খেলা
টেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৫ জুন ২০২৫, রবিবার
জয়ের জন্য তখন স্রেফ ৫ রান প্রয়োজন! সবার কাছে এটা অল্প মনে হলেও দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ও সমর্থকদের জন্য এটা বিশাল ছিল। একেকটা রান, করতালি! কিন্তু অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছিল না। টিভির পর্দায় কখনও দেখাচ্ছে ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা শন পোলককে, কখনও গ্যালারিতে থাকা এবি ডি ভিলিয়ার্সকে আবার বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দাঁড়ানো গ্রায়েম স্মিথকে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে যারা এক শব্দে- কিংবদন্তি। লর্ডসের ব্যালকনিতে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা, কারও যেন তর সইছিল না। তবে ২৭ বছরের অপেক্ষা শেষ হতে তো একটু সময় লাগবেই! সে কারণেই হয়তো এই ৫ রান করতে লাগলো ১৬ বল। জস হ্যাজলউডের ফুলটস বল কাভারে ঠেলে দিয়েই উদযাপনে মাতলেন ভেরেইনা। অপেক্ষা শেষ হলো প্রোটিয়াদের, ঘুচলো চোকার্স তকমা। লর্ডসে গতকাল ২০২৩-২৫ চক্রের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৫ উইকেটে। ২৮২ রানের লক্ষ্য চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ছুঁয়ে ফেলে টেম্বা বাভুমার দল। আইসিসি ইভেন্টে এটা প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে ১৯৯৮ সালে ঢাকায় নকআউট টুর্নামেন্টে (বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) শিরোপা জিতেছিল তারা। এক যুগের বেশি সময় আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম শিরোপা জেতে প্রোটিয়ারা। যেখানে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল কাগিসো রাবাদা ও এইডেন মার্করামের। এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতাতেও তাদেরই অবদান সবচেয়ে বেশি। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নেন রাবাদা আর ম্যাচ সেরা মার্করাম চতুর্থ ইনিংসে খেলেন ১৩৬ রানের ইনিংস। চাপের মুখে ভেঙে পড়া, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে সবাই একসঙ্গে খারাপ খেলার জন্য অনেক বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গী ‘চোকার্স’ তকমা। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভারতের বিপক্ষে জয়ের পথে থাকা ম্যাচ হেরে যায় তারা। বলা হয়, আইসিসি টুর্নামেন্টে নকআউট ম্যাচে ওরাই সবচেয়ে সহজ প্রতিপক্ষ! ১৯৯৮ সালে একমাত্র আইসিসি ট্রফি জেতার পর সেমিফাইনাল-ফাইনালসহ আইসিসি টুর্নামেন্টে টানা ১৫টি নকআউট ম্যাচ হেরেছে প্রোটিয়ারা।
লর্ডসে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও শুরুর ইঙ্গিত তেমনই ছিল। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ২১২ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর আফ্রিকার ব্যাটাররা যেন উইকেটে দাঁড়াতেই পারলেন না। মাত্র ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে অজিদের উপহার দেন ৭৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড! তবে এরপর আবার পেসাররাই ম্যাচে ফেরান প্রোটিয়াদের। তারপরও চতুর্থ ইনিংসে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৩ রানের। যেখানে প্রথম ৩ ইনিংসে একটাতেও ২২০ই হয়নি! এরপর চাপ আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটারদের ভেঙে পড়ার রেকর্ড তো ছিলই! তবে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ভেঙে পড়ার পুরোনো ইতিহাসকে ছুড়ে ফেলে বাভুমা-মার্করামরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। ম্যাচের তৃতীয় দিন চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ৭০ রানে ২ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর তৃতীয় উইকেটে মার্করাম ও বাভুমার ২৫০ বল স্থায়ী ১৪৭ রানের দুর্দান্ত জুটিই মূলত গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগে তার। হাঁটছিলেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তার পরও চালিয়ে যান ব্যাটিং। ১৩৪ বলে ৫ চারে ৬৬ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরা মার্করাম তো চতুর্থ ইনিংসে খেললেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। ১৪ চারে ২০৭ বলে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলে জয় থেকে স্রেফ ৬ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন এই ওপেনার। গতকাল চতুর্থ দিনে জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ৬৯ রান, হাতে ৮ উইকেট। দিনের তৃতীয় ওভারে ফেরেন টেম্বা বাভুমা। হ্যামস্ট্রিংয়ের কারণে পুরো ইনিংসেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ানো প্রোটিয়া অধিনায়ক ফিরেছেন জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে। পরে ট্রিস্টান স্টাবসের আউটে লড়াইয়ে উত্তেজনা ফেরে কিছুটা। তবে নাটকীয় বা অসাধারণ কিছু করে দেখাতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। মার্করাম দাঁড়িয়ে থেকে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। পরে সেখানে নোঙর করান ভেরেইনা ও ডেভিড বেডিংহ্যাম।