ঢাকা, ২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাবান ১৪৪৪ হিঃ

শরীর ও মন

পুরুষের লিঙ্গ

১০ গোপন প্রশ্ন ও প্রকাশ্য উত্তর

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগেও শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে মানুষের বেশকিছু অজ্ঞানতা ও বিভ্রান্তি রয়েছে, বিশেষ করে ব্যক্তিগত ও যৌনতা বিষয়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, এক বিরাটসংখ্যক রোগী শুধুমাত্র সঠিক তথ্য না জানার কারণেই চিকিৎসকের চেম্বারে হাজির হন এবং অর্থ ও সময় খরচ করেন। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে, প্রথমত আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে যৌনতা বিষয়ক প্রাথমিক কোনো পাঠ নেই, দ্বিতীয়ত আমাদের সংস্কৃতিতে এ প্রসঙ্গে আলোচনাকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখা হয়। 
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যৌন চিকিৎসকদের চেম্বারে যত রুগী পরামর্শের জন্য আসেন, তাদের মধ্যে একটি বিরাটসংখ্যক রোগী পুংলিঙ্গ বা শিশ্ন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আসেন। আজকের এ নিবন্ধ মূলত এ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে ।
১. পুংলিঙ্গ বা শিশ্নের প্রকৃত সাইজ কী?
-এ বিষয়ে মেডিকেল গবেষণার কোনো কমতি নেই। সর্বশেষ একটি উঁচুমানের গবেষণায় দেখা গেছে, উত্থিত অবস্থায় লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ৫.১ ইঞ্চি থেকে ৫.৬ ইঞ্চি। অধিকাংশ মানুষের দৈর্ঘ্য ৫.১ ইঞ্চির কাছাকাছিই থাকে। সংকুচিত অবস্থায় লিঙ্গের গড় দৈর্ঘ্য ৩.৬ ইঞ্চি মাত্র।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৫% মানুষেরই কিন্তু পূর্ব ধারণা রয়েছে যে, শিশ্নের দৈর্ঘ্য গবেষণাপ্রাপ্ত প্রকৃত সাইজ থেকে অনেকটা বেশি।
আবার ৪৫ ভাগ পুরুষই মনে করেন, তাদের লিঙ্গ বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, তা যথেষ্ট নয় এবং পরিপূর্ণ যৌন সঙ্গমের জন্য এটা আরও দীর্ঘ আকারের হওয়া উচিত।
২. যৌন বিষয়ক ছায়াছবি বা কিছু বইয়ে বড় আকৃতির লিঙ্গ দেখা যায় এটা কেন?
-পরিসংখ্যানে গড় সাইজের বাইরে কিছু কথা রয়েছে। ৯৫ পারসেনটিস অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে ৫ জনের দৈর্ঘ্য ৬.৩ ইঞ্চির সমান বা বড় হতে পারে। আবার একইভাবে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৫ জনের দৈর্ঘ্য ৩.৯ ইঞ্চির সমান বা কম হতে পারে। সাধারণত পর্নো ছবিগুলো অস্বাভাবিক দৈর্ঘ্যসম্পন্ন পুরুষগুলোকেই নির্বাচন করে, যারা কোনো অবস্থাতেই গড় সাইজের পুরুষদেরকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। 
৩. কীভাবে লিঙ্গের মাপ নেবেন?
-সোজা কোথায় মূল থেকে আগা পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন
মূল বলতে পিউবিক হাড়কেই বোঝায়। নানা কারণে অনেকেরই লিঙ্গের মূলে চর্বিজাতীয় টিস্যু জমা হয়ে যায়, এতে করে লিঙ্গ পরিমাপে ভুল হয়। পিউবিক হাড় থেকে লিঙ্গের শেষ মাথা পর্যন্ত মাপলে সঠিক মাপ পাওয়া যায়।
৪. যৌন শক্তির সঙ্গে লিঙ্গের আকৃতি কতটা সম্পর্কযুক্ত?
