বিশ্বজমিন
হারেৎস পত্রিকার মন্তব্য প্রতিবেদন
ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর ওপর গুলি যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা বন্ধ করুন
মানবজমিন ডেস্ক
(১ দিন আগে) ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

ইসরায়েল কি গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে? এখন এ প্রশ্নের জন্য একটি নির্দিষ্ট উত্তর রয়েছে। তাহলো- যদি ইসরাইল অবিলম্বে খাদ্যসাহায্যের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষদের হত্যা বন্ধ না করে, তাহলে এটি নিঃসন্দেহে গণহত্যা করছে। গত কয়েক সপ্তাহে যা ঘটছে, তাকে গণহত্যা ছাড়া অন্য কিছু বলে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গণহত্যা, পরিকল্পিত গণহত্যা- গণহত্যা কেবল গণহত্যার জন্যই। অনলাইন হারেৎস পত্রিকায় মন্তব্য প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক গিদিওন লেভি।
তিনি আরও লিখেছেন, আজই যদি ইসরাইল এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে আর কোনো ‘সন্দেহের সুযোগ’ থাকবে না। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিটি) রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তারা এত দেরি করছে যে ভয় হয়, তাদের রায় আসার আগেই হয়তো গাজার অনেক ফিলিস্তিনি আর বেঁচে থাকবে না।
গাজা থেকে আসা অসংখ্য সাক্ষ্য ও ছবি আমাদের আর সন্দেহের সুযোগ রাখছে না। যদি কারো এখনও কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে, তবে নির হাসন, ইয়ানিভ কুবোভিচ ও বার পেলেগ-এর প্রতিবেদনে তা নিশ্চয়ই দূর হয়ে গেছে। ইসরাইলি সেনাদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- ক্ষুধার্ত জনতার দিকে গুলি চালাতে হবে।
এই জনতা সেখানে জড়ো হচ্ছে, কারণ ইসরাইল জাতিসংঘের অভিজ্ঞ ও নিবেদিত সংস্থাগুলোকে বিতাড়িত করে একটি রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর মার্কিন-ইসরাইলি সংস্থাকে খাদ্য বিতরণের দায়িত্ব দিয়েছে, যার মধ্যে ইভানজেলিক্যাল (ধর্মীয় মিশনারি) প্রবণতা রয়েছে। এই সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ২০ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষ প্রতিদিন মাত্র চারটি কেন্দ্রে দিনে এক ঘণ্টার জন্য খাদ্য পাবে। যেন তারা মার্কিন দূতাবাসের ভিসার লাইনে দাঁড়ানো মানুষ! কিন্তু ক্ষুধার্ত ও বেঁচে থাকার আশায় মরিয়া মানুষরা কখনোই সুশৃঙ্খল ধনীদের মতো আচরণ করবে না।
এই ‘মানবিক পরীক্ষা’ ব্যর্থ হয়েছে, এবং তখন ইসরাইলের ‘সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী’ সমাধান হিসেবে বেছে নিয়েছে বুলেট। কমপক্ষে ৫৪৯ জনকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার আহত হয়েছেন। তারা শুধু এক ব্যাগ ময়দা চাইছিলেন নিজেদের সন্তানদের জন্য। আইডিএফ কমান্ডাররা যে জায়গাগুলোকে ‘নিরাপদ’ বলেছিল, সেগুলো এখন ‘মৃত্যুর ফাঁদ’।
এই দৈনিক হত্যাযজ্ঞ ঘটছে তেল আবিব থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্বে, অথচ সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোনো উদ্বেগ বা প্রতিবাদ নেই। ইসরাইলের অনেক মানুষই গাজার বাসিন্দাদের আর মানুষ বলে মনে করে না, তাই তাদের কষ্টে সহানুভূতির প্রশ্নই ওঠে না। বিশ্বব্যাপী মানুষ হতবাক হচ্ছে যখন তারা দেখে, মর্টার ও ট্যাঙ্ক গান থেকে পালাতে গিয়ে মানুষ বালিতে হামাগুঁড়ি দিচ্ছে। কিন্তু এখন আর ইসরাইল ও তার সেনাদের জন্য সহানুভূতিও অবশিষ্ট নেই। প্রতিদিন শত শত নতুন যুদ্ধাপরাধীর জন্ম হচ্ছে, যারা ভবিষ্যতে আমাদের সমাজে ঘুরে বেড়াবে- তাদের মানসিক ও নৈতিক ক্ষত নিয়ে।
এই দোষ শুধু তাদের নয়, শুধু অবিবেচক সেনা কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইহুদা ভাচ-এরও নয়। তিনি নেতজারিম করিডোরকে মৃত্যুর জালে পরিণত করেছেন এবং একটি হাসপাতাল ধ্বংসের সন্দেহে অভিযুক্ত। এই দায়ভার পড়ছে সেনাপ্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর ওপর- যারা এই নীতিকে অব্যাহত রেখেছেন। তারা যদি আজই এটি বন্ধ না করে, তাহলে তারা নিজেরাই গণহত্যার সন্দেহভাজন অপরাধী হিসেবে পরিচিত হবেন।
একজন সেনা সদস্য হারেৎসকে বলেছেন, গাজা কোনো বিকল্প বাস্তবতা নয়। গাজা হচ্ছে আইডিএফ ও ইসরাইল রাষ্ট্রের আসল চেহারা। গাজায় যা ঘটছে, তা শুধু গাজাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। গাজায় যা ঘটছে, তাই আজ বিশ্বের কাছে ইসরাইলকে সংজ্ঞায়িত করছে। যেদিন ইসরাইলকে ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে, সেদিন ইসরাইলই একটি বিকল্প বাস্তবতায় পরিণত হবে।
পাঠকের মতামত
একজন সেনা সদস্য হারেৎসকে বলেছেন, গাজা কোনো বিকল্প বাস্তবতা নয়। গাজা হচ্ছে আইডিএফ ও ইসরাইল রাষ্ট্রের আসল চেহারা। গাজায় যা ঘটছে, তা শুধু গাজাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। গাজায় যা ঘটছে, তাই আজ বিশ্বের কাছে ইসরাইলকে সংজ্ঞায়িত করছে। যেদিন ইসরাইলকে ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে, সেদিন ইসরাইলই একটি বিকল্প বাস্তবতায় পরিণত হবে। 100% agreed.