ফারুক, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) থেকে
২৬ মে ২০২৩, শুক্রবার
সীতাকুণ্ডে পৌরসভায় তিন ফসলি শত শত একর জমি বছরের বার মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে কৃষকদের দুঃখ দুর্দশার সীমা নেই। পৌরসভার ছড়া ও খালগুলো সংস্কারের বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কবলে পড়ে তা সংস্কার করা যাচ্ছে না। সরজমিন পৌরসভা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নামে খ্যাত এ পৌরসভা এলাকায় অনেকগুলো ছড়া ও খাল দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে সংস্কার বা ড্রেজিং না করার কারণে অতিবর্ষণ বা ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে কৃষি জমিগুলো সারা বছরই জলাবদ্ধ থাকে। ফলে কৃষকরা কৃষি কাজ করতে পারে না। রাস্তাঘাটগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বছরের ১২ মাস জলাবদ্ধতার কারণে পৌর এলাকার কৃষি জমিগুলো অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ে। তবে পৌরসভার ছড়া ও খালগুলোর সংযোগ স্থল কুমিরা খাল হয়ে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে। তাছাড়াও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্লুইস গেটগুলো অকেজো থাকায় পানি সরে যেতে পারে না। এটাও জলাবদ্ধতার আরেকটি কারণ।
অন্যদিকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও শত শত একর জমি জলাবদ্ধতার কবলে পড়ায় শত শত কৃষক অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন কাটান। অনেকে ভিক্ষা পেশায় নেমেছেন। আর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা মাটির কারণে ছড়া ও খালগুলো ভরাট এবং সরু হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টির ও পাহাড়ি ঢলের পানি সাগরে যেতে পারে না। সেই সঙ্গে ছড়া বা খালের গভীরতা কমে যায়। এতে ৩ ফসলি জমির উৎপাদন হয় না প্রায় ৩০ বছর। প্রান্তিক কৃষক ও জমি মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে পৌর মেয়র স্থানীয় কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেন খালটি সংস্কারের। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। তবে খালটি সকল জমি মালিকদের উপস্থিতিতে সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। খালের সংস্কার পূর্ববর্তী অবস্থান ছিল ১২/১৪ ফুট প্রস্থ, গভীরতা ৩/৪ ফুট, সিট মোতাবেক খালটি সর্বনিম্ন ১৮ ফুট হতে সর্বোচ্চ ৩৬ ফুট প্রস্থ পাওয়া যায়।
বর্তমানে সংস্কার করার পর যার অবস্থান দাঁড়িয়েছে গভীরতা ভূমি হতে ৭/৮ ফুট, প্রস্থ পাড়সহ ৩০/৩২ ফুট। এ ছাড়া পূর্ববর্তী সময়ে খালের পাড় ছিল না বললেই চলে, যা বর্তমানে ভূমি হতে ২/৩ ফুট উচ্চতা প্রস্থে ৪-৬ ফুট। এ দীর্ঘ জলাবদ্ধতার দরুন পৌরসভার কৃষকদের শত শত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। কৃষক মোস্তফা জানান, অতীতে দীর্ঘ সময় ধরে আমরা খালের পাড়ঘেঁষা জমিতে চাষ করতাম। কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে খাল সংস্কার না হওয়ায় বৃষ্টির সময় কষ্ট করতে হয়। অপরদিকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়াতে অর্থনৈতিকভাবেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। এখন খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির পাশাপাশি বর্ষা পরবর্তী জমা পানি কৃষকের উপকারে আসবে। স্থানীয় কাউন্সিলর মো. ফজলে এলাহী মানবজমিনকে বলেন, সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকায় এস্কেভেটর ব্যয়সহ যাবতীয় ব্যয়ের জন্য কিছু মাটি বিক্রয় করে এলাকাবাসীদের নিয়ে সংস্কার কাজ শুরু করি।
সঙ্গে কবরস্থানের জন্য মাটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বদিউল আলম জানান, পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা একটি অভিশাপ। যুগ যুগ ধরে এ জলাবদ্ধতায় কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশার কথা উপলব্ধি করে খাল সংস্কার জরুরি মনে করি। তাই আমার নির্দেশনা পেয়ে কোনো কোনো কাউন্সিলর খাল বা ছড়া সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। পরবর্তীতে অন্য ওয়ার্ডের খালগুলোও দ্রুত সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হবে। এজন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাদিউজ্জামান বলেন, আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে খাল সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।