প্রথম পাতা
আকস্মিক অন্ধকারে পাকিস্তান
মানবজমিন ডেস্ক
২৪ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবারআকস্মিক অন্ধকারে পাকিস্তান। ট্রান্সমিশন লাইনে ত্রুটির কারণে সোমবার রাজধানী ইসলামাবাদ, বন্দরনগরী করাচি সহ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল অন্ধকারে ছেয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সব রকম কর্মকাণ্ড। চার মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো এমন ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ইসলামাবাদ ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (আইইএসসিও)-এর এক মুখপাত্র বলেছেন, তাদের ১১৭টি গ্রিড স্টেশন বিদ্যুৎহীন ছিল। গতকাল করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, পেশোয়ার এবং কোয়েটা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ন্যাশনাল ইলেকট্রিক পাওয়ার রেগুলেটরি অথরিটি (নেপ্রা) বিবৃতিতে বলেছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডেচপাচ কোম্পানিকে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে নির্দেশনা দিয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২১ এবং ২০২২ সালে একই রকমভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জরিমানা করেছিল। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য তারা নির্দেশনা ও সুপারিশ দিয়ে যাচ্ছে বলেও বলা হয়। তবে বিদ্যুৎ বিষয়ক মন্ত্রী খুররম দস্তগীর স্থানীয় সময় গতরাত ১০টার মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার আশা করেন।
মন্ত্রী দস্তগীর দাবি করেন, তারবেলা এবং ওয়ারস্যাকের কিছু গ্রিড স্টেশন মেরামতে কাজ চলছিল। পেশোয়ার ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (পিইএসসিও) এবং আইইএসসিও’র কিছু গ্রিড এরই মধ্যে পুনঃমেরামত করা হয়েছে। সেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। করাচিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ওই বন্দরনগরীতে বিষয়টি খুব জটিল। কারণ, এর আছে একটি পূর্ণাঙ্গ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। আমরা নিয়মিতভাবে প্রায় ১০০০ থেকে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে থাকি কে-ইলেকট্রিককে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা পুনঃস্থাপন করা হবে বলে দাবি করেন তিনি। তবে সমস্যা সমাধানে কতোক্ষণ সময় লাগবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না। আমার টার্গেট হলো ১২ ঘণ্টার মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপন।
বিকালের দিকে মন্ত্রী টুইট করে বলেন, ইসলামাবাদ, পেশোয়ার, কোয়েটা, মুলতান এবং শুকুরের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোতে আংশিক বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। ওদিকে কে-ইলেকট্রিকের মুখপাত্র ইমরান রানা বলেছেন, স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৭টা ৩৪ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে ফ্রিকোয়েন্সি পড়ে যায়। এর ফলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। এ কারণে কে-ইলেকট্রিকের নেটওয়ার্কে বড় বিভ্রাট দেখা দেয়। করাচিতে তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া যায়নি। তবে কে-ইলেকট্রিকের নেটওয়ার্ক নিরাপদ ও সুরক্ষিত আছে। আমাদের টিম সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি মনিটরিং করছে। কোয়েটা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির মতে, কোয়েটা সহ বেলুচিস্তানের ২২টি জেলা ছিল অন্ধকারে।
গত বছর অক্টোবরে করাচি, হায়দরাবাদ, শুকুর, কোয়েটা, মুলতান এবং ফয়সলাবাদে একইভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। ওই সময় বিদ্যুৎ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছিলেন, প্রায় ৮০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। তখন মন্ত্রী দস্তগীর বলেছিলেন, দুটি বিদ্যুৎ লাইনে পর পর ত্রুটির বিষয়টি উদ্বেগের। তখন ইনডেপথ তদন্ত ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
৯ বছরের মধ্যে পাকিস্তানে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণ নেটওয়ার্ক বড় আটটি বিভ্রাটের শিকার হয়েছে। ঘনকুয়াশার কারণে তারবেলা পাওয়ার স্টেশনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় ২০১৪ ও ২০১৭ সালে দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গুড্ডু পাওয়ার প্ল্যাটে ত্রুটির জন্য ২০১৫, ২০১৮, ২০১৯, ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে বলে জানানো হয় রিপোর্টে।