ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

ইরাক যুদ্ধের ভূত: ট্রাম্প কী ভুল পথে এগুচ্ছেন?

অ্যান্থনি জারচার

(৯ ঘন্টা আগে) ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:০২ অপরাহ্ন

mzamin

ইরান কতটা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছেছে- এই প্রশ্নটিই এখন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সামনে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক দ্বিধা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষ করে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে। এই ইস্যুতে মার্কিন নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও, তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে। এটি আবার ২০০০-এর দশকে আরেক রিপাবলিকান হোয়াইট হাউসের সময় মধ্যপ্রাচ্যের আরেক সংকটকালীন বিতর্কের প্রতিধ্বনি তৈরি করছে। কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন থেকে আকস্মিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার সময় এয়ারফোর্স ওয়ানে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি তার জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের মার্চ মাসের সাক্ষ্যকে সমর্থন করেন- যেখানে তিনি বলেছিলেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে না? 

এ প্রশ্নে ট্রাম্পের উত্তর- আমি তার কথা কেয়ার করি না। তিনি আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে খুব কাছাকাছি রয়েছে। গ্যাবার্ড তার কংগ্রেস সাক্ষ্যে জানিয়েছিলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান ২০০৩ সালে স্থগিত হওয়া পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি পুনরায় শুরু করেনি, যদিও তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছেছে। ট্রাম্পের মন্তব্যের পর গ্যাবার্ড বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির উচ্চমাত্রাই প্রমাণ করে যে তিনি ও ট্রাম্প একই উদ্বেগ  শেয়ার করছেন। তবে, ট্রাম্প গ্যাবার্ডের সাক্ষ্যকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে হোয়াইট হাউসে ইরান-বিরোধীদের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কে এই তুলসি গ্যাবার্ড?
তুলসি গ্যাবার্ডকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমালোচক, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তিনি খোলাখুলি হস্তক্ষেপবিরোধী  পররাষ্ট্রনীতি পোষণ করেন।  সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বার্নি স্যান্ডার্সকে একসময় সমর্থন করেছিলেন গ্যাবার্ড। কিন্তু ২০২২ সালে ডেমোক্র্যাট পার্টি ত্যাগ করে ২০২৪ সালে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান তিনি। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সিনেটে ৫২-৪৮ ভোটে তার নিয়োগ নিশ্চিত হয়। এতে  বোঝা যায় যে, ট্রাম্প তার প্রশাসনে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ (আইসোলেশনিস্টস) জায়গা করে দিচ্ছেন।

ট্রাম্প বনাম গ্যাবার্ড: ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনে বিভক্তি
গ্যাবার্ডের বিবৃতি এবং ট্রাম্পের তা প্রত্যাখ্যান ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধকে তুলে ধরেছে। ইসরাইল-ইরান সংঘাতে মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ নিয়ে এই বিভাজন আরও তীব্র হচ্ছে। যারা বিশ্বাস করেন ইরান বোমা তৈরির পথে- যেমন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, কংগ্রেসের ইরান-বিরোধীরা এবং ইসরাইলি সরকার- তারা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে বলা হয়েছে ইরান ২০ বছরে প্রথমবার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) লঙ্ঘন করেছে। 

অন্যদিকে, আমেরিকান অনুপ্রবেশবিরোধী শিবির- যেমন বিশিষ্ট কনজারভেটিভ ভাষ্যকার টাকার কার্লসন ও কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেইলর গ্রিন- দাবি করছেন ইরানের পারমাণবিক হুমকির বিষয়টি বাড়িয়ে তুলে যুদ্ধ চাপানো হচ্ছে। কার্লসন এক্সে  লিখেছেন- বাস্তব বিভাজন ইসরাইল বা ইরান সমর্থনে নয়। এটি হলো- যারা সহিংসতাকে হালকাভাবে উৎসাহ দেয় এবং যারা তা প্রতিরোধ করতে চায়, তাদের মধ্যে। এই দুই নেতা ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণের উদাহরণ টেনে বলেন- ইরান, যেটি আকারে তিনগুণ বড় এবং জনসংখ্যায় দ্বিগুণ, সেখানে একই রকম অভিযান হলে তা হবে আরেকটি বিপর্যয়কর পররাষ্ট্রনীতি।

ইরাক যুদ্ধের স্মৃতি: বুশ প্রশাসন ও ভুল গোয়েন্দা তথ্য
২০০৩ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন দাবি করেছিল, ইরাক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক হুমকি- ‘ধোঁয়া ওঠা বন্দুক’ হতে পারে একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ। তখন প্রেসিডেন্ট বুশ বলেন, ঝুঁকির স্পষ্ট প্রমাণ সামনে থাকার পর, আমরা চূড়ান্ত প্রমাণ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল জাতিসংঘে ছোট একটি শিশি ধরে বলেন, এটি হচ্ছে ইরাকের অস্ত্রায়িত অ্যানথ্রাক্সের নমুনা। তিনি বলেন, এই তথ্যগুলো কল্পনা নয়। এগুলো শক্ত ভিত্তির ওপর নির্ভর করে তৈরি।

তবে শেষ পর্যন্ত এসব তথ্যের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুদ্ধে বিপুল প্রাণহানি, ব্যয় ও জনঅসন্তোষ ডেমোক্র্যাটদের শক্তি বাড়িয়ে দেয় এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। ২০১৬ সালে ট্রাম্প ইরাক যুদ্ধের সমালোচক ছিলেন। তিনি এই বিক্ষুব্ধ রিপাবলিকান জনমতের ঢেউ হোয়াইট হাউসে পৌঁছান।

নতুন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ট্রাম্প?
৯ বছর পর ট্রাম্প আবারও মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। তবে এবার তিনি গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে বিরোধে গিয়েই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যদিও সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের’ আহ্বান জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসে ইরাকের ২০০৩ সালের মতো পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ বা রাষ্ট্রগঠনের কোনো পরিকল্পনার ইঙ্গিত নেই। তবে যুদ্ধ সবসময় অনিশ্চিত গতিপথে গড়ে ওঠে।

ট্রাম্পের অবস্থান ও প্রসঙ্গ হয়তো আগের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের চেয়ে আলাদা। কিন্তু তার গোয়েন্দা উপদেষ্টাদের ওপর ভরসা করা অথবা তাদের উপেক্ষা করা- উভয়ের পরিণতি হতে পারে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী।

(অ্যান্থনি জারচার, উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা, বিবিসি থেকে তার লেখার অনুবাদ)

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

ইরানের আকাশসীমা দখলের দাবি ইসরাইলের/ ‘আকাশে যুদ্ধবিমান দেখা যাবে, তেহরান জ্বলবে’

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status