প্রথম পাতা
সংবিধানের ৫০ বছর: সাক্ষাৎকার
সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার বিলুপ্ত হতে চলেছে
তামান্না মোমিন খান
৩ নভেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবারবাংলাদেশ সংবিধানের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে আগামীকাল ৪ঠা নভেম্বর। অর্ধশত বছরের এই পরিক্রমায় সংবিধানে কাটা-ছেঁড়া হয়েছে ১৭ বার। নাগরিকদের অধিকারের রক্ষাকবচ এই সংবিধান সময়ে সময়ে সংশোধন হয়েছে নাগরিকদের অধিকার আর সুরক্ষার কথা বলে। আদতে কী পরিস্থিতি এখন। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার কায়েমের লক্ষ্য নিয়ে প্রণীত সংবিধানের আলোকে আসলে মানুষ কতটা পাচ্ছে সেই অধিকার। এমন প্রশ্নে মানবজমিন-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম সদস্য, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তিনি বলেছেন, পঞ্চাশ বছর আগে যেভাবে সংবিধানকে তৈরি করা হয়েছিল সেটা এখনও রয়ে গেছে। সেদিক থেকে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। যেটা ঘটেছে তা হলো- আমাদের সমাজ পিছিয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমি প্রথম সাংবিধানিক দলিলে লিখেছিলাম, সেখানে তিনটি বিষয় হাইলাইট করেছিলাম সেটা হচ্ছে- সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার।
কারণ হচ্ছে- আমাদের পরিবার, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষা দিচ্ছে সেটা খুব ভঙ্গুর বলে মনে হয়। না আমাদের সমাজে, না আমাদের গৃহে না আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়গুলো শেখানো হয়। সাম্য, মানবিক সম্মান ও সামাজিক ন্যায়বিচার যখন দেখতে পাইনা তখন আমার খুব কষ্ট হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় আছে আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে। সংবিধানের এই লাইনগুলোর মধ্যে কিন্তু সবগুলো কথা বলা রয়েছে। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে এগুলো কার্যকর নেই। আমরা কি কখনও আমাদের সন্তানদের, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংবিধানের প্রস্তাবনাটা পড়িয়েছি। আমি চাই প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরুর আগে সংবিধানের প্রস্তাবনা পড়ানো হোক। স্কুলের পাঠ্য-বইয়ে সংবিধানের প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করা হোক। সংবিধান সংশোধন বিষয়ে আমীর-উল ইসলাম বলেন, সংবিধানে বার বার কাটাছেঁড়া হয়েছে। আমি মনে করি সংবিধানে সবচেয়ে বড় আঘাত করেছে সামরিক শাসকরা। অসাংবিধানিক উপায়ে তারা সংবিধান কাটা-ছেঁড়া করেছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং শাসন ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে কোনো কাজ হবে না। যদি না আমরা চারিত্রিক দিক দিয়ে পরিবর্তন আনতে না পারি।
প্রথম কথা হচ্ছে- অর্থ। নির্বাচন করতে গিয়ে কত অর্থ তারা ব্যয় করছে এবং সেটার মাধ্যমে তারা ভোট কেনা-বেচা করছে কিনা। এটার মূল জায়গা হচ্ছে রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিকদলগুলোই মনোনয়ন দেয়ার জন্য কত টাকা লেনদেন করছে। যখন আপনি ভোট দিতে যাচ্ছেন সেখানে ভোট কারচুপি হচ্ছে আবার ভোট ডাকাতিও হচ্ছে। ফলে নির্বাচন একটা কেনা-বেচার জায়গা হয়ে গেছে। এতে আমাদের গণতন্ত্র কলুষিত হচ্ছে। সংবিধানের কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধান মেনে চলাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সামরিক শাসনের মাধ্যমে আমাদের সংবিধান গণতন্ত্র সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তারপরও তো আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি। আমি আশাবাদী মানুষ সবাই সচেতন হলে গণতন্ত্রের চর্চা আমরা করতে পারবো। আমি আওয়ামী লীগের লোক ছিলাম সবসময়। বঙ্গবন্ধুর আর্দশে রাজনীতি করেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার সখ্য নেই। আওয়ামী লীগ তো এখন আর সেই আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এখন পরিবারতন্ত্র হয়ে গেছে। দলে দেয়ার মত আর কিছু নেই। বর্তমান আওয়ামী লীগের আদর্শ বলতে তেমন কিছু নেই। এখন অর্থ-সম্পদ গড়ে তোলাই বড় কথা।