ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

মলদ্বার বেরিয়ে আসা বা আলিশ রোগ

ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
৩০ নভেম্বর ২০২২, বুধবার
mzamin

মলদ্বরের এ রোগটি সকলের কাছেই বেশ পরিচিত। এ রোগে রোগীর পায়ুপথ মলদ্বার বাইরে বেরিয়ে আসে। বিশেষত মলত্যাগ করার সময় বাইরে ঝুলে পড়ে। এরপর নিজে থেকেই ভেতরে চলে যায়। অনেক সময় রোগী হাত দিয়ে এটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে এ রোগটিকে ডাকা হয়। 

কারণসমূহ 

এ রোগটি শিশু ও বৃদ্ধ বয়সে বেশি হয়। মধ্য বয়সী পুরুষ ও মহিলাদেরও হয়ে থাকে। শিশুদের সাধারণত তীব্র ডায়রিয়ার পর এ রোগ দেখা দেয়। তলপেটের বা পেলাভিসের কিছু গঠনগত সমস্যা এ রোগের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় পায়ুপথ বা রেকটাম অন্য মাংসপেশির সঙ্গে আঁকড়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু এ রোগীদের ক্ষেত্রে এর অভাব দেখা যায়। এ রোগে বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে মলত্যাগের অভ্যাসের অসঙ্গতি যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, মহিলাদের বন্ধ্যত্ব, রেকটামের সঙ্গে সন্নিহিত অস্থির দৃঢ় সংযুক্তির অভাব ইত্যাদি। মানসিক রোগীদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়।  

উপসর্গ 

রোগীরা বলে থাকেন তাদের মলদ্বার পায়খানা করার সময় অনেকখানি নিচে ঝুলে পড়ে এবং চাপ না দিলে ভেতরে যায় না। ওজন তুললে অথবা কাশি দিলেও কখনো কখনো বেরিয়ে আসে। সাধারণত রক্ত যায় না, তবে মিউকাস বা আম যায়। যখন পায়ুপথ বেশি ঝুলে পড়ে এবং ঢুকানো যায় না তখন রক্ত যেতে পারে। প্রায় অর্ধেক রোগী কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগী পায়খানা আটকে রাখতে ব্যর্থ হয়। কখনো কখনো ঝুলে পড়া অংশ চেষ্টা করেও ভেতরে ঢুকানো যায় না, অবস্থা আরও খারাপ হলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পচন ধরতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে জরায়ুও বেরিয়ে আসতে পারে এবং মূত্রথলিও ঝুলে পড়তে পারে, যার কারণে প্রস্রাবের অসুবিধা হতে পারে। দেখা যায়, এ রোগের শুরুতে রোগীরা বলেন, তাদের পায়ুপথ ভরা ভরা লাগে এবং ভেতরে কোনো চাকা বা মাংসের দলা রয়েছে বলে মনে হয়। অনেকক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে সমস্যা আরও বেশি মনে হয়। মলত্যাগ করতে বা বায়ু ত্যাগ করতে কিছুটা বাধা লাগে। পায়খানা করার পর পেট ক্লিয়ার হয়নি বলে মনে হয় এবং আঙ্গুল দিয়ে পায়খানা করতে হয়। কারও কারও মলদ্বারের চতুর্দিকে ব্যথা হয় যা নিতম্ব অথবা পায়ের দিকে বিস্তৃত হতে পারে। 

চিকিৎসা: 

এ রোগে আংশিক যে ক্ষেত্রে মিউকাস ঝিল্লি ঝুলে পড়ে এবং সম্পূর্ণ সেক্ষেত্রে পায়ুপথের প্রাচীরের সব স্তরসহ ঝুলে পড়ে। এ রোগ বা প্রোল্যাপস যে প্রকারেরই হোক এর চিকিৎসা অপারেশন। তবে কোনো রোগী যদি চিকিৎসার জন্য অনুপযুক্ত বিবেচিত হন বা অপারেশন করতে রাজি না হন, তাহলে কিছু রক্ষণশীল পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেমন- মলত্যাগের সময় মলদ্বার হাত দিয়ে চেপে উপরের দিকে রাখতে হয়, নিতম্ব দুটিকে টেপ দিয়ে আটকে রাখা, মলদ্বারের মাংসপেশির ব্যায়াম, রিং লাইগেশন পদ্ধতি ইত্যাদি। এ রোগের চিকিৎসায় বহু ধরনের অপারেশন পদ্ধতি চালু রয়েছে। কোনো কোনোটি মলদ্বারে করতে হয়, আবার কোনো কোনোটি পেট কেটে বা বর্তমানে সর্বাধুনিক প্রচলিত চিকিৎসকের মাধ্যমে করতে হয়। যাই হোক এ রোগ হলে শুরুতে চিকিৎসা নিবেন বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। 

ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার 

রোগটি নিয়ে সমাজে ভ্রান্ত ধারণা ও বিভিন্ন কুসংস্কার রয়েছে। বিশেষ করে এ রোগ হলে অনেকেই গোপন করেন। আবার এ রোগ নিয়ে  বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম প্রচার করতে অনীহা  প্রকাশ করে। যে কারণে শুধু সচেতনতার অভাবে রোগটি জটিল হয়ে মারাত্মক পায়ুপথের রোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে শুধু সচেতনতা ও চিকিৎসা নিতে লজ্জার ভয়ে বাংলাদেশে এর প্রকোপ বা আক্রান্তের হার বাড়ছে। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।  চেম্বার: ১৯ গ্রিন রোড, এ.কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা।  যোগাযোগ: ০১৭১২-৯৬৫০০৯

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status