অনলাইন
নিয়ম লঙ্ঘন করে ওয়াসার কর্মচারীদের বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার
(১ বছর আগে) ১৭ মে ২০২২, মঙ্গলবার, ৫:৪৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:৩৯ অপরাহ্ন
অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের নামে কর্মী ছাটাই বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। মঙ্গলবার ওয়াসা ভবনের সামনের সড়কে এ বিক্ষোভ করেন তারা। গত ৪ঠা জুলাই ওয়াসার এক অফিস আদেশে বরখাস্ত হয়েছেন ড্রেনেজ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক। বিক্ষোভ শেষে মানববন্ধনে তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের মূল বিষয় দুইটি। এর মধ্যে আমাদের যে সমিতি আছে, সেখানে শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টের মাধ্যমে তা প্রমানিত হয়েছে। এই টাকা ফেরত চাই। যারা দূর্ণীতি করেছে, তাদের বিচার চাই। অন্যটি হচ্ছে, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার বিদ্যমান যে অর্গানোগ্রাম তা পরিবর্তন করতে চাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যা আমরা মেনে নিতে পারছি না।
মোজাম্মেল হক বরখাস্তের অফিস আদেশে দেখা যায়, সংস্থাটির চাকরি প্রবিধানমালা ২০১০ এর ৩৮ (খ) অনুয়ায়ী সংস্থাটির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের অনুমতি ব্যতিত গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের আগে ঘটনার প্রেক্ষিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ওয়াসা। কিন্তু তাকে সন্তুষ্ট হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা ওয়াসা চাকরি প্রবিধানমালা ২০১০ এর ৩৮ এর ক ও খ প্রবিধি অপরাধের অভিযোগে গত ২২ মার্চ সংস্থাটির রাজস্ব জোন-১ এর রাজস্ব পরিদর্শক মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। তিনিও যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ঢাকা ওয়াসার চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন ঢাকা ওয়াসার মিটার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে থাকা মো. মহিউদ্দিন আরিফ। নিয়ম অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা তার তিন মাসের বেতন অগ্রিম প্রদান করে ৫ জানুয়ারি তার অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করে। এর কিছুদিন পর আবার স্বপদে বহাল চেয়ে আবেদন করেন আরিফ। ২৫ মে ওয়াসা আরেক আদেশে জানায়, চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন প্রত্যাহারের বিষয়ে বিবেচনার কোন সুযোগ নাই।
মানববন্ধনে ওয়াসার কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে-জব সিকিউরিটি, পেনশন সুবিধাসহ বিদ্যমান সকল সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের নামে একজন কর্মীকেও চাকুরীচ্যুত করা যাবে না। ঢাকা শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঢাকা ওয়াসার সাংগঠনিক কাঠামো সম্প্রসারণ এবং যুগোপযোগী করার মাধ্যমে কর্মীদের কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি স্বত্ত্বাধিকার ও দায়বদ্ধতা না থাকায় আউটসোর্সিং ও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে । শূণ্যপদে নিয়মিত কর্মী নিয়োগ দিয়ে ওয়াসার কর্মশক্তি ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক যুগেরও অধিক সময় ধরে কর্মরত মাস্টাররোল কর্মীদের নিয়মিত করতে হবে।জ্যেষ্ঠতা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসার বিধি-বিধান যথাযথ অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ বিশেষ দুর্নীতিপ্রবণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের শিথিলতা প্রত্যাহার করে আইনের প্রয়োগ সবার জন্য সমানভাবে করতে হবে। আইনের আশ্রয় লাভের মৌলিক অধিকার সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে। কর্মচারীদের বদলী ও পদায়ন তাদের স্বার্থের অনুকূলে করতে হবে। কর্মরত অবস্থায় কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী মারা গেলে সরকারী বিধানমতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক জোরজবরদস্তিভাবে দখলকৃত ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ২০০ কোটি টাকার সম্পদ ও অর্থ সমিতির নির্বাচি কমিটিকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আইনসঙ্গত এবং যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত এবং ওএসডি হিসেবে থাকা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তাদের পদায়ন করতে হবে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, সমিতির আগের কমিটি থেকে দায়িত্ব গ্রহনের সময় সমবায় অধিদপ্তর ১৩২ কোটি টাকার হিসেব মিলাতে পারেনি। তখনকার সভাপতি মারা গেছেন। যার কারনে প্রকৃতি হিসেবে সমবায় অধিদপ্তর বের করতে পারেনি। কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী ব্যক্তিসার্থ আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন।
'ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ২০০ কোটি টাকার সম্পদ ও অর্থ সমিতির নির্বাচিত কমিটিকে বুঝিয়ে দিতে হবে' - কর্মচারীদের এমন দাবির বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে মোজাম্মেল বলেন, সমিতির বিষয়ে অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ১৩২ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বেশি হবে। যারা লুট করেছে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।
এনিয়ে ঢাকা ওয়াসার উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, সমবায় সমিতির জন্য কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে, বিষয়টা সে রকম না। যারা ওয়াসা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড ঘটিয়েছে। ওয়াসার আইন অনুযায়ীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সমিতির অর্থ লোপাটের বিষয়টি ওয়াসায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাকী দাবিগুলো ওয়াসা তার আইন অনুযায়ী মেনে চলছে বলে জানান তিনি।