বিশ্বজমিন
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন
ইসরাইলের হামলা ইরানে শাসকগোষ্ঠী পরিবর্তনের বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি করেছে
জেসন বার্ক
(১৭ ঘন্টা আগে) ১৫ জুন ২০২৫, রবিবার, ১২:৫৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:০৪ অপরাহ্ন

ইরানের ওপর ইসরাইলের হামলা হলো এক ধরনের ধারাবাহিক ঘটনার সর্বশেষ পরিণতি। এর সূচনা হয়েছিলো ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরাইলের ওপর চালানো যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের আক্রমণে। ওই সব ঘটনাই একের পর এক তেহরানকে দুর্বল করে তুলেছে এবং সামরিকভাবে ইসরাইলকে আরও শক্তিশালী করেছে। এসব ধারাবাহিকতা ছাড়া শুক্রবার ইরানে সরাসরি চালানো এই নতুন আক্রমণ বাস্তবে সম্ভব হতো না।
এর মধ্যে প্রথম ধাপ ছিল গাজায় ইসরাইলের আক্রমণ। এটি রক্তক্ষয়ী এবং প্রাণঘাতী হামলা। বিশেষত ফিলিস্তিনিদের জন্য। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হামাসকে এর মাধ্যমে এতটা দুর্বল করে দেওয়া হয় যে, তারা আর ইসরাইলিদের জন্য তাৎক্ষণিক কোনো বড় হুমকি হতে পারেনি। হামাসকে বলা হয় ‘প্রতিরোধ অক্ষ’। এর একটি অংশ হলো- একটি জোট। নিজের প্রভাব বিস্তার এবং ইসরাইলকে তার পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা থেকে বিরত রাখার জন্য ইরান গত এক দশকে এই জোট গড়ে তুলেছিলো। তাই এই আক্রমণের আঞ্চলিক প্রভাব গভীর।
এরপর ২০২৪ সালের এপ্রিলে সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস কমপ্লেক্সে বোমা হামলা চালায়। সেখানে সাতজন নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরাইলে ড্রোন হামলা চালায়। যদিও তা কার্যকর হয়নি। বহু বছর ধরে যুদ্ধে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রক্সি, গুপ্তহত্যা ও সীমান্তের বাইরের হামলার মাধ্যমে লড়াই করলেও, এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে প্রকাশ্যে যুদ্ধ চলছে।
শরত মৌসুমের দিকে হামাস অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন ইসরাইল মনোযোগ দেয় লেবাননভিত্তিক এবং ইরান-সমর্থিত অন্য যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর দিকে। তাদেরকে প্রতিরোধ অক্ষের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ মনে করা হয়। সেপ্টেম্বরে হিজবুল্লাহর পুরো নেতৃত্ব ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ ধ্বংস করে দেয় ইসরাইল এবং দক্ষিণ লেবাননের গভীরে অভিযান চালায়। সেখানে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়নি তাদের। এমনকি হিজবুল্লাহর সমর্থকরাও স্বীকার করে নেন যে, তারা বড় ধরনের পরাজয় বরণ করেছে।
উল্লেখ্য, হিজবুল্লাহর হঠাৎ দুর্বল হয়ে পড়ায় সিরিয়াতে বিদ্রোহীরা হামলা চালালে তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের হয়ে লড়াই করতে পারেনি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আসাদের পতনের মাধ্যমে ইরান-সিরিয়ার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙে যায়। এতে ইরানের প্রতিরোধ অক্ষ আরও দুর্বল হয়ে পড়ে, সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো আরও সহজেই ইরানে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
সিরিয়া ও ইরাকের ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা বুঝতে পেরেছে যে ইসরাইলকে আক্রমণের হুমকি বাস্তবে রূপ দেওয়াটা বোকামি। ফলে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাই একমাত্র গোষ্ঠী, যারা এখনও ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে এবং তেল আবিবের দিকে কয়েকটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। যদিও তা কৌশলগত কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।
