ঢাকা, ১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

মন্তব্য প্রতিবেদন

মোসাদ নিয়ে নানা প্রশ্ন, ইরানের হাতে কি তুরুপের তাস আছে?

মোহাম্মদ আবুল হোসেন

(১ দিন আগে) ১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:১৩ অপরাহ্ন

mzamin

 ইরানের রাজধানী তেহরানে মোসাদ। বছরের পর বছর ধরে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। চোরাইপথে অস্ত্র নিয়ে তেহরানের একেবারে কোলঘেঁষে গড়ে তুলেছে গোপন ‘এক্সপ্লোসিভ ড্রোন’ ঘাঁটি।  ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলায় জড়িত হয় তারা। বিভিন্ন স্থানে গোপনে মোতায়েন করে বিস্ফোরক, অস্ত্র। একই সঙ্গে ট্রোজান হর্স ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে ইরানের পারমাণবিক, সামরিক, সরকারি পর্যায়ের নেটওয়ার্ককে বিকল করে ফেলে ইসরাইল। ‘যুদ্ধাপরাধী’ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইরান আক্রমণ কৌশলে এসবই ছিল সফলতার মূলে। নেটওয়ার্ক বিকল করে দেয়ার ফলে তারা বুঝতে পারেনি কোথায় কি হচ্ছে। পাশাপাশি ইরানের প্রশাসন, সামরিক ক্ষেত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচি— সর্বত্র মোসাদের উপস্থিতি আছে। তা না হলে ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রাণ দিতে হতো না। 

ইরানের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষার কোন দায়িত্বে কে এবং তারা কখন কোথায় থাকেন— তা ইসরাইলের কাছে পৌঁছে যায় বাতাসের আগে। ফলে ইরান গোয়েন্দা ব্যর্থতার শিকার। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তাদের ভিতরে মোসাদ ঠিক ক্যান্সারের কোষের মতো ঘাপটি মেরে এতদিন এভাবে বসে আসে, তারা পরিকল্পনা করছে, অস্ত্র জোগাড় করছে— এর সবকিছু তো চোখের আড়ালে হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে মোসাদকে ইরানে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে কে বা কারা? এই বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রশ্নের উত্তর হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইরানের পিছনে ইসরাইল আজ নতুন করে লাগে নি। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা- ইরাকে একটি বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন ব্যবহার করে ইসরাইল কিভাবে হত্যা করেছে আইআরজিসির সাবেক প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে। মনে থাকার কথা গত বছর ১৯শে মে কিভাবে আজারবাইজান সীমান্তের কাছে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি ও অন্য সাতজন। এর পিছনেও ইসরাইলের হাত আছে বলে অভিযোগ আছে। 

মনে থাকার কথা সিরিয়ার দামেস্কে গত বছর ১লা এপ্রিল কিভাবে আকাশপথে হামলা চালিয়ে বহুতল একটি ভবনকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরাইল। এর একটিই কারণ ছিল, ওই ভবনে ইরানের কন্স্যুলার অফিস অবস্থিত। এতে আইআরজিসির গুরুত্বপূর্ণ আটজন কর্মকর্তা ও সিরিয়ার দু’জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। এর মধ্যে ছিলেন আইআরজিসির কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও অন্য দুজন কমান্ডার নিহত হন। ২০১০ সাল থেকে ইরানের বেশ কিছু পরমাণু বিষয়ক বিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইসরাইল। ২০১৮ সালে ইসরাইলের গোয়েন্দারা রাজধানী তেহরানে ইরানের একটি সামরিক স্থাপনায় রেইড দেয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তেহরানে ইরানি একজন কমান্ডারকে হত্যা করে ইসরাইল। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ইস্ফাহানে একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করে ইসরাইল। এমন উদাহরণ অসংখ্য দেয়া যায়। একই সঙ্গে গাজা, লেবানন, ইয়েমেনে একটানা বা ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে  ইসরাইল। তারা হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করে গত ১৬ই অক্টোবর। লেবাননে হিজবুল্লাহ প্রধান ইসমাইল হানিয়ে’কে হত্যা করে। এসব উদাহরণ সমুদ্র থেকে তুলে আনা এক চামচ পানির মতো। 

