বাংলারজমিন
প্রমত্তা ভুবনেশ্বর নদ এখন মরা খাল
শিমুল তালুকদার, সদরপুর (ফরিদপুর) থেকে
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার
এক সময়ের খরস্রোতা প্রমত্তা ভুবনেশ্বর নদ কালের বিবর্তনে এখন মৃত। দখল আর বেদখলে পরিণত হয়েছে মরা খালে। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলাটি ভুবনেশ্বর নদের তীরে অবস্থিত। একসময় ভুবনেশ্বর নদে বড় বড় পালতোলা পণ্যবাহী নৌকা চলতো, লঞ্চ আসতো ঢাকার সদরঘাট থেকে। পদ্মা নদীর বৃহৎ শাখা ছিল নদটি। নৌকাবাইচ হতো, যা ছিল নদীকেন্দ্রিক সংস্কৃতির অংশ। জেলেরা বর্ষা মৌসুমে ইলিশ মাছ ধরতো। দেশি প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম ছিল ভুবনেশ্বরে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বর্ষাকালে ভুবনেশ্বর নদীর দুইপাড় অথৈ পানিতে ভরপুর থাকতো। উপজেলার আকটেরচর ইউনিয়ন এলাকায় প্রবাহমান পদ্মার শাখা হতে উৎপত্তি। জানা যায়, মুঘল আমল ও বৃটিশ আমলে ফরিদপুর অঞ্চলে কৃষিপণ্য এই নদের পথেই পরিবহনের ছিল প্রধান মাধ্যম। এ ছাড়াও এই নদে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ পলি মাটি জমা হয়। এজন্য উপজেলার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি হওয়ায় প্রচুর ফসল উৎপাদন হতো। কালের বিবর্তনে পলি ও বালু মাটির স্তর বাড়তে থাকায় নদটি শুকিয়ে যায়। ড্রেজিং ব্যবস্থা না থাকায় ভুবনেশ্বর নদটির দুইপাড় আকারে ছোট হয়ে আসে। এরপর বিভিন্ন স্থান স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নেয়। বর্তমানে দখল আর বেদখল এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেখভালের অভাবে ভুবনেশ্বর নদটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ভুবনেশ্বর পাড়ের বাসিন্দা আমিরাবাদ গ্রামের পান্নু মৃধা বলেন, আমরা ছোটবেলায় নৌকায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। এই নদের পথেই নৌকা দিয়ে জেলা শহর ফরিদপুর পর্যন্ত যাতায়াত ছিল। বর্ষা মৌসুমে ইলিশ মাছের পাশাপাশি প্রচুর দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম ছিল এটি। এখন পানির অভাবে আর দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না। নদটি খনন করে পানির প্রবাহ বাড়ালে আবার দেশীয় প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম হতো। ভাসানচর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ কাউসার রহমান জানান, আমি ইতিপূর্বে ফরিদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে নদটি খনন করে পানি প্রবাহের অনুরোধ করেছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে একটি পাকা ঘাটলা তৈরিরও অনুরোধ করেছিলাম। যাতে মানুষ গোসল করতে পারে এবং নদের পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান বদলি হয়ে যাওয়ার পর সে কাজ আর আলোর মুখ দেখেনি। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের উচিত- ভুবনেশ্বর নদটি সীমানা নির্ধারণ করে দখলমুক্ত করা। সেইসঙ্গে নদটি খনন করে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা। এ ব্যাপারে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সামছুল হাসান মানবজমিনকে জানান, ভুবনেশ্বর নদ এখন মৃত। এটা আর ড্রেজিং করার অবস্থায় নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই নদের খনন কাজে কোনো উন্নয়ন বাজেট নেই। পদ্মা নদীর গতি পরিবর্তনের ফলেই ভুবনেশ্বর নদ মৃত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানা বলেন, নদটি খনন করলে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করে জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম করা যেতো। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি ভুবনেশ্বর নদ খনন কাজে কোনো প্রকল্প হাতে নেয়, তবে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।