ঢাকা, ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

আজ রাতেই কী ইরানে হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র?

দুই সপ্তাহ সময় নিলেন ট্রাম্প

মোহাম্মদ আবুল হোসেন

(৩ ঘন্টা আগে) ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

mzamin

বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান মঞ্চে সবচেয়ে উদ্বেগজনক প্রশ্ন: আজ রাতেই কি ইরানে হামলা চালাবে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র? এই প্রশ্ন এখন শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের কূটনৈতিক মহলে গমগম করে বাজছে। হোয়াইট হাউস থেকে তেহরান, জেরুজালেম থেকে মস্কো— সবাই তাকিয়ে আছে ট্রাম্পের দিকে। কিন্তু কার্যত ইরানে হামলায় দুই সপ্তাহের সময় নিয়েছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য হামলা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। বরং তিনি বলেছেন—  ইরানের সঙ্গে আলোচনার একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা সামনে রয়েছে— যা হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব, আমরা এতে যাব কি না।
কিন্তু হোয়াইট হাউসের এই বিবৃতি এসেছে এমন একদিনে, যেদিন সকাল থেকে ওয়াশিংটন জুড়ে গুঞ্জন ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক’ ডেকেছেন। মিডিয়ার কিছু সূত্র জানায়, তিনি ইতিমধ্যে কয়েকটি আক্রমণ পরিকল্পনা পর্যালোচনা করেছেন। তবে সেটা বাস্তবায়িত হয়নি— অন্তত এখনো নয়।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে: সত্যিই কি আলোচনা চেষ্টার অংশ হিসেবে এই ‘দুই সপ্তাহের সময়’ নাকি এটি যুদ্ধের প্রস্তুতির কৌশলী সময়ক্ষেপণ? গতকাল ইরানে চালানো পাল্টা রকেট হামলায় ইসরাইলে একদিনেই ৫০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন শিশু এবং নারী রয়েছে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই হামলা ইসরাইলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সংঘটিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক পশ্চিমা রাষ্ট্রনেতা এই হামলার নিন্দা করে এটিকে ‘সাম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বৃটেন এবং কানাডা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেসামরিক জনগণের মৃত্যুকে ঘিরে। তবে প্রশ্ন উঠছে: ইরানের হাসপাতাল আক্রান্ত হলে তা কি যুদ্ধাপরাধ নয়? যখন ইসরাইলের কোনো হাসপাতাল বা বেসামরিক অবকাঠামো আক্রান্ত হয়, তখন তৎক্ষণাৎ বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়ে পড়ে। যুদ্ধাপরাধের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু যখন ইসরাইল কিংবা যুক্তরাষ্ট্র— ইরানে কিংবা সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনে— হাসপাতাল বা স্কুলে বোমা বর্ষণ করে, তখন একই মানবাধিকার সংগঠন বা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো থাকে চুপ। এই দ্বিচারিতা আজকের পৃথিবীতে শুধু রাজনৈতিক নয়— মানবিক ন্যায়ের মুখে লাঞ্ছনা। ইরানের রাজধানী তেহরানে সম্প্রতি এক সরকারি হাসপাতালে ড্রোন হামলায় ২৭ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ৯ জন শিশু এবং ৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এই হামলার দায় এখনো কেউ স্বীকার করেনি, তবে ইরান সরাসরি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করেছে। কিন্তু এই হামলা নিয়ে জাতিসংঘে কোনো তাৎক্ষণিক জরুরি অধিবেশন হয়নি, হোয়াইট হাউস মুখ খোলেনি, এমনকি পশ্চিমা মিডিয়াতেও তা প্রাধান্য পায়নি।
এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দুইটি পথ খোলা। তা হলো- ১. ট্রাম্প চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানে হামলা চালাতে পারেন। সেই পরিকল্পনা প্রস্তুত। ২. আবার তিনি চাইলে কূটনৈতিকভাবে আলোচনার পথে হাঁটতে পারেন। ইরান ইঙ্গিত দিয়েছে তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত— যদি তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় হস্তক্ষেপ না করা হয়।
ট্রাম্পের নীতি বরাবরই অস্থির এবং চমকপ্রদ। কখনো তিনি আলোচনা করতে চান, আবার কখনো ‘পূর্ণবিস্ফোরক’ হুমকি দেন। ফলে তার দুই সপ্তাহের সময়সীমা আদতে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না হয়ে বরং একটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যৌথভাবে ইরানে হামলা চালায়, তাহলে তা একক কোনো সংঘর্ষ থাকবে না। হিজবুল্লাহ, হুতি, পিএমএফ-এর মতো ইরানঘনিষ্ঠ বহু গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হানতে পারে। আনুমানিক ২০ হাজার মার্কিন সেনা এখন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে রয়েছে— ইরাক, সিরিয়া, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার এবং জর্ডানে।
এছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইলকেও পাল্টা হামলার মুখে পড়তে হতে পারে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এমন এক ড্রোন হামলায় টাওয়ার ২২ ঘাঁটিতে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়।
আজকের আন্তর্জাতিক কূটনীতি এক অস্থির ভারসাম্যের ওপর দাঁড়িয়ে। যুদ্ধ এবং শান্তির মাঝে মাত্র একটি প্রেসিডেনশিয়াল কল। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের প্রত্যাশা— যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যা কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো মানবজাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংকট ডেকে আনবে। আর মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রশ্ন— আপনারা কি ন্যায়বিচার করবেন সকল পক্ষের জন্য, নাকি শুধু মিত্রদের জন্য মানবাধিকার সংরক্ষিত রাখবেন? যুদ্ধাপরাধ একপাক্ষিক নয়। কোনো দেশের পক্ষে থাকলে সে দেশের হাসপাতাল আক্রান্ত হলে তা যুদ্ধাপরাধ নয়— এমন বিশ্বাস মানবতা ও ন্যায়ের চরম অবমাননা। এই বিশ্বাসে যদি আমরা বিশ্ব চালাতে থাকি, তাহলে আমাদের জাতিসংঘ থাকবে, কিন্তু মানবতা হারিয়ে যাবে ইতিহাসের ধ্বংসস্তূপে।
 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

ইরানের আকাশসীমা দখলের দাবি ইসরাইলের/ ‘আকাশে যুদ্ধবিমান দেখা যাবে, তেহরান জ্বলবে’

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status