বিশ্বজমিন
অভিবাসীদের শহরে সংঘর্ষ এখন ঝড়ের রূপ নিয়েছে
কায়লা এপস্টাইন, বেরন্ড ডেবুসমান এবং ক্রিস্টাল হেইস
(১ সপ্তাহ আগে) ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:০৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:০৫ অপরাহ্ন

এই সপ্তাহান্তে, লস অ্যানজেলেসে অভিবাসন ধরপাকড়ের এক সপ্তাহ পর সেখানে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। প্রতিবাদকারীরা ট্রাম্প প্রশাসন ও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সংস্থার বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদে ফেটে পড়ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প লস অ্যানজেলেসে ৭০০ মার্কিন মেরিন এবং ৪০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য পাঠিয়েছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। এর ফলে তার ব্যাপক নির্বাসন অভিযান একটি অগ্নিগর্ভ নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন করেছে। এই ধরপাকড় ও পরবর্তী প্রতিবাদ এমন এক শহরে হয়েছে, যা উদারপন্থি হিসেবে পরিচিত এবং ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। হোয়াইট হাউস এই জায়গাটিকে জনসমক্ষে একটি আদর্শ প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখাতে চাইছে, যেন তারা অবৈধ অভিবাসীদের অপসারণ ও ‘আইন ও শৃঙ্খলা’ প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি করছে।

গভর্নর গ্যাভিন নিউসম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একজন প্রকাশ্য সমালোচক। তিনি এক্সে লিখেছেন, এই সেনা মোতায়েন একজন একনায়ক প্রেসিডেন্টের বিকৃত কল্পনা।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এমন এক পটভূমিতে, যেখানে প্রশাসন অভিবাসী গ্রেফতার ও নির্বাসনের সংখ্যা বাড়াতে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে। কারণ তারা তাদের বর্তমান অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট নয়। এনবিসি নিউজের তথ্য অনুযায়ী, আইসিই সম্প্রতি তাদের কার্যক্রম আরও জোরালো করেছে এবং ৪ঠা জুন একদিনেই ২২০০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এই সংখ্যা এক দিনের জন্য রেকর্ড। প্রতিবেদন বলছে, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই অলটারনেটিভ টু ডিটেনশন প্রোগ্রামে ছিলেন। এই প্রোগ্রামে অবিলম্বে বিপজ্জনক নয়- এমন অভিবাসীদের ছেড়ে দিয়ে নজরদারির আওতায় রাখা হয়।
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলারকে এই নীতির রূপকার হিসেবে দেখা হয়। তিনি বলেছেন- তারা চান আইসিই প্রতিদিন ৩০০০ অভিবাসীকে গ্রেফতার করুক। ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিনে এই সংখ্যা ছিল দৈনিক প্রায় ৬৬০। মে মাসের শেষদিকে ফক্স নিউজকে মিলার বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়াতে থাকবেন। তবে প্রথম ১০০ দিনের অনেক সময়জুড়েই প্রত্যাবর্তনের সংখ্যা ছিল বাইডেন প্রশাসনের শেষ বছরের সমান কিংবা তার চেয়ে কম। ২০২০ সালের শুরু থেকেই হোয়াইট হাউস আর প্রতিদিনের প্রত্যাবর্তনের তথ্য প্রকাশ করে না। মে মাসের শেষে সীমান্ত বিষয়ক প্রশাসনিক কর্মকর্তা টম হোমান সাংবাদিকদের বলেন, আমি এই সংখ্যায় সন্তুষ্ট না। আমাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, তারা অনেক বেশি টিম গঠন করেছে এবং গ্রেফতারের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে বলে আশা করছে।
এদিকে আইসিইর শীর্ষ প্রত্যাবর্তন বিষয়ক কর্মকর্তা কেনেথ জেনালোসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পদত্যাগ করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে দুইজন শীর্ষ প্রত্যাবর্তন বিষয়ক কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ক্যালেব ভিটেলোকেও সরিয়ে দেয়া হয়। তখন সংস্থাটি জানায়, এই পদক্ষেপগুলো সংগঠনকে পুনর্গঠনের অংশ, যা ট্রাম্প এবং আমেরিকান জনগণের চাহিদা অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার ও প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আমেরিকার কমিউনিটিকে নিরাপদ রাখবে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানায়, লস অ্যানজেলেসে গ্রেফতার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে ধর্ষণ, চুরি এবং মাদক সংক্রান্ত অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও রয়েছে। তবে স্থানীয় অভিবাসন কর্মীরা এবং কমিউনিটির সদস্যরা বলছেন, এই অভিযানে নিরীহ পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং শান্তিপূর্ণ অভিবাসীদেরও আটক করা হয়েছে।
