খেলা
স্মৃতির গলে মুশফিক ‘লাইট হাউজ’
ইশতিয়াক পারভেজ, গল শ্রীলঙ্কা থেকে
১৫ জুন ২০২৫, রবিবার
কলম্বো থেকে গলে যেতে যেতে নাজমুল হোসেন শান্তদের স্বাগত জানিয়েছে বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাস। রাতে হোটেলে পৌঁছে পেয়েছে লম্বা এক বিশ্রামের সুযোগ। গতকাল কোনো অনুশীলন ছিল না টাইগারদের। কিন্তু সংবাদকর্মীদের বসে থাকার সুযোগ কোথায়! সকাল হতেই বৃষ্টি মাথায় ছুটতে হলো গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দিকে। আকাশে কালো মেঘ আর থেমে থেমে বৃষ্টি। স্টেডিয়ামের পাশেই ভারত সাগর থেকে ভেসে আসছে ঝড়ো হাওয়া। পুরো মাঠ কভারে ঢাকা, তার মাঝেই চলছে মাঠকর্মীদের পরিচর্যার কাজ। মাঠের যে অবস্থা, তাতে খেলা হবে কিনা তা নিয়ে আছে শঙ্কা! মঙ্গলবার এখানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে নামবে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। এই স্টেডিয়ামের সঙ্গে টাইগারদের জড়িয়ে আছে এক জাদুকরী স্মৃতি। সাদা পোশাকে বাংলাদেশ এখানে গড়েছিল অনন্য এক রেকর্ড। ২০১৩, এখানে ব্যাট হাতে দেশের হয়ে প্রথম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিকুর রহীম। তবে তার আগেই এই রেকর্ড গড়ে ফেলতে পারতেন টাইগারদের ক্রিকেটের নক্ষত্র মোহাম্মদ আশরাফুল। কিন্তু ১৯০ রানের তার সেই ইনিংসটি এখনো এই মাঠে দীর্ঘশ্বাস হয়ে আছে। তাদের সঙ্গে নাসির হোসেনের সেঞ্চুরি আর মুমিনুলে ফিফটিতে ভর করে দেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এক ইনিংসে ৬৩৮ রান। গেল এক যুগেও যা ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। যত দিন গড়িয়েছে দেশের ব্যাটিংয়ের এমন সোনালী দিন খুব একটা আসেনি। এবার সেই ‘১৩’ এর জাদু ফিরবে কি শান্ত, লিটন দাসদের হাত ধরে! সাগার পাড়ের এই স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের লাইট হাউজ হতে পারেন মুশফিক।
বাংলাদেশ দলের এখন অন্যতম ভয় আর শঙ্কার নাম ব্যাটিং। তবে দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবালের বিশ্বাস দল দারুণ কিছু করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো। আমাদের দলটা অভিজ্ঞ, সেই হিসেবে আশা থাকবে ভালো কিছু হবে। শুক্রবার দ্বিতীয় ভাগে বাংলাদেশ দল পা রাখে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। সেখানে শান্তর সঙ্গে ছিলেন ওয়ানডের নয়া অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ছিলেন, টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাসও। তবে তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম মুশফিকুর রহীম। এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশের ব্যাটিং ভরসা। শান্তদের তারুণ্যের পথ চলায় তার অভিজ্ঞতা হতে পারে গলে লাইট হাউজের মতোই। তার দেখানো পথে আবারো জেগে উঠতে পারে বাংলাদেশের ব্যাটিং! যদিও ২০১৭ তে গলে নিজেদের সবশেষ টেস্টে অনুপ্রেরণা হাতে পারেনি ২০১৩ সেই জাদুকরী স্মৃতি। সেবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে নিজের প্রথম ইসিংসে ৩১২ ও দ্বিতীয়টিতে ১৯৭ রানে গুটিয়ে যায় দল। ফলে ২৫৯ রানের বড় ব্যবধানে হার। মানে এই মাঠে মুদ্রার আরেক পিঠও দেখেছিল দল।
এক সময় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান-বোলারদের জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট মানেই ছিল বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা। এখনো যে সে ব্যাপারটা পুরোপুরি অতীত হয়ে গেছে, তা নয়। ২০১৪-এর হোম সিরিজের প্রথম টেস্টেই তো ইনিংস ও ২৪৮ রানের ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ! তবু বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট থেকে একপেশে মেজাজ কিছুটা হলেও দূর হয়েছে গলের সেই টেস্টের পর। বিদেশের মাটিতে এর আগে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ দল। ড্র করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জিম্বাবুয়ের সঙ্গে। কিন্তু প্রতিপক্ষ ‘দুর্বল’ ছিল, এই অজুহাতে সেসব অর্জনের জন্য বাংলাদেশ দল কখনো নিরঙ্কুশ কৃতিত্ব পায়নি। ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়া টেস্ট ড্র করার পর বিদেশের মাটিতে বুক চিতিয়ে লড়াই করার সাহসটা আবার ফিরে এসেছিল ২০১৩-এর গল টেস্টেই।
সেবার প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার তিন সেঞ্চুরির জবাবে বাংলাদেশ দল পায় এক ডাবল সেঞ্চুরি আর দুই সেঞ্চুরি। অধিনায়ক মুশফিকের ব্যাট থেকে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এসেছিল সে টেস্টেই। মনের অ্যালবামে মুশফিকও নিশ্চয়ই গল টেস্টের ছবিটা বাঁধাই করে রেখেছেন সোনালী ফ্রেমে। তাদের ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ লিড নিয়েছিল ৬৮ রানের। পঞ্চম দিনে গিয়ে ড্র হয় টেস্ট। এবার সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনার একটাই কারণ। ব্যাটিংয়ে মুখ থুবরে পড়া দলটি এবার শ্রীলঙ্কায় গিয়ে গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামেই প্রথম টেস্ট খেলবে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কানরা বরাবরই সিংহ। কিন্তু ঠিক তিন বছর পর গলে আবারো বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়ে তাদের স্মৃতিতেও নিশ্চয়ই ফিরে আসবে ২০১৩-এর স্মৃতি। সেবার টেস্টটি শুরু হয়েছিল ৮ই মার্চ, এবার শুরু হবে ১৭ই জুন।