খেলা
বাংলাদেশে টেস্ট উৎসব, লঙ্কায় ‘ভোগান্তি’
ইশতিয়াক পারভেজ, গল শ্রীলঙ্কা থেকে
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার
প্রথম দিন ভুতুড়ে ব্যাটিং, দ্বিতীয় দিন গড়পড়তা বোলিং। কলম্বো টেস্টে এটাই বাংলাদেশের প্রথম দুই দিনের হতাশ করা ব্যাটিং-বোলিংয়ের চিত্র। আগের দিন ৮ উইকেট হারিয়ে ২২০ রানে করেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। গতকাল সকালে ব্যাট করতে নেমে স্কোর বোর্ডে ২৪৭ রান তুলতেই সব উইকেটের পতন। মানে মাত্র ২৭ রানই যোগ করতে পেরেছে লেজের ব্যাটাররা। শ্রীলঙ্কার দারুণ বোলিং দাপটের পর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠের উইকেট নিয়ে টাইগার বোলাররাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন কিন্তু মাত্র একটি দু’টি উইকেট তুলে নিতে তাদের সারাদিন ধুঁকতে হয়েছে। দিনের শুরুতে একটি আর শেষে একটি- সারাদিনে এই প্রাপ্তি। অন্যদিকে বাংলাদেশে চলছে টেস্ট অভিষেকের ২৫ বছরে রঙিন উদ্যাপন উৎসব। সেখানে দুই যুগেও সাদা পোশাকে শুধু সাদাকালো পারফরম্যান্স ছাড়া টাইগারদের প্রাপ্তি কী! কিছু রোমাঞ্চকর জয় আর ব্যাক্তিগত অর্জন ছাড়া পুরোটাই হতাশার গল্প। কলম্বো টেস্টের প্রথম দুই দিন যুক্ত হয়েছে সেই হতাশার গল্পে। লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ১৪৬ রান করে অপরাজিত থাকেন দিন শেষে। ৯৩ রান করে আউট হলেও দিনেশ চান্ডিমাল দলের জন্য রেখেছেন বড় অবদান। টাইগারদের প্রথম ইনিংসের জবাবে দু’জনের দারুণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় দিন শেষে স্বগতিকরা লিড নিয়েছে ৪৩ রানের। ২৯০ রান ও হাতে ৮ উইকেট নিয়ে শুরু করবে তৃতীয় দিন। বলার অপেক্ষা রাখে না এসএসসি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে রানের পাহাড়ে চাপা পড়ার শঙ্কায় এখন শান্তরা।
২৫ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে কিছু উন্নতি সাধন করেছে এবং কিছু ব্যক্তিগত নৈপুণ্যও দেখিয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে, এই ফরম্যাটে তারা এখনও নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ঘরোয়া ক্রিকেটের মান এবং খেলোয়াড়দের ধারাবাহিকতার অভাবই এর প্রধান কারণ। রজতজয়ন্তী উদযাপনের পাশাপাশি, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য আত্মবিশ্লেষণ এবং কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি, যাতে আগামীর দিনে প্রাপ্তির খাতা আরও সমৃদ্ধ হয়। ২০০০ এর ২৬ জুন টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করে বাংলাদেশ। প্রায় ২৫ বছরের এই যাত্রায় বাংলাদেশ মোট ১৫৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। সেখানে ২৩ জয়, ১৮ ড্র আর ১০৯ পরাজয়।
কলম্বো টেস্টে দুই দিন দুই দলের ব্যাটিংটা ছিল আকাশ আর পাতালের মতো। যেখানে আড়াইশ করতে হারায় বাংলাদেশ সব উইকেট। সেখানে লঙ্কানরা তিন’শ থেকে ১০ রান দূরে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে। দুই ওপেনার নিশাঙ্কা এবং লাহিরু উদারা দারুণ শুরু করেন। উদারা ৪০ রান করে তাইজুল ইসলামের বলে আউট হলেও, নিশাঙ্কা এক প্রান্তে অবিচল থাকেন। তিনি দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ১৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন, যেখানে ১৮টি চারের মার । তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন দিনেশ চান্দিমাল, যিনি ৯৩ রানের এক ঝলমলে ইনিংস খেলেন। চান্দিমাল নাঈম হাসানের বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। টাইগার বোলারদের মধ্যে তাইজুল ইসলাম এবং নাঈম হাসান ১টি করে উইকেট নেন। তবে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের দাপটে তাদের বোলিং খুব একটা কার্যকর হয়নি।
শ্রীলঙ্কার শক্তিশালী টপ অর্ডারের সামনে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। যদিও দুটি উইকেট নিতে পেরেছে, কিন্তু দিনেশ চান্দিমাল ও পাথুম নিসাঙ্কার বিশাল জুটির কারণে টাইগারদের বোলিং অনেকটাই নিষ্প্রভ মনে হয়েছে। শান্তদের মূল লক্ষ্য ছিল দ্রুত উইকেট তুলে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলা। কিন্তু নিশাঙ্কা ও চান্দিমালের ১৮০ রানের জুটি তাদের সেই লক্ষ্য পূরণ করতে দেয়নি। এই উইকেটে স্পিন বা পেস বোলাররা কেউই ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি। তাইজুল ৩২ ওভার বল করে ৯০ রান দিয়ে ১টি উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে, নাঈম হাসান ৮ ওভার বল করে ৪৫ রান দিয়ে ১টি উইকেট পেয়েছেন। দিন শেষে তিনি চান্ডিমালকে ফিরিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছেন। একাদশে ফেরা মেহেদী হাসান মিরাজ ১৬ ওভারে ৫৭ রান দিলেও কোনো উইকেট পাননি। মমিনুল হক এক ওভার বল করে ৭ রান দিয়েছেন। অন্যদিকে ইবাদত হোসেন ও নাহিদ রানা, বাংলাদেশের দুই পেসার, উইকেট নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ইবাদত ৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়েছেন এবং নাহিদ রানা ১২ ওভারে ৫৪ রান দিয়েছেন, যার মধ্যে একটি ওয়াইড ও একটি নো বলও ছিল। পিচে পেসারদের জন্য তেমন সহায়তা না থাকায় তারা শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারেনি দু’জন। বোলিং দুর্বলতার পাশাপাশি দুই দলের ওপেনিং ব্যাটারদের চিত্রটাই ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার ওপেনিং জুটি ছিল অত্যন্ত দক্ষ এবং কার্যকর। তারা কেবল উইকেট ধরে রাখেনি, বরং রানের চাকাও সচল রেখেছিল। নিশাঙ্কার অনবদ্য সেঞ্চুরি এবং উদারের স্থিতিশীল শুরু শ্রীলঙ্কাকে একটি বড় স্কোর গড়ার পথে এগিয়ে দিয়েছে। তাদের ব্যাটিং দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনিং জুটির ওপর ভর করে বড় লিড নেওয়া যায়। যেখানে দ্রুত উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা এবং রানের জন্য সংগ্রাম করেছে। এই পার্থক্যই দ্বিতীয় দিনের শেষে দুই দলের অবস্থানের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।