ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বিশ্বজমিন

হত্যায় মেতেছে ইসরাইল

গাজায় ক্যাফে, স্কুল ও ত্রাণকেন্দ্রে হামলায় নিহত ৯৫

মানবজমিন ডেস্ক

(৫ ঘন্টা আগে) ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

mzamin

ইসরাইলের নৃশংসতা, দানবীয় রূপ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তারা কোনো আইনের তোয়াক্কা না করেই সাধারণ নীরিহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যায় মেতে উঠেছে। এর জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজে একে যুদ্ধাপরাধ ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও সেই রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করে নেতানিয়াহু বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। এমন অবস্থায় তার সেনাবাহিনী কার্যত গাজাকে পুরোপুরি দখল করে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে  সোমবার। সেখানে একটি ক্যাফে, একটি স্কুল ও খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রকে টার্গেট করে হামলা করে। এতে একজন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একটি হাসপাতালে হামলায় আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। সোমবারের এই হামলায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৬২ জন গাজা সিটি এবং এর উত্তরের এলাকার বাসিন্দা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয় উত্তরের গাজা সিটিতে সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত একটি ক্যাফে ‘আল-বাকা ক্যাফেটেরিয়া’য়। সেখানে ৩৯ জন নিহত হন। আরও বহু মানুষ আহত হন। নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাত্তাব ছাড়াও বহু নারী ও শিশু রয়েছেন। তারা ওই ক্যাফেতে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরীফ বলেন, আমরা ছিন্নভিন্ন লাশ খুঁজে পেয়েছি। এই জায়গার কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক সংযোগ ছিল না। এটি ছিল শিশু-সহ বহু মানুষের একটি মিলনস্থল। আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, বহু উদ্বাস্তুর জন্য এটি ছিল ওই অঞ্চলে কিছুটা আশ্রয়ের মতো, তপ্ত তাঁবু থেকে সাময়িক স্বস্তি পাওয়ার জায়গা। হামলায় বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে রক্তের দাগ মাটিতে লেগে আছে।
সোমবারই ইসরাইলি বাহিনী গাজা সিটির ‘ইয়াফা স্কুল’-এ বিমান হামলা চালায়। সেখানে শত শত উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছিলেন। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা হাসপাতালের প্রাঙ্গণেও হামলা চালানো হয়। সেখানে হাজারো পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। আল জাজিরার তারেক আবু আযম বলেন, হাসপাতাল লক্ষ্য করে চালানো এই বিশাল বিস্ফোরণের আগে কোনো সতর্কবার্তাও দেয়া হয়নি। মাত্র ১০ মিটার দূরেই আমরা সম্প্রচার করছিলাম। এই হাসপাতালে এটি ১০তম হামলা। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে এই হামলাকে সিস্টেমেটিক অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের ভেতরে একটি তাঁবুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অনেকে এবং বহু রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংস করার জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছেন। গাজার দক্ষিণের খান ইউনিসে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমাণ ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন ইসরাইলি বিমান হামলায়। আহত হন আরও ৫০ জন। এই কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত বিতর্কিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। তারা মে মাসের শেষ থেকে সীমিত পরিসরে ত্রাণ সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছে। জিএইচএফের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব স্থানে প্রতিদিনের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, এই স্থানে বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ঘটনাগুলো পুনর্মূল্যায়নের আওতায় আনা হয়েছে।
তবে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎস জানায়, সেনাদেরকে বেসামরিক জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সেনা সদস্য জানায়, যারা কোনো হুমকি না তা সত্ত্বেও, তাদের দিকেও মারাত্মক গুলি চালানো হয়।

গাজায় আবারও স্থল হামলার আশঙ্কা
ইসরাইলি বাহিনী খান ইউনিসে বাড়িঘর ধ্বংস করে দেয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছে। একে নতুন একটি স্থল অভিযান শুরুর ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। উত্তর গাজার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নতুন করে আবারও ‘জবরদস্তিমুলকভাবে সরিয়ে দেওয়ার’ হুমকি দেয়া হয়েছে। সেখানে আগেই বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। ৬০ বছর বয়সী পাঁচ সন্তানের পিতা সালাহ বলেন, টানা বিস্ফোরণ চলেছে। ঘরবাড়ি, স্কুল- সব কিছু উড়িয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। মিডিয়ায় আমরা যুদ্ধবিরতির কথা শুনি, কিন্তু বাস্তবে দেখি কেবল মৃত্যু। জয়তুন অঞ্চলে ইসরাইলি ট্যাঙ্ক ঢুকে পড়ে এবং অন্তত চারটি স্কুলে বিমান হামলা চালানো হয়। সেখানে শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা বর্তমানে ইসরাইলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে অথবা উচ্ছেদের হুমকির আওতায়। এই ভয়াবহ হামলাগুলোর মধ্যেই ইসরাইলি কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে একটি নতুন যুদ্ধবিরতির আলোচনা চালাতে। কাতার বলেছে, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন সিরিয়াস, কিন্তু জটিলতা রয়ে গেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, মানবিক ক্ষয়ক্ষতি যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তা আর সহ্য করার মতো নয়। গাজার মানবিক ও সামরিক বিষয়গুলোকে এক সূত্রে বেঁধে ফেলা অগ্রহণযোগ্য।

হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের অবস্থান
হামাস নেতা ওসামা হামদান সোমবার বলেন, ইসরাইল থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে যুদ্ধবিরতি বিষয়ে কোনো খবর নেই। আমরা যুদ্ধবিরতি চাই, যাতে আমাদের জনগণকে রক্ষা করা যায়। মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে সীমান্তগুলো খোলা যায়। কাতার বলেছে, ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে এখন নতুন আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কাতারের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, আজ বা কালই কোনো বড় অগ্রগতি হবে না, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি আলোচনার পথ খুলেছে।
 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান/ একাধিক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত

নেতানিয়াহুর ভূয়সী প্রশংসা করলেন ট্রাম্প/ ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসরাইলের, প্রত্যাখ্যান তেহরানের/ ইরানে তীব্র হামলা চালানোর নির্দেশ

১০

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরান/ সকল বিকল্প উন্মুক্ত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status