শুধু ইরানে নয়— গাজা, লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক সহ মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম দেশগুলোতে ইসরাইল এখন একনায়কতন্ত্র বা আধিপত্যবাদ চালাচ্ছে। এতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই কাজ করতে গিয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ পুরো অঞ্চল, শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়- সারা বিশ্বে জাল বিস্তার করে আছে। তাদের জাল কারেন্ট জালের চেয়েও শক্তিশালী। তাদেরকে এসব সুযোগ করে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ ও সেখানে ভিন্ন মতাবলম্বী বা উগ্রপন্থি অথবা সুবিধাবাদী পক্ষগুলো। আবার ফিরে আসি ইরানে। ইরানে মোসাদের এই জাল কি সেখানকার নেতারা মোটেও আঁচ করতে পারেননি? অথবা তাদের মাথায় কি একবারও আসেনি- ইসরাইল এমন গোয়েন্দা জাল ফেলে রাখতে পারে? যদি সেটাই পারে, তাহলে ইরানের কি কোনো গোয়েন্দ সংস্থা নেই? তারা কি করেছে? তাদের সফলতা কোথায়? তবে কি ইরানের গোয়েন্দাদের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে মোসাদ, ইসরাইল? এখন এমন অসংখ্য প্রশ্ন তোলা যায়। 

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো— পশ্চিমারা এতদিন যে বলে এসেছে ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে, যদি তা থেকে থাকে, তাহলে কোথায় রাখা হয়েছে তা। কখন ব্যবহার করবে ইরান? এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে ইরান দৃশ্যত পরাজিত। শুক্রবারের একদিনের হামলায় সেখানে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১০০। এর মধ্যে তাদের দেশের ‘মাথাগুলো’ রয়েছেন। ইসরাইলের তীব্র আক্রমণের জবাবে তারা ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে প্রতিশোধ নিতে চাইছে। কিন্তু ইরানের জানা উচিত ইসরাইলের কাছে আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে এই জাতীয় যুদ্ধে জয় পাওয়া যায় না। অবশ্য, এরই মধ্যে ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা আকাশেই বিকল করে দিয়েছে ওইসব ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত তেলআবিবের কাছে একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। তাতে একজন নারী মারা গেছেন। ইসরাইলের হামলার পাল্টা হামলা কি এটাই? এতদিন ধরে ইরানের নেতারা যেসব বাগাড়ম্বর বক্তব্য দিয়েছেন— হেন করেঙ্গা, তেন করেঙ্গা, তার সবটাই কি তবে ফাঁকা বুলি নাকি তাদের হাতে তুরুপের তাস আছে? যেটা খেলার শেষে ছেড়ে বাজিমাত করা হয়।

পুনশ্চ: যুদ্ধ কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। যুদ্ধ মানেই প্রাণহানি, সম্পদ ধ্বংস। মানব জাতির উন্নতিকে পিছনে ঠেলে দেয়া। কেউই যুদ্ধ চায় না। পৃথিবর সব ধর্ম, মত, পথের মানুষ এক সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ওপর ভিত্তি করে সহাবস্থান করুক। প্রত্যাশা এটাই। 

পাঠকের মতামত

All Muslim countries must attack Israel

জামাল
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ১১:৩২ অপরাহ্ন

good analysis

Junaid Hossain Noman
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৭:০৬ অপরাহ্ন

Excellently written....!

Ilias Ahmed
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

চিরন্তন সত্য কথা হলো ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরান ও ফিলিস্তিনের অনেক শিক্ষিত গরীব মেধাবী মানুষ কে মোটা অংকের টাকার বেতনে বা টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছে যেকারণে বিশ্ববাসী দেখেছেন বা দেখিতেছেন ইসরায়েল কত সহজভাবে ইরান ও ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে টপ লেভেলের সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের যেমন সহজে হত্যা করিতেছেন তেমনি দুটি দেশের বিভিন্ন সংস্থাপনায় হামলা চালিয়ে নিমিষেই ধ্বংস করে দিচ্ছে সুতরাং দুঃখজনক হলেও সত্য তাদের দেশেরই কিছু লোভী মানুষের কারণে দেশ দুটির উপর ইসরায়েল একক ভাবে বহু বছর থেকে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন।

Shahid Uddin
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন

এখন সময় এসেছে সকল মুসলিম রাষ্ট্রগুলো একত্র হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া

আব্দুল মালেক
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

By first instance attack Israel killed Iran's Army chief & 20 others renowned commander what Iran so far deed up to now ?

MD Alauddin
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

No mercy to Israhell.

Abu Yusuf Khan
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

ইজরাইলকে না থামালে বাংলাদেশের জন্যও বিপদ। জাতি নিধনের দুই হোতা নেতানিয়াহু ও নরেন্দ্র মোদী পরষ্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আশা করবো-আরবদেশ গুলো সাড়া দিবে।

Shahid ullah
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

ইরানের আকাশসীমা দখলের দাবি ইসরাইলের/ ‘আকাশে যুদ্ধবিমান দেখা যাবে, তেহরান জ্বলবে’

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status