বিনোদন
পরিবারকেন্দ্রিক নাটক কমছে
মিফতাহুল জান্নাত
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার
নাটক নির্মিত হয় প্রতিটি মানুষের বাস্তব চিত্র থেকে। যেখানে ফুটে ওঠে মানুষের বেঁচে থাকার বিচিত্র গল্প। থাকে সামাজিক, রাজনৈতিক, রোমান্টিক ও পরিবারের গল্প। তবে সমাজের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের পরিবারকেন্দ্রিক নাটকের গল্পগুলো। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, বর্তমান সমাজে পরিবার মানেই মা-বাবা, ভাই-বোনের থেকে বেশি কিছু মানেই অযথা ঝুট-ঝামেলা। বিয়ের দু’দিনের মাথায় নতুন বউ শুধু তার স্বামীকে নিয়ে আলাদা পরিবার গড়ার স্বপ্ন দেখে। যার কারণে ভেঙে যায় হাজারো সংসার। এমন চিত্র দেখা যায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। আর এসব গল্প থেকেই বানানো হচ্ছে নাটক। পরিবার কিংবা চরিত্র কম থাকার ফলে একঘেয়েমি চলে আসছে নাটকে। যার ফলে দর্শক হারাচ্ছে দেশীয় নাটক। বিষয়টি নিয়ে হাল সময়ের ব্যস্ত নির্মাতা সাগর জাহান বলেন, পরিবারকেন্দ্রিক নাটক কম হওয়ার অনেক কারণ। আমরা পাঁচ-ছয় বছর ধরে কমসংখ্যক শিল্পী নিয়ে নাটক বানাচ্ছি। কেন না, নাটক লেখার আগেই প্রযোজকরা বলে দেন কম শিল্পী নিয়ে নাটক বানাতে। তখন আর উপায় থাকে না। এক কথায়, আমাদের পৃথিবীটাকে ছোট করে দেয়া হচ্ছে। নাটকের হাত ভেঙে দেয়া হচ্ছে, গল্পগুলোকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমাদের মেধার কোনো অভাব নেই।
একটা বীজ বোনার পর যখন ছোট ছোট ডালপালা হতে থাকে তখনই যদি তা কেটে দেয়া হয়, বড় হতে না দেয়া হয় তাহলে গাছ ফল দেবে কীভাবে? আমাদের সৃষ্টির জায়গাটা উদার না, দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন যারা থাকলে বেশি বাজেট পাওয়া যায়। বিশেষ করে কিছু অভিনেতার কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে। যদি শুধু তাদের নিয়েই নাটক লিখতে হয় তাতে করে পরিবারের কথা ভাবা যায় না। এভাবে ভাবনাটাকে যদি ছোট করে দেয়া হয় তাহলে নায়ক-নায়িকা আর কিছু বন্ধু-বান্ধব ছাড়া আমরা আর কী বা ভাবতে পারবো! আমরা নাটকের মাধ্যমে মানুষকে মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করি। যেমন আমি ‘আরমান ভাই’- নাটকে বুঝিয়েছি একজন মানুষের শিক্ষিত হওয়াটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে পরিবারকেন্দ্রিক নাটক যতটা হওয়া দরকার ততটা হচ্ছে বলে মনে করেন আরেক ব্যস্ত নির্মাতা শিহাব শাহীন। তিনি বলেন, প্রতিটা চ্যানেলেই একটা-দুটো পরিবারকেন্দ্রিক সিরিয়াল হয়। তবে দর্শক না থাকায় সেগুলো একশ’ দুইশ’ পর্ব প্রচারের পর বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী তারকাকেন্দ্রিক নাটক বেশি হচ্ছে। পারিবারিক হলেও চ্যানেলের ডিমান্ড থাকে তারকাকে কেন্দ্র করে নাটক বানানোর। কেন না দর্শক তার পছন্দের তারকা না হলে নাটক দেখে না। তিনি আরও বলেন, তিন-চার জন শিল্পী নিয়ে নাটক বানানোর কারণ হলো বাজেট স্বল্পতা। একটা নাটক বানাতে আগে যে বাজেট দেয়া হতো এখনো একই বাজেট দেয়া হয়। যেমন আগে একটা নাটক বানাতে ছয় লাখ টাকা দেয়া হতো। এখন তার দশগুণ বাড়ানো উচিত। ছয় লাখের জায়গায় ষাট লাখ দেয়া দরকার। বাজেট একই যায়গায় রয়ে গেছে কিন্তু খরচ বেড়ে গেছে। যেখানে একটা শিল্পীকে তিন হাজার টাকা দেয়া হতো সেখানে ৭৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। একটা প্রোডাকশনে একশ’ দুইশ’ টাকা দেয়া হতো সেখানে ১২শ’ টাকা দিতে হয়। এতে পরিচালকের কোনো দায় নেই, পুরো দায় বাজেটের।