প্রথম পাতা
ভারতে পণ্য যাবে রেলে
মিজানুর রহমান
২১ মে ২০২২, শনিবার
ট্রেনযোগে ভারতে পণ্য রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্রুত এ বিষয়ে পরীক্ষামূলক চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ নিয়ে ঢাকা-দিল্লি আলাপ-আলোচনা চলছিল। সর্বশেষ গত মার্চে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় উভয়পক্ষ রেলওয়ে অবকাঠামো, বন্দর অবকাঠামো, ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির উপর একটি যৌথ সমীক্ষা এবং মাল্টি মোডাল পরিবহনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়। গত ১৭ই মে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্যাক্স অ্যান্ড কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান রেল পরিষেবার আওতায় ভারতীয় পণ্য খালাসের পর খালি হওয়া কন্টেইনারগুলো বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে তাদের পণ্য পরিবহন করতে পারবে। বৃটিশ শাসনামলে এই দুই ভূখণ্ডের মানুষে-মানুষে যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহনে রেল পরিষেবা চালু ছিল। নানা কারণে দীর্ঘ সময় ওই রেলরুটগুলো বন্ধ ছিল। ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্রমউন্নতির ধারাবাহিকতায় সেই রেল লিঙ্কগুলোও সচলের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ও বিরল-রাধিকাপুর পুরোপুরি সচল। এর মধ্যে দর্শনা-গেদে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) রুট-১, রহনপুর-সিংগাবাদ টিএআর-২ রুট হিসেবে চিহ্নিত। ওই দু’টি রুট ব্যবহার করেই ট্রেনে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি হয়। নতুন আদেশের ফলে এখন ভারতীয় পণ্য খালাসের পর ফিরতি ট্রেনে বাংলাদেশি পণ্যও ওই দু’টি রুটে ভারতে রপ্তানি হবে। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) ওই আদেশ বা নির্দেশনা জারি করেছে। কর কর্তৃপক্ষের শর্ত হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে রেলপথে সিল করা কন্টেইনারে পণ্য পাঠাতে হবে। উভয়ের জন্য লাভজনক ওই সিদ্ধান্তের কারণে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতের আমদানি ব্যয় অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কর কর্তৃপেক্ষর আদেশ মতে, শুল্ক স্টেশনে ইলেকট্রনিক ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পণ্য এবং ট্রেনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। যাতে কোনো অবৈধ বা অনুমোদনহীন পণ্য প্রবেশ করতে না পারে। উল্লেখ্য, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বহু আগেই। তবে এতোদিন বাংলাদেশে আসা কন্টেইনারগুলো খালি অবস্থাতেই ফিরে যেতো। ট্রেড ফ্যাসিলিটেটর ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এজন্য বাংলাদেশের দুর্বল নেগোসিয়েশন এবং আমদানিযোগ্য পণ্যের অভাবকে দায়ী করতেন। স্মরণ করা যায়, করোনা মহামারিকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কন্টেইনার ট্রেন সার্ভিস জোরদার হতে শুরু করে, যা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সরকার বর্তমানে অন্য দুই প্রতিবেশী দেশ ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যকে চাঙ্গা করতে ক্রস-বর্ডার রেলপথ সংযোগকে নতুন করে চালুর পথ খুঁজছে।