ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

পুলিশ-জামায়াত সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

স্টাফ রিপোর্টার
৩১ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার
mzamin

 বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাজধানীর মালিবাগ এলাকাসহ পৃথকস্থানে গণমিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট  ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ জামায়াতের ১১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। তারা হলেন- আব্দুস সোবহান (৭০) ও আল-আমিন (৩০)। বাকিদের নাম জানা যায়নি। পরে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ধরতে পুলিশ আশপাশের সড়কে ও গলিতে অভিযান চালায়। এতে পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন
পুলিশ দাবি করেছে, জামায়াত পুলিশের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেছে। এতে ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তাদের রাজারবাগ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে জামায়াত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, পুলিশ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল করার জন্য গতকাল পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু, পুলিশ তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। অনুমতি না পাওয়ায় তারা সেখান থেকেই মিছিল করতে পারে বলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা ছিল।

জামায়াত মিছিল বের করতে পারে এমন আশঙ্কায় সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। ওই এলাকায় প্রায় ৭ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করে। এমনকি গলিতেও পুলিশের সাদা পোশাকে তল্লাশি টিম অবস্থান করে। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে পূর্বঘোষিত ‘গণমিছিল’ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। প্রায় কাছাকাছি সময়ে জামায়াতও ‘গণমিছিল’ করে, যেখানে দলটির আমীরের মুক্তি, দেশে ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা’সহ ১০ দফা দাবি জানানো হয়। 

বায়তুল মোকাররমে তারা মিছিল না করে রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় মিছিল বের করে। জুমার নামাজের পরেই জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মালিবাগের হোসাফ টাওয়ারের পাশের মসজিদ থেকে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি কিছুদূর এগিয়ে গেলে পুলিশ দলটির ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, পরে দলটির নেতাকর্মীরা পুলিশের কাছে ব্যানারটি ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন। ব্যানার ছিনিয়ে নিতে আসা পুলিশ সদস্যকে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুনরায় ব্যানার নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা মৌচাকের দিকে এগিয়ে যায়। ওই মিছিলটি কিছুদূর যাওয়ার পরেই ফ্লাইওভারের পাশে দাঁড়ানো পুলিশের সদস্যরা তাদের ব্যানার কেড়ে নেয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পুলিশ টিয়ার সেল ও রাবাব বুলেট মেরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে ওই এলাকা থেকে চলে যান দলটির নেতাকর্মীরা। 

মিছিল চলাকালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে  যে ১০ দফা দাবি করা হয়েছে সেই ১০ দফা জনগণের দফা। এই সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা জামায়াতের ওপর জুলুম- নির্যাতন চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে তারা জামায়াতে ইসলামীর আমীরকে গ্রেপ্তার করেছে। অবিলম্বে তাদের ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দিতে হবে। নইলে জনগণ কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের বিদায় নিতে বাধ্য করবে।   

ঘটনাস্থলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, রাজধানী ঢাকায় জামায়াতের কোনো মিছিল করার অনুমতি ছিল না। কিন্তু, তারা মালিবাগ মোড়ে হোসাফ টাওয়ারের সঙ্গের মসজিদে নামাজ শেষে জামায়াতের ব্যানারে  দলটির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। 

এদিকে, প্রায় একই সময় মালিবাগের রেলগেট এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত আরেকটি মিছিল বের করে। মিছিলটি খিলগাঁও তালতলায় গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের জনগণের ভোট ও ভাতের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশের জনগণের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামনের কাতারে থেকে জামায়াত জনগণকে সাথে নিয়ে দেশে ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ। জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে, জনগণের সমর্থন ও প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। 
তিনি আরও বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছিল জামায়াতের  নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিলে, মামলা-হামলা করে জামায়াতকে  শেষ করে দিবে। অথচ এতো বাধা ও প্রতিকূলতার মাঝেও জনগণ জামায়াতকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। জামায়াত বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক সংগঠন। অথচ সরকার জামায়াতকে স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দিচ্ছে না। কর্মসূচি পালনের জন্য বারবার আবেদন করার পরও প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুযোগ বা পরিবেশ না দেয়া চরম মানবাধিকার ও আইনের শাসনের চরম লঙ্ঘন বলে বিশ্বের সচেতন মহল মনে করে। গণমিছিল থেকে আমরা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর আ. ন. ম. শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া  গোলাম পরওয়ার, সহ-সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কারাবন্দি সকল সম্মানিত আলেম-ওলামাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। 

গণমিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি  দেলোয়ার হোসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম  হোসাইন, ড. মোবারক হোসাইন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান প্রমুখ। 

এদিকে, গতকাল দুপুরে পুরানাপল্টন এলাকায় সুরমা টাওয়ারের পাশে ব্যানার ছাড়াই কিছু লোকজন একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেখান থেকে ৩ জনকে আটক করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া। 

অপরদিকে, নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জামায়াত গতকাল গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠিয়েছে। বিবৃতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্র ঘোষিত ৩০শে ডিসেম্বরের গণমিছিল শান্তিপূর্ণভাবে সফল করায় আমি নগরবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ পৃথক পৃথকভাবে গণমিছিলের আয়োজন করে। পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ এই মিছিলে সরকার বাধা দিয়ে গণতান্ত্রিক  অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি, জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী। আমরা লক্ষ্য করেছি, জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু হওয়ার পর কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ বাধা দেয় এবং মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের উস্কানি সত্ত্বেও জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হলো জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা। কিন্তু, তা না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা সৃষ্টি করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে এবং সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করছে এবং জামায়াত হামলা করেছে বলে মিথ্যা অপবাদ রচনা করছে। জামায়াত কখনো হামলা সংঘাতের রাজনীতি করে না। 

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জামায়াত একটি বৈধ গণতান্ত্রিক-নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ব্যতীত প্রত্যেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করে এবং প্রত্যেক সংসদেই জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। প্রত্যেক আসনেই জামায়াত প্রার্থীগণ লক্ষাধিক ভোট পেয়েছেন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকেরই সভা-সমাবেশ ও মিছিল করার অধিকার আছে। এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করে আপনারা জনগণ ও সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। তিনি অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। সেই সাথে জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status