ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

সুসম্পর্ক গড়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’

ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে
২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার

মোসা. সালমা খাতুন। বাড়ি চাঁপাই নবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে। পেশায় গরু খামারি। আনুষ্ঠানিকভাবে নারী উদ্যোক্তাই তার পরিচয়। অভিযোগ এসেছে সালমা স্রেফ উদ্যোক্তাই নন। এর পাশাপাশি পুরুষদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কাজেও তিনি জড়িত। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দাবি, ব্ল্যাকমেইল করে একাধিক পুরুষের কাছে তিনি অর্থ হাতিয়েছেন।  পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছেন, নারী উদ্যোক্তা পরিচয়ে সহানুভূতি নিয়ে টার্গেটকৃত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। লোকলজ্জার ভয়ে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার ওইসব লোকজন মুখ খোলেন না।

বিজ্ঞাপন
নেন না আইনের আশ্রয়। এ সুযোগে একের পর এক ব্ল্যাকমেইল করে আসছেন সালমা খাতুন। তার ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে কয়েক লাখ টাকা খুইয়েছেন এক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, এক ব্যবসায়ী ও এক প্রতিবেশী। সর্বশেষ ওই নারীর ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা চৌধুরী। ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পরিদর্শক সেলিম রেজা চৌধুরীকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। ভোলাহাট থানায় ওই নারীর সঙ্গে সেলিম রেজার বিবাদের একটি ভিডিও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘থানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ ও ‘অদক্ষতা’র কারণে সেলিম রেজা চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ২৩শে মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে ওই নারী বলেন, ২০২০ সালে সেলিম রেজা নাচোল থানার ওসি ছিলেন। এক আত্মীয়ের মামলার বিষয় নিয়ে সেলিম রেজার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। 

একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর সেলিম রেজা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। একই বিষয়ে পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বলেন, ভোলাহাট থানার ভেতর ওই নারীর চিৎকারের ভিডিওচিত্র পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওই নারীকে ডেকে তার বক্তব্য গ্রহণ করি। পরে থানায় গিয়ে তদন্ত করা হয়। তবে ওই নারীর সঙ্গে সেলিম রেজার পরকীয়া সম্পর্কের প্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি। নাচোল ও ভোলাহাট থানার পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই নারী বিভিন্ন জনের নামে ধর্ষণচেষ্টা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে থানায় আসনে। উদ্দেশ্য ছিল টার্গেটকৃত লোকদের ব্ল্যাকমেইল করা। এই নারী কখনো বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ধর্ষণ ও কখনো ধর্ষণচেষ্টা আবার কখনো শ্লীলতাহানির অভিযোগ করে ওই নারী অর্থ হাতিয়েছেন। 

  অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮শে জানুয়ারি চাঁপাই নবাবগঞ্জ প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করেন সালমা খাতুন। এরপর ২০২১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর নাচোল উপজেলার খোলসি গ্রামের মেশবাউল হক বাবু ইসলামের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করেন। তবে দুই অভিযোগেই তদন্তে সত্যতা না পাওয়ায় আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে নাচোল থানা পুলিশ। গত ২৪শে মার্চ ব্ল্যাকমেইলিংয়ে অভিযুক্ত সালমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০২১ সালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ও ওসি সেলিম রেজার মতো অনেকের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের দাবি জানায়। এতে রাজি না হলে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন সালমা খাতুন। পরে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। একইভাবে ওসি সেলিম রেজাকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করছে ওই নারী। তারও আগে খোলসী গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমান পাপেলের বিরুদ্ধে সালমার মা বাদী হয়ে আদালতে ধর্ষণ মামলা করে। যা পরে মিথ্যা মামলা বলে প্রমাণিত হয়। বিভাস নামের ঢাকার এক হিন্দু ব্যবসায়ীকেও ব্ল্যাকমেইল করেন সালমা খাতুন। 

ওই ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে সালমা। পরে ওই ব্যবসায়ী সামাজিক মর্যাদার ভয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম রেজা চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, ওই নারী কয়েক বছর আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ দিয়েছিলেন আদালতে। আদালত অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করার জন্য নাচোল থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। তবে ওই মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়। এ ঘটনায় ওই নারী তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই ওই নারী একাধিকবার নাচোল থানায় ও ভোলাহাট থানায় গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করেছেন। এখন মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। পুলিশ পরিদর্শক সেলিম রেজার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় সালমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছি সেটিই আমার বক্তব্য। আর কিছু বলার নেই। ওসির সঙ্গে সম্পর্কের কি প্রমাণ আছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন প্রমাণ আছে তবে সাংবাদিকদের দেবো না। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওসি মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। যে আপনার মামলায় ঘুষ নিয়ে আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছে তার সঙ্গে আপনার প্রেমের সম্পর্ক হয় কীভাবে- এমন প্রশ্ন শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক/ এবারো ভোগাতে পারে ১৩ কিলোমিটার

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status