ঢাকা, ৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শিক্ষাঙ্গন

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চান অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা

ইবি প্রতিনিধি

(৫ মাস আগে) ১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:৪৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১০ পূর্বাহ্ন

mzamin

শিক্ষাজীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে দাবি করে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। একইসঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ ও স্থগিত হওয়া ফল প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। অন্তরা পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসানের কাছে এ সংক্রান্ত একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন অভিযুক্ত অন্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই ছাত্রীর কাছ থেকে এই সংক্রান্ত একটি আবেদন পেয়েছি। আবেদনটি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখায় পাঠানো হয়েছে। এটি আইন প্রশাসকের মতামতের জন্য পাঠানো হবে। তার মতামত নিয়ে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

আবেদনপত্রে অন্তরা বলেন, গত ৪ঠা মার্চ অনুষ্ঠিত ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি বর্তমানে ফাইনাল ইয়ারে অধ্যয়নরত। আমার অনলাইন ক্লাস চলমান। আপনার দপ্তর হতে আমাকে দুই দফায় যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে সেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো ধারা উল্লেখ করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন
দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি, আমি উক্ত র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় কোনোভাবেই অংশ নেইনি। যেহেতু আমার বিরুদ্ধে কোন প্রকার পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি এবং বিষয়টি সময় সাপেক্ষ বিষয় তাই আমার শিক্ষাজীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে আমার তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু আমি আমার তৃতীয় বর্ষের সকল একাডেমি কার্যক্রম ও পরীক্ষা উল্লেখিত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই সমাপ্ত করি। আবেদনে তিনি সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, ক্লাস ও পরীক্ষা দেওয়ার অনুমুতি প্রদান এবং তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন বলেন, ফল স্থগিতের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি ভালো জানে। আমরা রেজাল্ট সাবমিট করার সময় কর্তৃপক্ষকে চিঠিতে দিয়েছিলাম যে, বিশ্ববিদ্যালয় তাকে (অন্তরা) সাময়িক বহিষ্কার করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্বদিব্যালয় কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করা হলো।

এ বিষয়ে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যাবতীয় একাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাকে (অন্তরা) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। কখন পরীক্ষা হয়েছে সেটা মুখ্য বিষয় নয়।

এদিকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বহিষ্কার করে কারণ দর্শানোর জন্য প্রদত্ত নোটিশকে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যা দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সাথে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে ভর্ৎসনা করেছে আদালত। এছাড়া উক্ত নোটিশকে অকার্যকর করে সাপ্লিমেন্টারি নোটিশ প্রদান করতে বলা হয়। ছাত্রী নির্যাতনের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী গাজী মো: মহসীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত ৪ঠা এপ্রিল হাইকোর্টে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ব্রেঞ্চে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। আমি বলেছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ত্রুটিপূর্ণ প্রসিডিউর মেইনটেইন করছে যেনো অভিযুক্তরা আইনের ফাঁক দিয়ে বেঁচে যায়। এজন্য আমি বিশবিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে ডেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করি। পরে আদালতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আইনজীবী ক্ষমা প্রর্থনা করলে আদালত সেই নোটিশটি অকার্যকর করে সাপ্লিমেন্টারি নোটিশ ইস্যু করতে বলেন। একই সাথে বলা হয়, এতে যেনো আইনের কোনো ব্যত্যয় না হয়, অন্যথায় তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

তিনি আরো জানান, অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানোর জন্য প্রদত্ত নোটিশে তাদের অপরাধের বর্ণনা করা হয়নি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার কোনো বিধি অনুযায়ী তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে সেটিও উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র হাইকোর্টের রিট পিটিশন নম্বর উল্লেখ করা হয় ওই নোটিশে।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র‌্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। পরে ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। এদিকে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়ায় ১লা মার্চ জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কার, ভুক্তভোগীকে তার পছন্দমতো সিট বরাদ্দ দেয়া ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই দিনই শেখ হাসিনা হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করে প্রশাসন। পরে ৪ঠা মার্চ ছাত্রলীগের অভিযুক্ত পাঁচ নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃতরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগ সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি ও ফিন্যান্স বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। অন্তরা বাদে সকলেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
 

পাঠকের মতামত

ছাত্রলীগ নেত্রী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চায়, তার মানে আরও কাউকে নোংরাভাবে নির্যাতন করতে বাকি আছে ?