২০২৫ সালের বসন্তের শুরুতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির দেশের নিরাপত্তা রক্ষার ভার প্রক্সিদের হাতে তুলে দেন। তার এ সিদ্ধান্ত যে কত বড় ভুল ছিল, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই স্বল্পমেয়াদী সুযোগ কাজে লাগাতে বহুদিন ধরে পরিকল্পিত একটি বড় সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এপ্রিলে হামলা চালানোর এক সময়সীমা পেরিয়ে যায়, যদিও সেই সময় মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া ছিল। তিনি তেহরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য মাত্র ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলেন। ইসরাইল দাবি করে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সেই সময়সীমা গত সপ্তাহে শেষ হয়ে যায়।
শুক্রবার নেতানিয়াহু ইরানিদের উদ্দেশে বলেন, তিনি আশা করেন ইসরাইলের সামরিক অভিযান ‘তোমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ পরিষ্কার করবে।’
ইসরাইলের লক্ষ্য যদি ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের আগের সময়ের মতো ইরানকে আবারও ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রে পরিণত করা না-ও হয়, তবে তারা যেসব লক্ষ্যবস্তু বেছে নিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে এই দীর্ঘদিনের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এটি এ কারণে যে ইরানের বর্তমান শাসন কাঠামোর নেতৃত্বে এখনও রয়েছেন সেই সব ব্যক্তি, যারা রেজা শাহ পাহলভির পতনের পর বা তারও আগে ইসলামি বিপ্লবের পথিকৃৎ ছিলেন।
শুক্রবারের প্রথম দফার হামলায় নিহতদের মধ্যে আছেন অনেক জ্যেষ্ঠ অফিসার। তারা ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রথম দিকের সদস্য। এই বাহিনীই ছিল ধর্মীয় নেতাদের নতুন শাসনব্যবস্থা রক্ষার মূল কাণ্ডারি এবং পরবর্তীতে ইসলামী বিপ্লবের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হন তারা। এদের অনেকেই ইরান-ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-১৯৮৮) অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, যা ঐতিহাসিকদের মতে, বর্তমান শাসনের ভিত্তি গড়ে দেয়।
প্রথম দফার হামলায় নিহত পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন আইআরজিসির প্রধান হোসেইন সালামি একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা। খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি। তিনি আগে থেকেই লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। ১৯৭০-এর দশকে ছিলেন একজন গোপন ইসলামি বিপ্লবী এবং পরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। খামেনি নিজে ১৯৮৯ সালে আয়াতোল্লাহ খোমেনির উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু তার ইসলামি রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে।
এই যুদ্ধ শেষ হলে ইরান আবার যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইল-ঘেঁষা হবেÑ তা অত্যন্ত অস্বাভাবিক সম্ভাবনা। তবে যা খুবই সম্ভব, তা হলো যারা শাহকে সরিয়ে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন এবং তারপর বহু দশক ধরে শাসন করে এসেছেন, তাদের ক্ষমতা চূড়ান্তভাবে এবং সম্ভবত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
(জেসন বার্ক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রতিবেদক। তার এ লেখাটি অনলাইন গার্ডিয়ানে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
পাঠকের মতামত
উনি সম্ভবত ইরানের পাল্টা আক্রমনের আগে এটি লিখেছিলেন। আপনাদের উচিত ছিল এটি বুঝার। এখনতো ইসরাইল নামক অবৈধ দেশটি অস্তিত্ব সঙ্কটে। পশ্চিমারা ইসরাইল এর সাহায্যে এগিয়ে না আসলে ইসরাইল গাজার মত হবে। তা নিশ্চিত। ইরান তাদের সমস্ত বিমান বন্দর অকেজো করে দিবে। ইরানে ইসরাইল আর আক্রমনই করতে পারবেনা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইসরাইলের বেশির ভাগ অধিবাসী ইউরোপ আমেরিকায় পারি জমাবে যেখানে ছিল তাদের আদি নিবাস।
Let's see what balls Israel and USA can do .