ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
২২ মে ২০২২, রবিবার
mzamin

সপ্তাহ খানেক ধরে চলমান বন্যায় সুনামগঞ্জের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। দিন দিন বাড়ছে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট রয়েছে বন্যাকবলিত এলাকায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।  গতকাল থেকে জেলার সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি বেড়েছে শান্তিগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে। জগন্নাথপুর এলাকার চিলাউড়া-হলদিপুর, রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও এই ৩টি ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেছে।

 এলজিইডি সূত্র জানায়, পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কয়েকটি সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রাথমিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক ও নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়কের কয়েকটি স্থানে ভেঙে ভেসে গেছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা টিটো দাস বলেন, তাহিরপুর-নিয়ামতপুর সড়কটি এমনিতেই ভাঙাচোরা। গত কয়েকদিনের বন্যায় সড়কটি বিভিন্ন স্থানে ধসে গেছে। পানি কমলে এই সড়ক দিয়ে যোগাযোগ কঠিন হয়ে যবে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরে বাসাবাড়ির পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে, তবে ড্রেনেজ সমস্যার কারণে পানি দ্রুত নামছে না বলে দাবি করেছেন বাসিন্দারা। শহরের নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা অঞ্জন রায় বলেন, ‘হাওরের পানি শহরে চলে আসলেও স্থির হয়ে থেকে যায়। এটার মূল কারণ সুনামগঞ্জের পৌর শহরের সবগুলো ড্রেন ময়লায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ। আর এখন এই ময়লা পানির সঙ্গেই ২ দিন ধরে আছি। শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা দেব সুজন বলেন, ‘বন্যার পানির সঙ্গে তিনদিন ধরিয়া আছি। অনেক কষ্ট করি কাম কাজও যাওয়া লাগের।’ সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৬মি.মি।

 সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা ছাতক ও দোয়ারাবাজারের হাজার হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছে। দুটি উপজেলার সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। আমি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ করছি। জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জেলায় ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ছাতক ও দোয়ারার বন্যার্ত পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এই দুই উপজেলায় ৪০ টনসহ জেলার ১১ উপজেলায় ১৪০ টন চাল, ১২ লাখ টাকা এবং ২ হাজার বস্তা শুকনা খাবার বিতরণের জন্য দেয়া হয়েছে।

নদী খননের দাবি
ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জির পাদদেশের জেলা সুনামগঞ্জকে নিরাপদ রাখতে নদী খনন ও পৌর শহরের সুরমা নদীর তীরে বেড়ীবাঁধ কাম ওয়াকওয়ে নির্মাণের দাবি উঠেছে। সীমান্তের এপারে ও ওপারে বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাত হলেই সুনামগঞ্জ শহর প্লাবিত হয়। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা থেকে মুক্তির জন্য নদী খনন এর বিকল্প নেই।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালী কৃষ্ণ পাল বললেন, হালুয়ারঘাট থেকে বড়পাড়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার অংশে সুরমা নদী সংরক্ষণ ও বেড়ীবাঁধ কাম ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে পৌরসভার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। 
সুনামগঞ্জ পৌরসভা মেয়র নাদের বখ্‌ত বললেন, এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নের জন্য কতৃর্পক্ষের কাছে ধরণা দিচ্ছি আমরা। নদী খননের সমীক্ষার সময় প্রকল্পটিকে যুক্ত করার চেষ্টা করবো আমরা।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status