ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আলোচনা

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে গণমাধ্যমকে ভয়হীন স্বাধীনতা দিতে হবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার
৪ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

আন্তর্জাতিক মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদপত্র গণতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গণমাধ্যম নাগরিকদের তাদের নেতাদের দায়বদ্ধ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দেয় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচার করে। এটি লোকদের তাদের সম্প্রদায়, জাতি এবং বিশ্বের রাজনৈতিক ও নাগরিক ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণভাবে জড়িত। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানের পাশাপাশি জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার দলিলগুলোতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বক্তারা বলেন, অবশ্যই বিভ্রান্তি এবং সেন্সরশিপের মতো হুমকির মুখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের অধিকার সংরক্ষণ ও সুরক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করতে হবে। এটি নির্বাচনকালে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেই নির্বাচন স্থানীয় বা জাতীয় যা-ই হোক না কেন। তারা বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন নিশ্চিতে সাংবাদিকদের অবশ্যই জনগণকে সম্পূর্ণরূপে জানাতে সক্ষম হতে হবে। এমন সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে সাংবাদিকরা হয়রানি, ভয় বা সহিংসতার শঙ্কা ছাড়াই ঘটনাগুলো কভার করতে পারেন। গতকাল মধ্যাহ্নে রাজধানীর বারিধারাস্থ আমেরিকান সেন্টারের হলরুমে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লা ফেইভ, ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, ডাচ্ রাষ্ট্রদূত অ্যান ভন লিউ এবং প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি মার্কিন পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্যাতিত সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় থাকা মিডিয়া কোয়ালিশনভুক্ত রাষ্ট্রদূতের ভিডিওবার্তা প্রচার করা ছাড়াও বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের একটি যৌথ বিবৃতি প্রচার করা হয়।

বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র মিশন প্রধানদের ওই যুক্ত বিবৃতিতে মুক্ত গণমাধ্যম যে গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য- সেটি স্পষ্ট করা হয়।

সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়- মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স: মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লা ফেইভ তার বক্তৃতায় দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়। আমি আবারও বলছি সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়। শুধুমাত্র সাংবাদিকতার জন্য কাউকে শাস্তি দেয়া বা ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি করা কাম্য নয়। কেবল কাগজে -কলমে সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেয় এমন সাংবিধানিক বিধান বা আইন থাকাই যথেষ্ট নয়- মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমাজকে নানাভাবে উপকার করে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করলে একটি সমাজ আরও সমৃদ্ধ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বেশি তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশি। এর কারণ, মুক্ত সংবাদ প্রচার দায়বদ্ধতা বাড়ায়। এটি দুর্নীতি কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলে। সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যে অ্যাক্সেস থাকতে হবে। তাদের উৎস রক্ষা করতে সক্ষম হতে হবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মূল্যকে স্বীকৃতি দেয়া, রক্ষা তথা সুরক্ষার দায়িত্ব প্রত্যেকের রয়েছে জানিয়ে জ্যেষ্ঠ ওই মার্কিন কূটনীতিক বলেন, এতে সরকার, মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা- সবার সমান দায়িত্ব। মার্কিন কূটনীতিক বলেন, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচারের জন্য স্বাধীন সংবাদপত্র অপরিহার্য। সাংবাদিকরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ এবং জবাবদিহিতা প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি এদেশের সাংবাদিকরা সরকারের দুর্নীতি, পরিবেশের বিপর্যয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো প্রকাশ করেন। নারীদের কণ্ঠস্বর শোনা এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে তারা লিঙ্গ সমতাকেও উন্নীত করতে পারেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একটি উজ্জ্বল আলোর মতো যা সমাজের অন্ধকার কোণে জ্বলে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাহরণ মানে সেই আলো নিভে যাওয়া, দায়মুক্তি ও অন্যায় তথা অন্ধকারকে আশ্রয় এবং গাঢ় হতে দেয়া। তিনি বলেন, যখন আমরা দেখি বিরোধী বা ভিন্নমতের প্রচারকারী সংবাদপত্র নিষিদ্ধ, সাংবাদিক বা তাদের পরিবারের সদস্যদের আক্রমণ কিংবা গ্রেপ্তার করা হয় বা ত্রুটিপূর্ণ আইন লঙ্ঘনের জন্য সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তখন আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি সংবাদপত্রের সামগ্রিক স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্র ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কায়। তিনি বলেন, আসুন একসঙ্গে, আমরা মিডিয়ার স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখি এবং আলোকে আরও প্রস্ফুটিত হতে সহায়তা করি। আসুন সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করা বা মিডিয়ার স্বাধীনতাকে সীমিত করার প্রচেষ্টাকে যে যার অবস্থান থেকে প্রতিরোধ করি। আসুন আমরা আরও ন্যায্য, ন্যায়সঙ্গত এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে একসঙ্গে কাজ করি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাংলাদেশের সংবিধানের পাশাপাশি জাতিসংঘের দলিলেও নিশ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি এই অধিকারে পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আজকে এখানে মিডিয়ার সদস্যদের কাছে সত্য বলার জন্য আপনি যে ঝুঁকি নিয়ে থাকেন, তা বিপজ্জনক হলেও আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিসহ অতিথিদের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে এবং এখানে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াতে আপনার সরকারের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে গর্বিত।

অনুষ্ঠানে বিলি করা মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের যৌথ বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে: ওদিকে অনুষ্ঠানে বিলি করা মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন সমমনা দেশগুলো নিয়ে গঠিত, যারা বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তার পক্ষে কাজ করে ও পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশের মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের ডিপ্লোমেটিক নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভে (কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক উদ্যোগ) স্বাক্ষরকারী দেশগুলো ৩রা মে, অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের ৩০তম বার্ষিকী উদ্যাপন করছে। মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্য হিসেবে মিশন প্রধানরা বলেন, আমরা মুক্ত গণমাধ্যমের তাৎপর্য অনুধাবন করা ও একে রক্ষা করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্মুক্ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাজের বিকাশ ও উন্নয়নের শক্তিশালী ধারা প্রতিষ্ঠিত হয় জানিয়ে দূতরা বলেন, এমন একটা ধারা প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করছে, বাংলাদেশের মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্যরা তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন।

বিশ্বে সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ দেশের সংখ্যা দিনে দিনে কমছে: ‘অধিকারের ভবিষ্যৎ গঠন: অন্যান্য সকল মানবাধিকারের চালক হিসেবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক মার্কিন দূতাবাসের আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশনার লিলি নিকোলস বলেন, সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত দেশগুলোর সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের একটি পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ১৮০টি দেশের মধ্যে ৭৩ শতাংশেই সাংবাদিকতা অবরুদ্ধ বা বাধাগ্রস্ত হয়। কানাডিয়ান দূত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অনুশীলন, প্রচার ও সুরক্ষায় নারী সাংবাদিক এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং তাদের দৈনন্দিন কাজে ঝুঁকির বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status