খেলা
ড্র’তেও স্বস্তি টাইগারদের
ইশতিয়াক পারভেজ, গল শ্রীলঙ্কা থেকে
২২ জুন ২০২৫, রবিবার
গল জয়ের স্বপ্ন নিয়ে দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হলো না, এক যুগ পর ফের গলে লড়াই হলো সমানে সমান। ড্র মেনে নিয়ে হাত মেলালেন দুই অধিনায়ক। প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ দলের পঞ্চম দিনের ব্যাটিং নিয়ে। আরেকটু হাত খুলে যদি খেলতেন মুশফিকুর রহীম, নাজামুল হোসেন শান্ত তাহলে হয়তো জয়টাও সম্ভব ছিল! বিশেষ করে অধিনায়ক শান্তর ধীরগতির সেঞ্চুরিটাকেও কেউ কেউ বাঁকা চোখে দেখছেন! আসলেই কি তাই? গলের উইকেট শেষ দিন পর্যন্ত ব্যাটারদেরই সঙ্গ দিয়েছে। ফল উল্টোটাও হতে পারতো। বরং ‘ড্র’তেও টাইগার শিবিরে বড় স্বস্তি ফিরেছে। গেল ১০ মাসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের যে নড়বড়ে অবস্থা তাতে দর্শকরা মুখই ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। সবকিছু বিবেচনা করলে হারের অস্বস্তির চেয়ে ‘ড্র’ যেন টাইগারদের দেখিয়েছে নতুন ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠেও একই কথা। ঝুঁকি নিলে হতে পারতো ‘হীতে বিপরীত’। শান্ত বলেন, ‘দেখেন আজও (পঞ্চম দিন) উইকেট খুব ভাঙেনি। আমরা যেমনটা পঞ্চম দিনের উইকেট আশা করি সেটি হয়নি। তাই প্রথম ঘণ্টা আমরা দেখেছি। এরপরও সম্ভব ছিল কিন্তু বৃষ্টি এসে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। যদি ৬০ থেকে ৭০ ওভার থাকতো তাহলে হয়তো ভিন্ন কথা ছিল। এরপরও আমরা উইকেট নিয়েছি। এটা বলতো আমাদের একটা পাওয়া।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কম নয়। বিশেষ করে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ হারটা দলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সিরিজের পরের ম্যাচটি জিতলেও শান্তদের সামনে প্রমাণ করা অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল লঙ্কা সিরিজে। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে বেহালদশা থেকে বের হওয়া ছিল বড় একটি চ্যালেঞ্জ। বলার অপেক্ষা রাখে না, গলে টাইগারদের দুই ইনিংসে ৭৮০ রান, তিনটি সেঞ্চুরি কিছুটা হলেও আশার আলো দেখিয়েছে। বিশেষ করে অধিনায়ক শান্ত উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে আরো একবার জবাব দিয়েছেন সব ধরনের সমালোচনারও। অন্যদিকে গলে বৃষ্টিবিঘ্নিত শেষ দিনে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ৩৭ ওভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ দিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। লঙ্কানরা ৩২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান তোলার পর ড্র মেনে নেয় দুই দল। তার আগে টাইগাররা দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৬ উইকেটে ২৮৫ রান নিয়ে। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত থাকেন ১২৫ রান করে। যদিও দেশের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের গতকালের ধীরগতির ব্যাটিংটা জন্ম দিয়েছে সমালোচনারও। ৩ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে শনিবার দিন শুরু করে বাংলাদেশ। বৃষ্টির আগে ১৯ ওভার খেলে মাত্র ৬০ রান আসে শান্ত ও মুশফিকের জুটিতে। সেখানে চারের মার শুধু মাত্র ৫টি। তবে হঠাৎ করেই রান বাড়ানোর চেষ্টায় ১০২ বলে ৪৯ রান করে রান আউট হন মুশফিক। এরপরই বৃষ্টি নেমে খেলা বন্ধ থাকে তিন ঘণ্টা। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেখানেই বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নটা বিলিন হয়ে যায়। খেলা শুরু হয়, দিনের বাকি তখন ৫০ ওভার। কিন্ত কোন ঝুঁকি না নিয়ে ফের ব্যাটিংয়ে নামে ২৪৭ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ। যা সবাইকে অবাক করে।
কিন্তু সেখান ধেকে লিটন দাস ৩ ও জাকের আলী ২ বিদায় নেন দ্রুতই। নাঈম হাসানকে নিয়ে মন্থর গতিতে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান শান্ত। একটিও বাউন্ডারি না মেরে টানা ১৩ ওভারের বেশি কাটিয়ে টাইগার অধিনায়ক সেঞ্চুরি পূরণ করেন ১৯০ বলে। তখনই বলাবলি শুরু হয় নিজের সেঞ্চুরির জন্যই কি দলের জয়ের বলি! তবে দেশের হয়ে রেকর্ডও গড়েন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা ষোড়শ ক্রিকেটার তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি টেস্ট ক্রিকেটকে ৯৬তম জোড়া সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শান্ত ছাড়া জোড়া সেঞ্চুরি আছে শুধু মুমিনুল হকের। ২০১৮ তে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল।