ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মগবাজারে স্কুলের সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, আহত ৫

স্টাফ রিপোর্টার
২৫ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার
mzamin

ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার একটি স্কুলের সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ একটি ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ জন। গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটে ওয়্যারলেস  গেটের পেছনের ১০/এ/১ বড় মগবাজারে। যে ভবনটির সামনে বিস্ফোরণ হয়েছে তার নিচতলার এক পাশে একটি ফার্মেসি রয়েছে।  ভবনের নিচতলা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় একটি স্কুল এবং এর উপরে একটি মহিলা হোস্টেল রয়েছে। পাশের ভবনেও আরেকটি স্কুল রয়েছে। রহস্যজনকভাবে ময়লার ড্রাম থেকে বিস্ফোরণটি হওয়ায় ওই ভবনের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও আশেপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিস্ফোরণের আঘাত ভবনের চারতলা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন।

বিজ্ঞাপন
ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করেন আলামত। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে যেটি বিস্ফোরণ হয়েছে সেটি কতোটুকু শক্তিশালী। সেটি ককটেল না অন্যকিছু। তবে বিস্ফোরণের ধরন দেখে গোয়েন্দারা এটিকে মোটেও স্বাভাবিক কিছু মনে করছেন না। ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে বড় পরিকল্পনা ছিল।  বিস্ফোরণে আহত পাঁচজন হলেন- প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম (৩৬), ডিপিডিসি’র শ্রমিক মো. তারেক (২০), মো. শাহিন (৩০), আবুল কালাম (২৫) ও আতিবুর রহমান (১৬)। এদের মধ্যে আতিবুর বেশি আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম ছিন ইউনিট। তারা আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।

  রমনা কিড্‌স কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পিয়ন আবদুল আওয়াল বলেন, বিস্ফোরণের সময় তিনি স্কুলের সামনে চেয়ারে বসে মোবাইল চালাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার পর একটি ছোট ছেলে এসে ড্রামের ঢাকনা খোলে। তখনই সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। সাদা ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফার্স্ট ফার্মা লিমিটেড নামে দোকানটি। আমরা ভয়ে স্কুলের ভেতরে চলে আসি। পরে কর্তৃপক্ষ দ্রুত স্কুল ছুটি দিয়ে দেয়। সেন্ট মেরিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কেয়ারটেকার পলাশ বলেন, কেজি থেকে ও লেভেল পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুলটিতে পড়াশোনা করে। কেয়ারটেকার পলাশ আরও বলেন, ড্রামটি স্কুলের নয়। ৯ মাস আগে ফার্মেসিটির কাজ চলার সময় ড্রামটিতে পানি রাখা হতো। ফার্মেসি চালু হওয়ার পর স্কুলের প্রবেশ মুখের গেটের পাশে রাখা হতো। সেটি খালি অবস্থাতেই পড়েছিল সেখানে। এ জন্য জায়গাটা পরিষ্কার করার জন্য গতকাল সকাল ৯টার দিকে বাইরে নিয়ে রাখি। ঢাকনা লাগানো থাকলেও তখন ড্রামটি খালি ছিল বলে মনে হয়েছে। এরপর ড্রাম থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে দেখে অবাক হয়েছি।  মেট্রো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ম্যানেজার আব্দুস সালাম বলেন, সকাল ৮টার দিকে আমরা দোকান খুলেছি।

 সাড়ে ৯টার পরে পাশের ফাস্ট ফার্মার সামনে একটি ময়লার ড্রাম রাখা ছিল। ফার্মেসির কর্মীরা শাটার খোলার আগে ময়লার ড্রাম দেখে আমাকে সরানোর জন্য বলে। তখন আমি পাশের ভাঙ্গারির দোকানের আতিবুরকে ডেকে সেটি নিয়ে যেতে বলি। সে এসে ড্রামে কী আছে দেখতে গিয়েই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ফাস্ট ফার্মার স্টাফ বিলাস ভৌমিক বলেন, আমি দোকান খুলতে এসে দেখি ময়লার ড্রাম দোকানের সামনে রাখা। দোকানের সামনে ময়লার ড্রাম খারাপ দেখাবে তাই আমি পাশের দোকানের ম্যানেজারকে সেটি সরানোর জন্য বলি। কারণ তারাই এই ভবনের দায়িত্বে রয়েছেন। পরে তারা ড্রামটি সরিয়ে নেন। আমি তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে ঝাড়ু দিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই বিস্ফোরণ হয়।  আহত সাইফুল ইসলাম বলেন, তার বাসা বাসাবো এলাকায়। মগবাজারের অগ্রণী এপার্টমেন্টে কাজ ছিল তার। অফিসের উদ্দেশ্যে সকালে বাসে করে মগবাজার ওয়্যারলেসে যান। তারপর সেখানে নেমে ঘটনাস্থলের পাশের রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলের কাছে আসার পরপরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তখন তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। শরীর থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। আহত শহীদ বলেন, ঘটনাস্থলের পাশেই ডিপিডিসি’র মাটিকাটার লেবার হিসেবে কাজ করছিলেন। তখন হঠাৎ করেই বিস্ফোরণ হয়। এতে তার শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

  ডিএমপি’র রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার বায়েজীদুর রহমান বলেন, ড্রামটি ফুটপাথের পাশে ছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, স্কুলটি বন্ধ ছিল কিছুদিন। তাই বেশ ময়লা আবর্জনা জমেছিল। ওই ড্রামটিতে শুকনা ময়লা ফেলা হতো। তাই ড্রামটি সরানোর জন্য কেয়ারটেকারকে বলা হয়। কেয়ারটেকার পলাশ ড্রামটি সরিয়ে ফার্মেসির সামনে রেখেছিল। পরে ড্রামটি ভাঙারির দোকানের একজন সরিয়ে তার ভেতর কি আছে দেখতে গিয়ে বিস্ফোরণ হয়। আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। এখন তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা বের করা হবে।  ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন-অর রশীদ বলেন, বিস্ফোরক দ্রব্যটি ময়লার একটি প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে ছিল। ভেতর থেকে ময়লা বের করার সময় সেটি বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে স্প্লিন্টারও পাওয়া গেছে। কী উদ্দেশ্যে ওই বিস্ফোরক এখানে রাখা হয়েছিল আমরা সেটা বের করার জন্য কাজ করছি। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে এসেছিল, তারা স্প্লিন্টারগুলো আলামত হিসেবে নিয়ে গেছে। 

প্লাস্টিকের ড্রামটিতে বোমা ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ময়লার ড্রামটিতে শক্তিশালী বিস্ফোরণ হয়েছিল এবং ঘটনাস্থলে অসংখ্য স্প্লিন্টার পাওয়া গেছে। এই বিস্ফোরণে চার জন মানুষও আহত হয়েছেন। একটা স্কুলের সামনে এটা কেন রাখা হয়েছিল সেটা আমরা বের করার চেষ্টা করছি।  কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ড্রাম থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য ফেলে দেয়ার সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে চার জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দু’জন পথচারী। বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল টিম আসে ও আলামত সংগ্রহ করেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, আগে থেকেই ড্রামের ভেতরে যে কেউ বিস্ফোরকটি রেখে দিয়েছিল।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status