কলকাতা কথকতা
বুধবার সকাল থেকে তিলজলা শান্ত, দু’দিনের তাণ্ডব যেন মাহেমের চেহারা নিয়েছিল
বিশেষ সংবাদদাতা, কলকাতা
(২ বছর আগে) ২৯ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:০৬ অপরাহ্ন

সোম এবং মঙ্গলবার তাণ্ডব চলার পর বুধবার সকাল থেকেই তিলজলা-পিকনিক গার্ডেন শান্ত হয়েছে। বস্তুত বুধবার সকালে সংবাদমাধ্যমের গাড়ি প্রথম প্রবেশ করতে পারলো তিলজলা - পিকনিক গার্ডেনে। চারিদিকে যেন যুদ্ধপরবর্তী অবস্থা। অর্ধদগ্ধ দুটি গাড়ি পড়ে আছে রাস্তায়। সারি সারি বাড়িতে তাণ্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট। রাফ এর ফ্ল্যাগ মার্চ চলছে। সাত বছরের একটি শিশু কন্যার বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধারের পরই এই মাহেম। আমাদের গাড়ি ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস থেকে বাঁক নিয়ে পিকনিক গার্ডেন রোডে ঢুকতেই দু’দিনের রণক্ষেত্রের চেহারা যেন স্পষ্ট হলো। শ্রীধর রায় রোডের একটি পাঁচতলা বাড়ির সামনে হেলমেট পরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কলকাতা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের জয়েন্ট কমিশনার শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী। ক’দিন আগেও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাড়িতে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি পদ সামলানোর পর তিনি এখন ক্রাইম ব্রাঞ্চের জয়েন্ট কমিশনার। গত দু’দিন ঠান্ডা ঘরে বসে না থেকে শঙ্খশুভ্র লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট আপ্তবাক্যে বিশ্বাসী হয়ে রণাঙ্গনে হাজির থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বুধবার সকালেও তিনি অতন্দ্র প্রহরী। শঙ্খশুভ্র জানালেন যে, মেয়েটিকে হত্যা করার আগে তার ওপর যৌন অত্যাচার চালানো হয়েছিল। অলোক কুমার নামের এক গ্যাস ডেলিভারি বয় তার অপরাধ স্বীকার করেছে। সমস্তিপুরের এই বিহারি যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যে পাঁচতলা বাড়িটিতে মেয়েটি থাকতো তার ৩২টি ফ্ল্যাট। একতলায় একটি টি-শার্ট উৎপাদনের কারখানা। সবাই হতবাক এই ঘটনায়। প্রেসের গাড়ি দেখে মেয়েটির বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন- যে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে শুয়েছিলাম রবিবার দুপুরেই, তাকেই আবার গোড় দিয়ে এলাম মঙ্গলবার দুপুরে। ভাবতে পারছি না।
পিকনিক গার্ডেন - তিলজলা এলাকাটি মিশ্র এলাকা। সত্তর ভাগ মানুষ মুসলিম। দরিদ্র ও ধনীর সহাবস্থান। চামড়ার বড় বড় ট্যানারি যেমন আছে, তেমনই আছে বৃদ্ধ ওস্তাগরের কল চালানোর আওয়াজ। ঘিঞ্জি রাস্তা, কাঁচা রাস্তা আছে। এই তিলজলা-পিকনিক গার্ডেন অগ্নিগর্ভ হয় দু’দিন ধরে। বুধবার সকালে দু’দিন পর দোকানপাট খুলছে। চায়ের দোকানে গুলতানিও চোখে পড়লো। শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী জানালেন, গণ্ডগোল করার দায়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশিরভাগই বহিরাগত, এলাকার কেউ নয়। তাই কেউ কেউ মনে করছেন- এই মাহেমের পিছনে এলাকার বিধায়ক এবং এক কউন্সিলরের পুরনো ঝগড়া নেই তো! কেউ কাউকে ছোট করার জন্যে এই তাণ্ডব ঘটালো না তো! পুলিশ কিন্তু এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।