শেষের পাতা
আওয়ামী লীগের সমাবেশে ওবায়দুল কাদের
খেলা হবে রাজপথে
স্টাফ রিপোর্টার
১৮ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগুন-সন্ত্রাস ও বোমাবাজি করে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ। খেলা হবে আগামী নির্বাচনে। খেলা হবে রাজপথে। খেলা হবে, মোকাবিলা হবে। তিনি বলেন, বন্দুকের নল থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি, রাজপথ থেকেই জন্ম হয়েছে। বিএনপি গতবার জাতীয় নির্বাচনের আগে জগাখিচুড়ির ঐক্য করে ধরা খেয়েছে, এবারও ধরা খাবে। গতকাল রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এ আয়োজন করে। ২০০৫ সালে ১৭ই আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশব্যাপী পাঁচ শতাধিক জায়গায় সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। তারপর থেকে দিনটি ‘সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ দিবস’- হিসেবে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী এ সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, মৎস্য ভবন এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।
এ সময় তারা বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা-প্রেস ক্লাব ও জিরো পয়েন্ট হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে ওয়ায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আজ শপথ নিতে হবে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঠিকানা বিএনপিকে দেশের রাজপথে মোকাবিলা করতে হবে। প্রস্তুত থাকেন, খেলা হবে, রাজপথে খেলা হবে, রাজপথে মোকাবিলা হবে, আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, সেখানে আমরা জয়লাভ করবো। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বলে, আওয়ামী লীগের পায়ের তলায় নাকি মাটি নেই। এই যে জনতার ঢল, শেখ কামালের মাজারে, বঙ্গমাতার মাজারে, বঙ্গবন্ধুর মাজারে, টুঙ্গিপাড়ায় সেই জনতার ঢল। বিএনপি এই জনতার ঢল কোনোদিনও দেখেনি। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ২০০৬ সালের সঙ্গে আজকে ২০২২ সালের তুলনা করেন। ২০০৬ সালে বিএনপি’র বাজেট ছিল ৬৯ হাজার কোটি টাকা।
আজকে শেখ হাসিনার বাজেট হচ্ছে ৬ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। কিসের সাথে কী মেলাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘গত দুইদিন ধরে মির্জা ফখরুল একটা মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। আজ আপনাদের সামনে বলতে চাই, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট বাংলাদেশে এসেছেন। আজকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মির্জা ফখরুল, এখনো শিক্ষা হয় নাই। জাতিসংঘের দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রধান কোনো কর্মকর্তাদের দেখা দেয়ার সুযোগ পাননি। ওই নিচের দিকের কেরানিদের সঙ্গে বৈঠক করে নালিশ করে এসেছে। বিএনপি’র নাম কি, বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। নালিশ পার্টির কাম কি, বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করা। এই নালিশ পার্টি সন্ধ্যার পরে দেখবেন বিদেশি দূতাবাসে ঘুরে। ফখরুলের চোখের পানি, নাকের পানি এক হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতায় বসতে চায়, সেই ময়ূর সিংহাসনে। কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত করার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব আপনি বোধহয় জানেন না আপনি যে নালিশ করেছেন, তা বিচার করার এখতিয়ার নেই মিশেল ব্যাশেলেটের। জাতিসংঘের নিয়ম-কানুন কি জানেন? জাতিসংঘের কাছে তদন্ত কমিটি করতে বলেছেন। জাতিসংঘের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তদন্ত করার কোনো এখতিয়ার নেই।
নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা কষ্ট মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, সময় আসছে। আমি শুধু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বলবো, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। এই নগরীতে আওয়ামী লীগের এত ইউনিট-কমিটি। হাজার হাজার নেতা কেন মঞ্চমুখী। আপনারা কর্মীদের সঙ্গে বসেন। নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা কষ্ট। সবাই নেতা হয়ে গেছেন। স্টেজে মনে হয় দুই হাজারের মতো লোক আছে। এটা যেন আর না হয়। নেতা একজন, তিনি শেখ হাসিনা আর আমরা সবাই কর্মী। কর্মীরা পোস্টার লাগাবে, লিফলেট বিতরণ করবে। আওয়ামী লীগ মাটির দল, মানুষের দল। আওয়ামী লীগ বন্দুকের নল থেকে জন্ম নেয়নি। আওয়ামী লীগ জন্ম নিয়েছে এ দেশের মানুষের মাঝ থেকে। রিজার্ভ নিয়ে এখন রিকশাওয়ালারাও কথা বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার সততা থেকে শিক্ষা নিন, বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা নিন। আজ বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যাচার অপপ্রচার চলছে। অবাক লাগে, এখন রিজার্ভ নিয়ে রিকশাওয়ালারাও আলাপ করে। রিজার্ভ নিয়ে কথা বলতে বলতে বিএনপি’র মুখে ফেনা উঠে গেছে। শ্রীলঙ্কার অবস্থা শূন্য, পাকিস্তানের অবস্থাও খারাপ। বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ কখনো পাকিস্তান হবে না। আমাদের রিজার্ভ এখন ৪০ থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে উঠানামা করছে। আপনারা বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমরা যখন ঘুমাই, তখন শেখ হাসিনা জেগে জেগে রাত কাটান। আমরা যেন ঘুমাতে পারি, সেজন্য তিনি জেগে থাকেন। আমি বলবো আপনার ঐক্যবদ্ধ হন। সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। উন্নয়ন এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের পেট্রল বাহিনী আবার পথে নেমেছে। আজ থেকে আমরাও মাঠে নামলাম। ২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কময় দিন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে উগ্র মৌলবাদী রাষ্ট্র গড়ার চক্রান্ত করে আসছিল।
তার চূড়ান্ত মহড়া ছিল ১৭ই আগস্ট। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও এডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম ও এসএম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মন্নাফী, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বক্তব্য রাখেন।