Century Manik
৫ জুন ২০২৩, সোমবার, ২:২৩ পূর্বাহ্ন

এই মহিলার পরিবারকে আগে শাস্তি দেওয়া উচিত। তাদেরকে সামাজিকভাবে একঘরে করে দেওয়া উচিত। আর এই মহিলাকে সামাজিকভাবে অবাঞ্চিত না করলে তার হাত ধরে আরো নিরাপরাধ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

SAFI
৩১ মে ২০২৩, বুধবার, ৫:৫১ পূর্বাহ্ন

এই মহিলার পরিবারকে আগে শাস্তি দেওয়া উচিত। তাদেরকে সামাজিকভাবে একঘরে করে দেওয়া উচিত। আর এই মহিলাকে সামাজিকভাবে অবাঞ্চিত না করলে তার হাত ধরে আরো নিরাপরাধ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

Humayun Kabir
১৪ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ২:৩৩ পূর্বাহ্ন

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার কেন করতে হবে? আরও কাউকে নোংরাভাবে নির্যাতন করা বাকি আছে বলে? নাকি অবাধ স্বাধীনতা ও অর্থ উপার্জন কিছুটা কমে গেছে। আমার তো মনে হয় বাইরে থেকেও এরা ভালো কামাই রোজগার করতে পারে ও পারবে।

Siddq
১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

তোমার কষ্ট হচ্ছে ?কার জন্য ?

মোঃনূরূজ্জামান
১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

সামাজিক ভাবে বয়কট করা উচিত।

হক
১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৪:০৩ পূর্বাহ্ন

অপরাধ করেও যে অপরাধের কথা স্বীকার করে না, পৃথিবীতে তার চেয়ে বড় অপরাধী আর নেই। তাই, জেনে বুঝে এসব অপরাধীকে কখনোই ক্ষমা করা উচিত নয়। শুধু প্রাাতিষ্ঠানিক নয়, সামাজিক ভাবেও এদের বয়কট করা উচিত। শিখতে এসে এরাা কী শিখছে? অন্যদেরই বা কী শেখাবে? অন্তরে যাদের বিষ, তাদের মুখে শিক্ষার মধু দিয়ে কী হবে!

Mesbah khondker
১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৩:৩৫ পূর্বাহ্ন

কেন ? আরো কিছু শিক্ষার্থের জীবন ধ্বংস করার জন্য ? দরকার নেই আপনার পড়াশুনার । মনোরঞ্জনে মনোনিবেশ করুন ।

রাহমান মনি
১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

ওর লেখা পড়া দরকার নাই৷ ও শিক্ষিত বিষধর সাপ হবে৷

মোঃ মহসিন
১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:৫৪ পূর্বাহ্ন

প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে এইসব ঘটনা ঘটে। এইসব ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশাসন অসহায় নয়তো পক্ষপাতদুষ্ট। প্রতিনিয়ত ঘটা এইসব ঘটনার মাত্র দুই একটি প্রকাশ পায়। প্রশাসন জেনে চুপ থাকে। তাই যে দুই একটা প্রকাশ পায় তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হওয়া দরকার। এরা পার পেয়ে গেলে বাকীরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে যাবে।

ফারুক হোসেন
১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:১৬ পূর্বাহ্ন

শিক্ষা জীবন কাকে বলে ? এই কুশিক্ষার ছাইতে এক দুই জনের শিক্ষা না হলেও বাংলাদেশের শিক্ষিত লোকের অভাব হবে না । অনেক শিক্ষিত দেশে বেকার আছে ।

Kazi
১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:১৬ পূর্বাহ্ন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেও তো দাদাদের প্রতিনিধিরা বসে আছে, কে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে ?

N Islam
১৩ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

শিক্ষাঙ্গন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শিক্ষাঙ্গন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status