শরীর ও মন
অটিজম শিশুর অভিভাবকদের করণীয়
ডা. এম এ হক, পিএইচ.ডি
১০ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার
অটিজম শব্দটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর পিতা-মাতার কষ্টের কথাও আমরা জানি। শিশু অটিজমে আক্রান্ত জানার পর পিতা-মাতার আনন্দ যেন মুহূর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। অটিজম শিশুর পরিবারকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে অভিভাবকদের করণীয় সম্পর্কে আজকের আলোচনা।
অভিভাবকদের করণীয়:
আপনার শিশু অটিজমে আক্রান্ত শুনে ভেঙে পড়বেন না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে শান্ত ভাবে করণীয় সম্পর্কে চিন্তা করুন। শিশুর সমস্যাগুলো শনাক্ত করুন। সমস্যা সমাধানের উপায় চিন্তা করুন। এ ধরনের শিশুর অভিভাবকদের সঙ্গে পরিচয় থাকলে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এদের মধ্যে যদি কারও সন্তানের উন্নতি হয়েছে বলে জানতে পারেন তাহলে কোথা থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন? কোথা থেকে থেরাপি নিচ্ছেন? কোথায় লেখাপড়া করে? খাবারের রুটিন কি? এসব তথ্যসমূহ জেনে নিন। যদি কারও সন্তান হাইপার থাকে তাহলে তার বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করুন।
অভিভাবকদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, “অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার” এক ধরনের “নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার”।
চিকিৎসা:
অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা সম্পর্কে বলা হয়, ‘এর ভালো কোনো চিকিৎসা নেই’; অথচ হোমিওপ্যাথিতে অটিস্টিক শিশুদের ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে। নির্ভরযোগ্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাসেবা থাকতে শিশুকে বিনা চিকিৎসায় রাখা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ সমস্যায় শুধু থেরাপি এর কতোটুকু উন্নতি করতে পারে? থেরাপির প্রয়োজন চিকিৎসার সহযোগী হিসেবে; মূল চিকিৎসার ভূমিকা থেরাপি পালন করতে পারে না। বিভিন্ন ধরনের জটিল মানসিক রুগী হোমিওপ্যাথিতে ভালো হয় একথা সকলেই জানেন। ‘অটিস্টিক শিশুদের’ সমস্যা যেহেতু ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ সেহেতু প্রয়োজন ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট’ চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। চিকিৎসা শুরুর পর রোগীর মানসিক উন্নতি হলে, পূর্বে তুলনায় মনোযোগী এবং নিজের কাজ নিজে করার আগ্রহ তৈরি হলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। তবে, একথা স্মরণ রাখতে হবে এই পরিবর্তন প্রথমদিকে ধীরে ধীরে হয়। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলা মুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় আমি রোগীর ‘মায়াজমের’ দিকে খেয়াল রেখে প্রধানত থুজা, মেডোরিনাম, সিফিলিনাম, টিউবারকুলিনাম, কার্সিনোসিন, হাইড্রোফোবিনাম, সোরিনাম, সালফার, ক্যালকেরিয়া-কার্ব, ক্যালকেরিয়া-ফস, ক্যালকেরিয়া-ফ্লোর, কস্টিকাম, বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, মার্কসল, ন্যাট্রাম-মিউর, ন্যাট্রাম-সালফ ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করি। এ ছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ব্যায়াম শিখিয়ে দেই যা মস্তিষ্কের নিউরোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হয়। অটিস্টিক শিশুদের আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই হচ্ছে।
সর্বোপরি, পরিবার, আত্মীয়-পরিজন, সমাজ, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সকলের সহযোগিতায় অটিস্টিক শিশুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
লেখক: পিএইচ.ডি (স্বাস্থ্য), এম.ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। জটিল ও দুরারোগ্য রোগীর অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষক।
চেম্বার-১: হক হোমিও ক্লিনিক, বাসা নং-৫৩, রোড নং-২, মোহাম্মাদী হাউজিং লিঃ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
চেম্বার-২: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্র্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০ ৩১০