-সংক্ষেপে এটার উত্তর হচ্ছে, লিঙ্গের আকৃতির সঙ্গে যৌনাকাক্সক্ষা বা যৌনক্ষমতার কোনো সম্পর্ক নেই। একইভাবে লিঙ্গের আকৃতির সঙ্গে প্রস্রাবের প্রক্রিয়া বা সন্তান উৎপাদন ক্ষমতার কোনো সম্পর্ক নেই। 
৫. লিঙ্গের আকৃতি কি বাড়ানো যায়?
-উত্তর হাঁ বা না দুটোই। সাধারণত লিঙ্গের আকৃতি খুব একটা পরিবর্তন করা যায় না। তবে কিছু কিছু প্রক্রিয়ায় অতি সামান্য পরিমাণ পরিবর্তন করা যায়, যা মূলত অস্থায়ী। বিভিন্ন মিডিয়ায় এ বিষয়ে বিজ্ঞাপনের কোনো অভাব নেই- তেল, মালিশ, ট্যাবলেট বা বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসÑ সবই প্রচারণায় রয়েছে। উপকারের চাইতে এগুলো অপকারই বেশি করে। লিঙ্গের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর জন্য নিম্নের কিছু পদ্ধতি ক্ষেত্রবিশেষে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে: ক. পেনিস পাম্পÑ এটি একটি সাকশন ডিভাইস, অনেকটা সিরিঞ্জের মতো। এর মাধ্যমে টেনে লিঙ্গের স্পঞ্জের মতো টিস্যুতে রক্ত টেনে আনা হয়, ফলে লিঙ্গ অনেকটা স্ফীত হয়। সঠিকভাবে এবং নিরাপদভাবে ব্যবহার করা গেলে এটা প্রয়োজনের সময় কাজে আসে। খ. ট্রাকশন ডিভাইসÑ এটা লিঙ্গকে টেনে নিচের দিকে ধরে রাখার যন্ত্র। এ পদ্ধতিতে লিঙ্গের টিস্যু ধীরে ধীরে এবং সূক্ষ্মভাবে একটু আলগা হয় এবং এর দৈর্ঘ্যও সামান্য বাড়ে। তবে এ পদ্ধতিটি এখনো গবেষকদের পুরোপুরি অনুমোদন পায়নি। গ. সার্জারি এবং হরমোন থেরাপিÑ হরমোন এবং একধরনের জটিল সার্জারির মাধ্যমে প্রযোজ্যেক্ষেত্রে লিঙ্গের আকার স্থায়ীভাবে বাড়ানো সম্ভব। শুধুমাত্র অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনেই এ চিকিৎসা প্রয়োগ করতে হয়। যেসব শিশুর জন্মলগ্ন থেকেই ছোট আকৃতির লিঙ্গ থাকে তারা হরমোন থেরাপিতে ভালো ফল পায়। আবার যেসব যুবক পুরুষের লিঙ্গের আকার সংকুচিত অবস্থায় ১.৫ ইঞ্চি বা উত্থিত অবস্থায় ৩ ইঞ্চির নিচে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় সার্জারির মাধ্যমে লিঙ্গের আকৃতি বড় করা হয়। 
৬. ভোরবেলা লিঙ্গ উত্থান কি স্বাভাবিক?
-আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একজন মানুষের গড়ে ১১ বার লিঙ্গ উত্থান ঘটে। রাত্রে শুধু ঘুমের মধ্যেই ৪ থেকে ৫ বার উত্থান ঘটে। প্রতিটি উত্থান সাধারণত ২০ থেকে ৩০ মিনিট স্থায়ী থাকে। এটা শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেহেতু লিঙ্গে কোনো হাড় বা মাংসপেশি নেই, তাই লিঙ্গকে কর্মক্ষম রাখার জন্য শরীর নিজে থেকেই এ প্রক্রিয়া চালু রাখে। বয়স ও হরমোনের তারতম্যভেদে এ সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। কিছু কিছু ওষুধ ও অনিদ্রা এ ক্ষেত্রে সরাসরি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৭. হাড়ের মতো লিঙ্গেরও কি ফ্র্যাকচার হয়?
-আমরা জানি লিঙ্গে হাড় বা মাংসপেশি নেই, এটা পুরোপুরি ৩টি স্পঞ্জি টিস্যু দ্বারা গঠিত ৩টি সিলিন্ডার মাত্র। তবে প্রতিটি সিলিন্ডারের শক্ত আবরণ থাকে। উত্থিত অবস্থায় প্রতিটি সিলিন্ডার রক্তে পরিপূর্ণ থাকে। যদি এ সময় লিঙ্গ শক্তভাবে বাঁকানো হয়, তবে লিঙ্গ সশব্দে ভেঙে যেতে পারে। এক্ষেত্রে রক্ত আবরণী ভেদ করে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করে। 
৮. লিঙ্গ কতোক্ষণ উত্থিত অবস্থায় থাকে?
