শেষের পাতা
সিলেটে চিহ্নিত অপরাধী শুকুর পুলিশের খাঁচায়
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৫ নভেম্বর ২০২২, শনিবারঅপরাধের শেষ নেই আব্দুস শুকুরের। বন্ধু রিপনকে নিয়ে নগরের মুন্সিপাড়ায় গড়ে তুলেছে চোর সিন্ডিকেট। এক সময় তার নেতৃত্বে অসামাজিক কাজ হতো মুন্সিপাড়ায়। স্থানীয় কাউন্সিলর লায়েক আহমদের প্রচেষ্টায় সেই আস্তানা আর নেই। এখন মাদক বিক্রি ও চুরি তার পেশা। মুন্সিপাড়ার সেই পরিচিত শুকুর এবার গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের হাতে। সঙ্গে বন্ধু রিপনও। পরে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে সিলেট নগরে বাইকেল চুরির ঘটনা। তাদের আস্তানা থেকে চুরি হওয়া ৭টি বাইসাইকেল উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে রিপনের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় দেশীয় অস্ত্র।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা কোনো তথ্য দেয়নি। পরবর্তীতে দুই আসামিকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের প্রথমদিনই তারা পুলিশের কাছে বাইকের চুরির ঘটনা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার দু’টি বাসায় অভিযান চালিয়ে ৭টি বাইসাইকেল উদ্ধার করে। এছাড়া রিপন মিয়ার বাসায় অভিযানকালে পাওয়া যায় দেশীয় অস্ত্র। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৩টি রামদা, দু’টি চাকু ও একটি জিআই পাইপ। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানিয়েছেন- চুরি হওয়া বাইসাইকেল উদ্ধারে গিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হয়েছে। তিনি জানান- চোরাইকৃত বাকি বাইসাইকেলগুলো উদ্ধারে তৎপর রয়েছে পুলিশ। অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে- গ্রেপ্তার হওয়া আবদুস শুকুর চিহ্নিত অপরাধী। তার বিরুদ্ধে চুরিসহ নানা অপরাধে ৮টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময় এসব মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলা গত কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন- আব্দুস শুকুরের নেতৃত্বে সিলেট নগরের মুন্সিপাড়া এলাকায় চোর সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা মুন্সিপাড়া, মেডিকেল, রিকাবীবাজার, মীরের ময়দান সহ কয়েকটি এলাকায় চুরি ও ছিনতাই করে বেড়ায়। এক সময় নিজ এলাকায় পতিতা নিয়ে অসামাজিক ব্যবসা করতো আব্দুশ শুকুর। পরে স্থানীয় এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে সে পিছু হটে। বর্তমানে তার নেতৃত্বে একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা মেডিকেল এলাকা পর্যন্ত ইয়াবা বিক্রি করে। রিকাবীবাজার থেকে মেডিকেল পর্যন্ত এলাকার রাস্তার দু’ধারকে মেডিকেল জোন বলা হয়। বিকাল হলেই শ’শ’ রোগী ডাক্তার দেখাতে ওই এলাকায় যান। শুকুরের সিন্ডিকেট সদস্যরা মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল চুরি ছাড়া রোগী ও তার স্বজনদের টাকা পয়সা লুটে নেয়। স্থানীয় কয়েকজন ফার্মেসি মালিক জানিয়েছেন- বিকাল হলেই মেডিকেল রোডে রোগীর ভিড় বাড়ে।
সেই সঙ্গে বাড়ে ছিনতাই ও চুরির ঘটনা। একটি সিন্ডিকেট ওই এলাকায় চুরি করে বেড়ায়। কখনো তারা ধরা পড়েনি। কখনো কেউ আটক হলে ছাড়িয়ে নেয়া হয় দ্রুত। আব্দুস শুকুরের সহযোগী রিপনের নামেও ৭টি মামলা রয়েছে সিলেটের কোতোয়ালিসহ বিভিন্ন থানায়। এসব মামলাও চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের। আব্দুস শুকুর হচ্ছে তাদের অপরাধ সিন্ডিকেট প্রধান। আর রিপন হচ্ছে অস্ত্র সিন্ডিকেটের প্রধান। তার কাছে চুরি, ছিনতাই করার জন্য অস্ত্র মজুত থাকে। এ কারণে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ অভিযানের সময় রিপনের বাসা থেকে দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে। এবং রিমান্ডে থাকা রিপন স্বীকার করেছে এসব অস্ত্র দিয়ে তারা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটনায়। অভিযোগ আছে; স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশের তাদের সখ্য রয়েছে। এ কারণে অপরাধ করে মামলা হলেও তারা গ্রেপ্তার হয় না। সম্প্রতি ব্যস্ততম জিন্দাবাজার থেকে ১৬টি বাইসাইকেল চুরির ঘটনার পর পুলিশের টনক নড়ে। তদন্তকালে তাদের তথ্য পায় পুলিশ। এরপর তাদের গ্রেপ্তার হলে ঘটনা বেরিয়ে আসে।