সোমবার এক সমাবেশে লস অ্যানজেলেস শহরের কাউন্সিল সদস্য ইসাবেল জুরাডো বলেন, ফ্যাশন ডিস্ট্রিক্টে এক গুদামে শুক্রবারের অভিযান সার্বজনীন নিরাপত্তা নয়, বরং ভয়ভীতির মাধ্যমে রাজ্যে সহিংসতা, যা মানুষকে চুপ করানো, ভয় দেখানো এবং অদৃশ্য করে দেওয়ার কৌশল।
যদিও জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিগুলো বেশিরভাগ আমেরিকানদের কাছে জনপ্রিয়, তবুও তার কিছু সমর্থক তার এই কৌশল নিয়ে উদ্বিগ্ন। ‘লাতিনাস ফর ট্রাম্প’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ফ্লোরিডা স্টেট সিনেটর ইলিয়ানা গার্সিয়া এক্সে লিখেছেন, ভোট দিয়ে ট্রাম্পের কাছে আমরা এটা চাইনি। আমি অপরাধী অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তনের গুরুত্ব বুঝি। কিন্তু যা আমরা দেখছি তা হলো ইচ্ছামতো লোক ধরার ব্যবস্থা। এসব মানুষ আদালতে নিয়মিত যাচ্ছেন। অনেকের ক্ষেত্রে নির্যাতনের আশঙ্কা রয়েছে। আর সবটাই করা হচ্ছে একটি মনগড়া লক্ষ্য পূরণের নামে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় নিয়ন্ত্রিত রাজ্যেই আইসিই বেশি পরিমাণে অভিযান চালাচ্ছে। টেনেসি’র মতো কিছু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত রাজ্য এসব তৎপরতায় সহায়তাও করছে। এমোরি ল স্কুলের সহযোগী ডিন জন অ্যাসেভেডো যুক্তরাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতা ও প্রতিবাদ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়া প্রতিরোধ করতে একজোট হয়েছে। লস অ্যানজেলেসের রাস্তায় সহিংসতা ও প্রতিরোধের ছবি ট্রাম্পের জন্য ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর উপলক্ষ এনে দেয়। তার সমর্থকদের কাছে এটা একটা বার্তা- সে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।
তবে এই শহর, যা নিজেকে ‘স্যান্কচুয়ারি সিটি’ বলে ঘোষণা করেছে (অর্থাৎ ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা সীমিত করে), প্রশাসনের চাপানো ভূমিকা নিতে চায়নি। ‘এরা আমার মানুষ, জানেন তো, আমি আমাদের জন্য লড়ছি’- বলেন মারিয়া গুতিয়েরেজ। তিনি এক মেক্সিকান-আমেরিকান। তিনি লস অ্যানজেলেস কাউন্টির প্যারামাউন্ট শহরে আইসিই এজেন্টদের দেখে প্রতিবাদে দুই দিন অংশ নেন। সেখানে লুটপাট হয়, একটি গাড়িতে আগুন ধরানো হয়। পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।
গুতিয়েরেজ বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন সহিংস অপরাধে যুক্ত অভিবাসীদের টার্গেট করা উচিত। তবে যারা কঠোর পরিশ্রম করে ভালো জীবন গড়তে চায়, তাদের নয়। তিনি বলেন, এটা আমাদের শহর। আমরা ক্ষুব্ধ, আমরা জানি কিভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয়, আর এসবে আমরা ভয় পাবো না।
তবে এই আন্দোলন পুরো সম্প্রদায়ের সমর্থন পাচ্ছে না। প্যারামাউন্টের কাছেই থাকেন হুয়ান। তিনি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। পরে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তিনি আইসিই’র পদক্ষেপকে সমর্থন করেন। বলেন, আইসিই এজেন্টদেরও একটা কাজ আছে, যেমন আপনার ও আমার। তিনি বলেন, বহু বছর দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছেন। পরে নাগরিক হন এবং তার চার সন্তান কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছে। তিনি বলেন, আমার পরিবারে এখনো অনেকেই বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আছে। তবে আপনি যদি এখানে থাকার অধিকার না রাখেন, তবে লড়াই করার জায়গা নেই।
অপরাধ মানেই অপরাধ- তিনি বলেন।
(অনলাইন বিবিসি থেকে অনুবাদ)
পাঠকের মতামত
Why now? Trump was your choice any way.....
They are blocking roads that's not protesting that's is riots. No matter what ? They all illegal migrant must go.