-সাধারণত কয়েক মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত। অস্বাভাবিক লিঙ্গ উত্থানের একটি মেডিকেল কন্ডিশন হলো ‘চৎরধঢ়রংস’. এ রোগে লিঙ্গ উত্থিত অবস্থায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। এটা একটি ভয়ানক রোগ এবং সঠিক সময় চিকিৎসা না করা হলে লিঙ্গের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে । 
৯. যৌনক্রিয়ায় একবার বীর্যপাত হয়ে গেলে আবার লিঙ্গ উত্থানের জন্য কতটুকু সময় প্রয়োজন?
-এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টাও লাগতে পারে। উঠতি বয়সী যুবকদের খুব একটা সময় না লাগলেও ৩০-এর অধিক বয়সী পুরুষের বেশ সময় লাগে। আবার অনেকের দ্বিতীয়বার লিঙ্গ উত্থান নাও হতে পারে। ৪০-এর অধিক বয়সী পুরুষের প্রায় ক্ষেত্রেই আবার উত্থানের জন্য ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার প্রয়োজন হয়। আবার এটাও মনে রাখা উচিত যে, যেসব রোগে রক্ত নালীতে কোলেস্টেরল জমে যেমন করোনারি হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস রোগ হয়, একইভাবে লিঙ্গস্তিত রক্তনালীতেও কোলেস্টেরল জমে উত্থানজনিত যৌন সমস্যার উৎপত্তি হতে পারে। তাই যৌন সমস্যাকে শুধু লিঙ্গের সমস্যা না ভেবে পুরো শরীরের সমস্যা ভাবা উচিত।
১০. পর্নো ছবিগুলোতে যা দেখানো হয়, তা কতোটুকু বাস্তবসম্মত?
-একটা কথা মনে রাখতে হবে, পর্নো এবং সেক্স একই জিনিস নয়। পর্নো ছবিগুলোতে যেসব দীর্ঘ লিঙ্গসম্পন্ন পুরুষদেরকে নির্বাচন করা হয়, তারা ৯৫ ভাগ সাধারণ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করে না। যৌনক্রিয়ার যেসব পদ্ধতি দীর্ঘ সময় নিয়ে দেখানো হয়, তাও অবাস্তবিক এবং অবৈজ্ঞানিক। উদাহরণস্বরূপ, জিহ্বা দিয়ে যৌন লেহনের কথাই ধরা যেতে পারে। শরীরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর জীবাণু থাকে যৌনাঙ্গ ও মুখগহ্বরে। যৌনাঙ্গ থেকে কোনো কোনো জীবাণু মুখগহ্বরে কঠিন রোগের সৃষ্টি করতে পারে। যৌনাঙ্গের ভাইরাল ওয়ারট মুখের আশপাশের সংক্রামিত হয়ে যাওয়ার অনেকগুলো কেস স্টাডি রয়েছে। আবার অতিরিক্ত যৌন লেহনের ফলে সেক্স পার্টনারদের মধ্যে কারও যৌনতৃপ্তি হয়ে গেলে ওর জন্য পরবর্তী যৌনক্রিয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তাই কখনোই পর্নোকে স্বাভাবিক যৌনতার সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। 
লেখক: (চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ) জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। 
চেম্বার: ১২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট। ফোন-০১৭১২-২৯১৮৮৭

পাঠকের মতামত

Bhat Ekta vala report printer jonno thanks...very good health Info. Thanks Dr

Roy
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ৩:৫৩ অপরাহ্ন

অনেক সুন্দর একটি শিক্ষনীয় পোস্ট, যা অনেককে অন্ধকার গল্পকে বুঝতে সহায়ক করবে আর বাস্তবতাকে বুঝতে পারবে।

YOUSUF KUWAIT
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৭:৩৯ পূর্বাহ্ন

ধন্যবাদ মানব জমিনকে তথ্য সমৃদ্ধ প্রবন্ধের জন্য।

মুস্তাকিম
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৪:৪০ পূর্বাহ্ন

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status