ঢাকা, ২১ জুন ২০২৫, শনিবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

খেলা

আকাশও পড়তে পারেন গলের মাঠকর্মীরা

ইশতিয়াক পারভেজ, গল শ্রীলঙ্কা থেকে
২১ জুন ২০২৫, শনিবার
mzamin

কলম্বো থেকে গল আসতে আসতে কয়েক দফা বৃষ্টি।  ১৩ই জুন বাংলাদেশ দল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গলের টিম হোটেলে প্রবেশ করে। পরের দিন বৃষ্টি, অনুশীলন না করে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত টাইগারদের। এরই মধ্যে স্টেডিয়ামের মাঠকর্মীদের দারুণ ব্যস্ততা। উইকেটের কভার তুলে কাজ করতে করতে ফের বৃষ্টি। আবারো ঢেকে ফেলা শুরু, তাও পুরো মাঠ। এখানে আসলে বৃষ্টিটা এমনই। তাই আবহাওয়া বার্তার ওপর নির্ভর করা ছাড়া কি করার আছে! বাংলাদেশ থেকে আসা সংবাদকর্মীদের গল টেস্টের আগে সারাক্ষণই বৃষ্টির চিন্তা। আকাশে মেঘ দেখলেই আবহাওয়া বার্তায় চোখ। কিন্তু অন্যদিকে নির্বিকার গলের মাঠকর্মীরা। তারা যেন কিভাবে বুঝে যান মেঘ কখন বৃষ্টি হয়ে ঝড়বে। তার আগেই ছুটতে শুরু করেন কভার নিয়ে। তাহলে কি তারা আকাশও পড়তে পারেন! ২০ বছর ধরে এই মাঠে কাজ করা মোহাম্মদ রিফাইস অবশ্য রহস্যটা খোলাসা করলেন। পুরো আকাশ মেঘে ঢেকে থাকলেও তারা ভয় পান না। কিন্তু গল ফোর্টের উত্তর পূর্ব কোণে মেঘ দেখলেই শুরু হয়ে যায় তাদের দৌড়ঝাপ। তখন আকাশের বেশির ভাগ ঝলমলে রোদ থাকলেও তারা মাঠের চার পাশে হাজির হন হয়তো মিনিট দশ এর মধ্যে বৃষ্টি নামবে। 

এমন দৃশ্যই দেখা মিলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজে। ১৩ই জুনের আগে থেকে গলে যে বৃষ্টি হচ্ছিল তাতে ধারণা করা হচ্ছিল হয়তো ম্যাচটি ভেসেই যাবে। কিন্তু গলের মাঠকর্মীদের মধ্যে তেমন কোনো শঙ্কা দেখা যায়নি। তারা নির্ভার থেকেছেন। হয়েছেও তাই। চারদিনের মধ্যে ম্যাচ চলাকালে একদিনই বৃষ্টি হয়েছে। ম্যাচের তৃতীয় দিন দুপুরে পূর্বপ্রস্তুতি ছিল, তাই মুহূর্তেই ঢেকে ফেলা হয় পুরো মাঠ। শুধু উইকেট নয়, গোটা মাঠের ঘাসেরও যেন আকাশ দেখার সুযোগ রাখা হয় না। এতে বৃষ্টির পর খুব কম পরিশ্রমেই মাঠ শুকিয়ে খেলা শুরু করা যায়। এখানে ২০ জন গ্রাউন্ডসম্যান এতই অভিজ্ঞ যে, তারা যে পর্যন্ত নিশ্চিত না হন বৃষ্টি হবে না সেই পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে আর মাঠের চারপাশে ঘুরেফিরেই দিন কাটান। কিন্তু যখনই দেখেন গল দূর্গের উত্তর-পূর্বকোনে মেঘ জমতে শুরু করেছে তখনই তারা হাজির। বলা যায়, গলের মাঠকর্মীরা যেন নিজেরাই একেক জন আবহাওয়া অফিস! গল স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ডসম্যান মোহাম্মদ সামির ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন এই মাঠে। তিনি জানিয়েছেন অন্য দিনের মতো বুধবারও খেলা চলাকালীন বদলে গেছে গলের আকাশ। তা বুঝতে পেরেই তারা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন কারণ গল মাঠের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ততোটা ভালো নয়। এমন কাজের জন্য তারা পুরষ্কারও পান ক্রিকেটারদের হাত থেকে।

 গল টেস্টের তৃতীয় দিন শুরুর আগে সকল মাঠ কর্মীকে ডেকে ছবি তোলেন বিদায়ী অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ক্রিকেটাররাও জানে এইখানে মাঠকর্মীদের মেঘ-বৃষ্টির সঙ্গে কঠিন লড়াই করেই উইকেট তৈরি করতে হয়। ভারত মহাসাগরের কাছে বলে এখানে ঝড়, নিম্নচাপ নিয়মিত বিষয়। ২০০৪-এর সুনামী এই মাঠকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেখান থেকে এই গ্রাউন্ডসম্যানদের হাত ধরেই পেয়েছে পুনর্জীবন। ২০১৩, ২০১৭ দুবার এই মাঠে খেলে গেছে বাংলাদেশ দল। প্রথমবারও বৃষ্টি মাথায় তারা এখানে অনুশীলন শুরু করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এখানে গোটা ম্যাচে আর বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও ছিল না। মাঠকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে যে উইকেট তৈরি হয় সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটাররা লিখে গেছে ব্যাট হাতে নিজেদের নতুন রেকর্ডের ইতিহাস। এবারও তার ব্যাতিক্রম নয়, দুই দলের শুধু প্রথম দুই ইনিংসে হয়েছে ৯৮০ রান। বাংলাদেশের দু’জন ও শ্রীলঙ্কার একজন হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। ম্যাচের ফল কোন দিকে যাবে তা শেষ দিনই জানা যাবে। বাংলাদেশ জিতে গেলে টাইগারদের কাছ থেকেও ধন্যবাদ মিলবে হয়তো গলের মাঠকর্মীদের!

খেলা থেকে আরও পড়ুন

খেলা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status