শরীর ও মন
রোজার সুস্থতায় ব্যায়াম
ডা. মো. বখতিয়ার
২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার
যেসব ব্যক্তিবর্গ রোজার মাসে প্রতিটি রোজা পালন ও তারাবির নামাজ আদায়সহ সম্পূর্ণ রুটিনমাফিক মাসটা পার করেন তাদের বলতে গেলে এক ধরনের শরীরচর্চা হয়েই যায়। আর যারা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা বা রোগে ভুগে থাকেন, কারও ডায়াবেটিস বা অন্যকারণে শরীরচর্চা তাদের চিকিৎসকের পরামর্শে রোজার সময় একটি নির্দিষ্ট সময় বের করে ব্যায়াম চালিয়ে গেলে শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখা যায়।
তবে সুস্থ থাকতে সবারই রোজায় কিছু হালকা ব্যায়াম করা উচিত। কেননা, ব্যায়াম জীবনের চলার গতিকে আরও স্মার্ট করে তোলে। সাধারণত এসময় আপনি যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি ব্যায়ামগুলো অনায়াসে করতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জিম বা হেলথ ক্লাবেও বিশেষ কিছু যোগব্যায়ামও করা যায়। তবে বয়স, শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী, প্রয়োজন পরিবেশগত সুবিধা বুঝে এই সময়ে ব্যায়াম করতে হবে।
রোজার সময় আপনি পুরো মাসটি রুটিনমাফিক হাঁটতে পারেন। এ সময়টাতে সকালবেলায় ব্যায়াম করে নিতে পারলে খুবই ভালো। কারণ দিন গড়াতে থাকলে শরীর দুর্বল আর পানিশূন্য হতে থাকে। এ জন্য প্রথমে ২০ মিনিট ধরে হাঁটা শুরু করুন। খুব জোরে না হেঁটে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দ্রুত হাঁটুন। যদি এসময় (রোজায়) প্রতিদিন ব্যায়াম করতে না পারেন তাহলে অন্তত সপ্তাহে তিন দিনের একটা পরিকল্পনা রাখুন। ব্যায়াম শুরুর আগে শরীরটাকে ভালোভাবে ওয়ার্মআপ করে নিন, ব্যায়াম শেষ করে কিছু স্ট্রেচিংও করুন। শরীরকে একদম বেশি ঘামতে দেবেন না।
ব্যায়ামের জন্য একেবারে উপযুক্ত কাপড় নির্বাচন করবেন। খুব বেশি ভারী কাপড় পরে ব্যায়াম করবেন না। ব্যায়াম করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখবেন। রোজায় ব্যায়ামের ক্ষেত্রে বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করার চেয়ে ঘরের মধ্যে ব্যায়াম করা ভালো।
এ ছাড়া সকালবেলা ঘুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে না উঠে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করুন। মনের চিন্তাকে দূর করে চিত হয়ে হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে শুয়ে শবাসন করুন। এতে শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এতে অনেক পরিশ্রম ও মানসিক চাপ সহ্য করা যায়। শরীরের যেকোনো ব্যথা ও লুকানো সমস্যা দূর হয়।
পাশাপাশি শুয়ে পেটের ওপরে দুই হাত রেখে গভীরভাবে নাক দিয়ে শ্বাস নিলে ফুলিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়লে ফুসফুসের শক্তি বাড়ে এবং দিনে ২০ মিনিট এটি করলে ভালো ঘুম হয়। একেবারে চলাফেরায় অক্ষম না হলে সবার পক্ষেই রোজা রেখে হালকা-পাতলা ব্যায়াম করা সম্ভব। যেহেতু রমজান মাসে শরীরে খাবারের ঘাটতি থাকে, তাই এই সময় বেশি ভারী ব্যায়ামগুলো না করাই ভালো। যেমন ভারোত্তোলন। ট্রেডমিলে হাঁটা, সাইকেল চালানো এবং কিছু ফ্রি-হ্যান্ড এবং ইয়োগা করা যেতে পারে। এই সময় ব্রিফিং এক্সারসাইজ বা প্রাণায়াম অনেক বেশি উপকারে আসে।
সম্ভব হলে প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করুন। কারণ রোজা রেখে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে, রক্তে শর্করার পরিমাণও কমে যেতে পারে। আর যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রোজার সময় যারা ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম বেশি করেন তাদের খাদ্য তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার রাখতে হবে। ইফতার, রাতের খাবার এবং শেষরাতের খাবারে শর্করা জাতীয় খাবার অবশ্যই রাখবেন। এমন খাবার খাবেন, যা থেকে দ্রুত ক্যালোরি পাওয়া যায়। বয়স, উচ্চতা ও ব্যায়ামের মাত্রা অনুসারে ক্যালোরির পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত। রাতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। চাইলে ইফতারের পানীয়তে একটু লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন। ইফতারিতে চেষ্টা করুন মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে। তবে প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল শরবত ও ফলের জুস বেশি করে খাওয়া এ সময় খুবই উপকারী।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।