খেলা
গলের আকাশে ‘পাঁচ রঙা ঘুড়ি’ নাঈমের
স্পোর্টস রিপোর্টার, (গল) শ্রীলঙ্কা থেকে
২১ জুন ২০২৫, শনিবার
গল ফোর্টে দুপুর হতেই উড়তে থাকে বিশাল সব রঙিন ঘুড়ি। হয়তো তারই রঙ লাগে বাংলাদেশের স্পিনার নাঈম হাসানের হাতেও। তিনি যেন ওড়ালেন গলের আকাশে আশার রঙিন এক ঘুড়ি। আগের দিন এক উইকেট নিয়ে বেশ হতাশই করেছিলেন এই অফস্পিনার। গতকাল বিদেশের মাটিতে তুলে নিলেন নিজের প্রথম ফাইফার। বোলিং ব্যর্থতায় গল টেস্টে যেখানে টাইগারদের জন্য বিবর্ণ হতে শুরু করেছিল সেখানে তিনি স্পিন জাদুর রঙের তুলি ছুঁয়ে দিলেন। তার অসাধারণ বোলিংয়ে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ৪৯৫ রান তাড়া করে লঙ্কানরা থামলো ৪৮৫ রানে। সেই সুবাদে ১০ রানের লিড। তার দেখানো পথে ছুটেছেন দলের ব্যাটাররাও। চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগারদের ১৭৭/৩ রান। ৭ উইকেট হাতে রেখে লিড ১৮৭ রানের। পঞ্চম দিন সকালের প্রথম সেশনে এই ইনিংস যত বড় হবে ততোই বাড়বে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা। শ্রীলঙ্কার সিনিয়র ক্রীড়া সংবাদিক রেক্স ডি সুজাকে বেশ চিন্তিতই মনে হলো। তিনি জানিয়ে দিলেন ২৫০ এর কাছাকাছি রান করতে পারলেই জিতে যেতে পারে বাংলাদেশ। কারণ এখানে টাইগার শিবিরে আছেন নাঈমের মত দারুণ অফস্পিনার যে কিনা গলের পঞ্চম দিনের উইকেটে হতে পারেন ভীষণ ভীষণ ভয়ঙ্কর! নাঈম নিজেও বিশ্বাস করেন জয় সম্ভব। দিন শেষে সাংবাদমাধ্যমকে জানালেন সেই আশার কথাও। নাঈম হাসান বলেন, ‘হ্যা, জয় সম্ভব। তবে সকালের প্রথম সেশনটা আমাদের কত রান হবে সেটিও একটি বিষয়। স্কোরটা বড় হলে ওরা (শ্রীলঙ্কা) চাপে থাকবে। জিততে চাইলে তাড়াহুড়া করে ভুল করবে। তাতে আমাদের বোলারদের সুযোগ থাকবে। আমাদের পরিকল্পনা আছে কালকে (আজ) সকালেই তা নির্ধারণ করবে দল।’
গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হওয়া ওপেনার সাদমান ইসলাম এবার খেললেন ৭৬ রানের দারুণ ইনিংস। অপরাজিত ফিফটিতে দিন শেষ করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দু’জনের যেমন আক্রমনাত্নক খেলার কথা ছিল সেটিই করেছেন তারা। গতকাল ৪ উইকেটে ৩৬৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা স্বাগতিকরা শুরুতেই ধাক্কা খায়। দিনের তৃতীয় ওভারে নাঈমের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কিপারের কাছে ধরা পড়েন অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১৯ রান করে। তার কিছুক্ষণ পর হাসান মাহমুদের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারিতে উইকেট হারান কুসাল মেন্ডিস। লিটন কুমার দাস উইকেটের পেছনে অসাধারণ ক্যাচ নেন। পরপর দুই উইকেটে হারিয়ে বড় লিড নেয়ার আশায় ধাক্কা লাগে লঙ্কানদের। তবে তা সামলে উঠে সপ্তম উইকেটে ৮৪ রানের জুটি গড়েন কামিন্দু মেন্ডিস ও মিলান রত্নায়েকে। এখান থেকেই নাঈম ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দেন। ৩৯ রান করে তার বলে আউট হন মিলান। পরের ওভারেই নাঈমের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বিদায় নেন কামিন্দু মেন্ডিস। এবারও দারুণ ক্যাচ নেন লিটন। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের দুই টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি ও অপরাজিত ৯২ রানের একটি ইনিংস খেলা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবার ফেরেন ৮৭ রানে। শেষ দুই উইকেট দ্রুত নিয়ে নাঈম পূরণ করেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ৫ উইকেট। শ্রীলঙ্কা ১৫ রানের মধ্যে হারায় শেষ চার উইকেট। দেশের বাইরে প্রথমবার বোলিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৫ উইকেট নেন নাঈম হাসান। লঙ্কান ব্যাটিং দেখে এক সময়ে মনে হচ্ছিল তাদের থামানো কঠিন হবে। কিন্তু একের পর এক উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন নাঈম। এরপর ১০ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ আবারও শুরুতেই হারায় ওপেনার এনামুল হক বিজয়কে। মাত্র ৪ রান করে বিজয় বিদায় নেন দলকে বিপদে ফেলে। সাত টেস্টের ক্যারিয়ারে বিজয়ের সাকুল্যে সংগ্রহ ১৪৩ রান, ১১.০০ গড়। এরপর মুমিনুল হক একটি ছক্কা মারলেও আউট হয়ে যান ১৪ রান করে। সুইপ করার চেষ্টায় বল তার ব্যাট ছুঁয়ে হেলমেটে লেগে যায় শর্ট পয়েন্ট ফিল্ডারের হাতে। তৃতীয় উইকেটে সাদমান ও শান্ত যোগ করেন ৬৮ রান। ৭ চারে ১২৬ বলে ৭৬ করে আউট হন সাদমান। এরপর ৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিনের খেলা শেষ করেন প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ান শান্ত ও মুশফিক। ১১৩ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত শান্ত, ৪৩ বলে ২২ রান মুশফিকের।