ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

পাইলস হলে লংগো অপারেশন

ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
১৬ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

পাইলস রোগ হলো মলদ্বারে বা পায়ুপথে রক্ত যাওয়া, ব্যথা হওয়া, ফুলে ওঠা, মলদ্বারের বাইরে কিছু অংশ ঝুলে পড়া, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভেতরে ঢুুকে যাওয়া ইত্যাদি। বিভিন্ন পদ্ধতিতে পাইলস-এর চিকিৎসা হয়, যেমন-ইনজেকশন পদ্ধতি, রিংলাইগেশন পদ্ধতি এবং অপারেশন। ইনজেকশন পদ্ধতিতে প্রাথমিক এবং ছোট পাইলস ভালো ফল দেয়, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয় না। রিংলাইগেশন পদ্ধতিতে ফল খুব ভালো, প্রায় ৯০ শতাংশ পাইলস রোগী এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে ভালো হন। কিন্তু প্রায় ১০ শতাংশ রোগীর অপারেশন প্রয়োজন হয়। অবহেলায় ও সময়ক্ষেপণে পাইলস বড় হলে এবং বাইরে বেরিয়ে এলে অপারেশনের মাধ্যমে নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়। অপারেশনের মাধ্যমে মলদ্বারের চতুর্দিকে তিন জায়গায় বেশ কিছু জায়গা কেটে ফেলে দিতে হয়। যার ফলে অপারেশনের পর প্রচুর ব্যথা হয়, মলত্যাগের পর ব্যথা বেড়ে যায়, অনবরত সামান্য রক্ত ও পুঁজের মতো নিঃসরণ হয়। যার ফলে ক্ষতস্থান শুকাতে এক-দুই মাস সময় লাগে। কোনো রোগীকে অপারেশনের পরে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় এবং রোগীকে এক থেকে দেড় মাস কাটাতে হতে পারে।

বিজ্ঞাপন
মলদ্বারের চতুর্দিকের মাংস কাটার জন্য মলদ্বারের ভেতরের অনুভূতি কমে যায়। যার জন্য মল আটকে রাখার ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকে না। এসব সমস্যা সমাধানে অধ্যাপক ডা. অ্যান্টনিও লংগো, অধ্যাপক সার্জারি, ইউনিভার্সিটি অব প্যালেরমো, ইতালি ১৯৯৩ সালে একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যার নাম Longo Operation ev Stapled Haemorrhoidectomy. অর্থাৎ অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে মলদ্বার না কেটে পাইলস অপারেশন। এ পদ্ধতির Concept সম্পূর্ণ আলাদা। সাধারণত পাইলস একটি ঝুলে পড়া মাংস পিণ্ড। এই ঝুলে পড়া মাংস পিণ্ডের ভেতর অসংখ্য শিরা মলত্যাগের সময় প্রচণ্ড চাপে রক্তপাত ঘটায়। বিশেষ ধরনের যন্ত্রের (Hemorrhoidal circular stapler, Elthicone Endosurgery, USA) সাহায্যে অপারেশনের ফলে ঝুলে পড়া পাইলস  ভেতরে ঢুকে যায়। এ পদ্ধতিতে পাইলসের স্থানে বা মলদ্বারে কোনো কাটাছেঁড়া হয় না। এ পদ্ধতিতে মলদ্বারের অনেক গভীরে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে কাটাছেঁড়া হয়। এই যন্ত্রটি রেক্টামের ভেতর একটি চক্রাকার মাংস পিণ্ড কেটে নিয়ে আসে। কাটাছেঁড়া করে ওই যন্ত্রটিই আবার সেলাইও সেরে  দেয়। যার কারণে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। মলদ্বারের অনেক গভীরে যে স্থানটির নাম রেক্টাম সেখানে কোনো ব্যথার অনুভূতি  নেই। তাই এই অপারেশনের পর  কোনোরূপ ব্যথা হয় না। তবে মলদ্বারে কিছু নাড়াচাড়া করা হয়, যার ফলে অপারেশনের পর অল্প ব্যথা হতে পারে। এ পদ্ধতিতে পাইলসের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ রেক্টামের  ভেতর অপারেশনের ফলে পাইলসের রক্ত সরবরাহের শিরাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে গঠনগত দিক থেকে মলদ্বার সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে। মলদ্বারে সামান্যতম  কোনো কাটাছেঁড়া নেই। এটিই এই অপারেশনের বাড়তি সুবিধা। আরও একটি দিক হলো এ পদ্ধতিতে রক্ত বা পুঁজ পড়ার সমস্যা নেই। ক্ষতস্থান শুকানোর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা দরকার নেই বা দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়তি সুবিধা হলো এ অপারেশনে অজ্ঞান করা হয় না, তবে  কোমরের নিচের দিক অবশ করা হয়। অপারেশনের জন্য রোগীকে দুই-তিন দিন হাসপাতালে বা রেস্টে থাকতে হয়। সর্বোপরি আবার পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা অতি সামান্য।
পাইলস রোগীদের জন্য উপদেশ 
১. কোঁথ দিয়ে মলত্যাগের অভ্যাস পরিহার করুন ।
২. প্রচুর সবজি খাবেন। 
৩. কাশি-হাঁপানি রোগীর দ্রুত চিকিৎসা করাবেন। 
৪. মূত্র ত্যাগে বাধার তৈরি হলে তা দ্রুত চিকিৎসা করাবেন। 
পাইলস আবার হবে 
যদি  উপদেশ না মেনে চলেন, তাহলে আবার পাইলস হবে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) 
কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। 
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, এ.কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা। ফোন-০১৭১২৯৬৫০০৯

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status