খেলা
‘শ্রীলঙ্কা টু শ্রীলঙ্কা’ এক যুগে বিজয়ের ব্যর্থতার ট্রেন
ইশতিয়াক পারভেজ, গল শ্রীলঙ্কা থেকে
২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তার সতীর্থ এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে বলেছিলেন, ‘তিনি অনেকদিন পর দলে এসেছেন। আমার মনে হয় না কাউকে মাত্র দু’টি ম্যাচ থেকে বিবেচনা করা উচিত। যদি দল ও আমার কথা বলেন, তাহলে অবশ্য তার ওপর আমাদের আস্থা আছে। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ভালো করবেন।’ টাইগার অধিনায়ক বেশ ভালোভাবেই জানেন ব্যর্থ হওয়ার যন্ত্রণা। তবে নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে বারবারই জবাব দিয়েছেন। কিন্তু যার ওপর তিনি আস্থা রাখছেন, টেস্ট ক্রিকেটে তার ১২ বছর ধরে ব্যর্থতার ট্রেন চলছেই। ২০১৩ শ্রীলঙ্কার গলে তার টেস্ট অভিষেক। মাঝে কেটে গেছে এক যুগ। এরমধ্যে দেশের হয়ে ৮টি টেস্ট ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছেন বিজয়, যেখানে তার ১৪ ইনিংসের স্কোরগুলো হলো: ১৩, ১, ৩, ১৮, ৭, ২২, ৯, ০, ২৩, ৪, ৩৯, ০, ৩, ০। সাধারণত, টেস্ট ক্রিকেটে বোলারদের ব্যাটিং গড় বেশ কম হয়। ১৪ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে গড় সর্বনিম্ন। বারবার সুযোগ পেয়েও বিজয় তা কাজে লাগাতে পারেননি। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গলের পর কলম্বো টেস্টের প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছেন ১০ বলে কোনো রান না করে। বিজয়ের এমন ব্যাটিং তাকে আবারো ঘিরে ধরবে আস্থার সংকটে। এবার হয়তো বাদ পড়লে তার ফেরা সহজ হবে না। ২০১৩, অভিষেকের পর তাকে লম্বা সময় ধরে টেস্ট দল থেকে বাদ রাখা হয়েছিল। এরপর যখন আবার সুযোগ পেলেন, তখনো তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেটের মঞ্চে এনামুল হক বিজয় তার প্রতিভার ঝলক দেখাতে পারেননি। তার এই ১৪ ইনিংসের পারফরম্যান্স সত্যিই একজন স্বীকৃত ব্যাটসম্যানের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। তবে ভাগ্য ভালো হলে কলম্বো টেস্টে আরও একটি ইনিংস খেলার সুযোগ হতে পারে তার। সেটি শেষ সুযোগ বা ‘আগুন পরীক্ষা’ বললেও ভুল হবে না। যদিও দলে অধিনায়ক শান্তর সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্সও; তিনিও কাউকে দুই ম্যাচ বা কিছু ইনিংস দিয়ে বিবেচনা করার পক্ষে নন। কিন্তু এভাবে বারবার ভরসা ধরে রাখা টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। যদিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দারুণ সফল বিজয়। সেখানে প্রায় ৪৫ গড়ে ৩৫টির বেশি সেঞ্চুরি রয়েছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই পারফরম্যান্সের অভাবই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করে। প্রশ্নটা ওঠা স্বাভাবিক। একজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং উইকেটরক্ষক তিনি। এই পজিশনে সাধারণত অনেক বেশি রান করার এবং দলকে বড় স্কোরের ভিত্তি এনে দেয়ার প্রত্যাশা থাকে সবার। ওপেনিংটা ভালো না হলে দলকে ভুগতে হয়। তারা ভালো শুরু এনে দিলে মিডল ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটাররা লড়াই করার আস্থা পায়। কিন্তু চলমান ম্যাচসহ আন্তর্জাতিক ৮ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ১৪৩ রান করেছেন ১০.২১ গড়ে। যেখানে একটি সেঞ্চুরি তো নেই, এমনকি করতে পারেননি একটি ফিফটিও। তার ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস, তাও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিলেও আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটের মান ও চাপ সামলাতে তিনি হিমশিম খেয়েছেন। দীর্ঘ বিরতির পর দলে ফিরেও তিনি টানা খেলার সুযোগ পাননি, যার ফলে টেস্টে ছন্দ খুঁজে পাননি।
শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কার মানসম্মত পেস ও স্পিন আক্রমণের বিরুদ্ধে তার ব্যাটিং টেকনিকের দুর্বলতাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পেসারদের বলে আউট হয়েছেন, যা তার টপ অর্ডারে টিকে থাকার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিজয়কে মূলত সীমিত ওভারের ফরম্যাটের খেলোয়াড় হিসেবে দেখা হয়, যেখানে তার রেকর্ড তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে টেস্ট ক্রিকেটে, বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে, তিনি নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। কলম্বো টেস্ট শেষ করেই ফিরবেন দেশে, কারণ তাকে রাখা হয়নি ওয়ানডে এমনকি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও।