বিশ্বজমিন
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়ই শুরু হয় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি
মানবজমিন ডেস্ক
(১০ ঘন্টা আগে) ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১২:২২ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আজ যে ইরান সংকটের মোকাবিলা করছেন, তার সূচনা হয়েছিল কয়েক দশক আগে। সেই শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভিত্তি রচনা করে দেয়। ১৯৬০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি. আইজেনহাওয়ার-এর ‘অ্যাটমস ফর পিস’ কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ‘তেহরান রিসার্স রিঅ্যাক্টর’ নামে একটি ছোট পারমাণবিক চুল্লি সরবরাহ করে। এর উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ গবেষণায় ব্যবহার। ওই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক জ্ঞান ভাগাভাগি করে নেওয়া, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা এবং শীতল যুদ্ধকালে রাজনৈতিকভাবে তাদের পাশে রাখা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। যুক্তরাষ্ট্র শুধু ইরান নয়, ইসরাইল ও পাকিস্তানকেও একই উদ্দেশ্যে পারমাণবিক জ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা রবার্ট আইনহর্ন বলেন, আমরাই ইরানকে পারমাণবিক প্রযুক্তির ‘স্টার্টার কিট’ দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, তখন পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তিত ছিলাম না, ফলে আমাদের পারমাণবিক প্রযুক্তি হস্তান্তর ছিল অনেক বেশি উদার। প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার ১৯৫৩ সালে জাতিসংঘে তার ঐতিহাসিক বক্তৃতায় ঘোষণা দেন, পারমাণবিক অস্ত্রকে শান্তির কাজে ব্যবহার করা উচিত। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, ওই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বৃদ্ধিরও একধরনের ন্যায্যতা ছিল। তৎকালীন ইরানের রাজা শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তিনি আধুনিকীকরণ ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার প্রবক্তা ছিলেন। তার আমলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ছিল জাতীয় উন্নয়নের প্রতীক। ইরান উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছিল পারমাণবিক গবেষণায়। অনেক ইরানি বিজ্ঞানীকে এমআইটি সহ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। ১৯৭০-এর দশকে ফ্রান্সের সঙ্গে ইরান বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে পাঁচটি ১০০০-মেগাওয়াট চুল্লি স্থাপনের জন্য। এরপর জার্মানি ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেও পারমাণবিক চুক্তির চেষ্টা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করলেও, পাহলভি যুক্তি দেন যে নিজস্ব পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন করার অধিকার ইরানের রয়েছে। তবে ১৯৭৮ সালে, প্রেসিডেন্ট কার্টার প্রশাসন ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি সংশোধন করে এবং অস্ত্রোপযোগী জ্বালানি উৎপাদনে বাধা দেয়। পরের বছর ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে শাহের পতন ঘটে। নবনির্বাচিত আয়াতুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বাধীন সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক প্রকল্পে আগ্রহ হারায়। তারা একে পশ্চিমা আগ্রাসনের প্রতীক হিসেবে দেখত। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালে খোমেনী কৌশলগত কারণেই আবার পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই সময়েই ইরান পাকিস্তানের বিজ্ঞানী আবদুল কাদের খানের কাছ থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি সংগ্রহ করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইউরেনিয়ামকে অস্ত্রোপযোগী স্তরে সমৃদ্ধ করা সম্ভব হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা গ্যারি সামোর বলেন, ইরানের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গড়ে ওঠেনি, বরং তারা পাকিস্তান থেকে প্রযুক্তি সংগ্রহ করেছে। তবে তাদের গোড়া সেই ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন সহায়তাতেই পাতা হয়েছিল।