দেশ বিদেশ
মারণাস্ত্র ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ!
স্টাফ রিপোর্টার
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
পুলিশের হাতে আর মারণাস্ত্র থাকবে না- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পরপরই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে পক্ষে-বিপক্ষে এ নিয়ে নানা মতের সৃষ্টি হয়েছে।
গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে নির্বিচারে অস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ হত্যা করে ভাবমূর্তির সংকটে থাকা পুলিশ বাহিনীকে আর কোনো মারণাস্ত্র না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু মারণাস্ত্র ছাড়া পুলিশ কীভাবে নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষা করে সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন অপরাধীর সঙ্গে লড়াই করে অপরাধ দমন করবে সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তরের তরফে বলা হয়েছে এপিবিএনের কাছে মারণাস্ত্র থাকবে। সাধারণ অভিযানে পুলিশের মারণাস্ত্র দরকার নাই। আর তাদের কাছে রাইফেল থাকবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে মারণাস্ত্র সঙ্গে নিয়েই কাজ করবে পুলিশ। এ ছাড়া এ নিয়ে একটি নীতিমালা হবে। কখন কোথায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা যাবে।
নিরাপত্তা ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে পুলিশের দুর্বলতায় দেশ জুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। সীমান্ত দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেদারছে অস্ত্র প্রবেশ করেছে দেশে। এসব অস্ত্র সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে চরমপন্থি, জলদস্যু, মাদক গডফাদার, পেশাদার অপরাধী, শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর কাছে রয়েছে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ইতিমধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুনখারাবি, গোলাগুলির মতো ঘটনা এখন প্রায়শই ঘটছে। নিরাপত্তা শঙ্কায় লুট হওয়া ও হদিস না পাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা জরুরি হয়ে গেছে। তাই অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের মতো অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হলে অবশ্যই পুলিশকে নিজের নিরাপত্তার জন্য মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। তবে বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলন, জমায়েতের মতো ঘটনায় মারণাস্ত্র ব্যবহার না করাই উত্তম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে হাসিনা সরকার পুলিশ বাহিনীকে বল প্রয়োগ করার অনুমতি দেয়। পুলিশও আন্দোলন দমাতে দেদারছে গুলি ব্যবহার করে। পুলিশের গুলিতে যে শুধু শিক্ষার্থীরা নিহত হয়েছেন এমনটি নয়। শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিহত হয়েছেন। তাই জুলাই-আগস্টের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয় সেজন্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশ বিভিন্ন ধরনের লাঠি ও রাইফেল ব্যবহার করতে পারবে। তবে পুলিশের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে এমন সব কর্মকাণ্ডে অনুমতি সাপেক্ষ মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে মারণাস্ত্র ছাড়া পুলিশের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা শঙ্কা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ সদরদপ্তর। সদরদপ্তর জানিয়েছে, পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র ব্যবহারের প্রাধিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে থাকে। মাঠপর্যায়ে যেকোনো পুলিশি কার্যক্রম যেন ঝুঁকিমুক্ত থাকে সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অস্ত্রের প্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়। কাজেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা তৈরি হওয়ার বিষয়টি অমূলক। চিহ্নিত দুর্ধর্ষ অপরাধী, চরমপন্থি বা সশস্ত্র বিদ্রোহ (ইমারজেন্সি) প্রবণ এলাকায় পুলিশি কার্যক্রমের সময় অবশ্যই যথাযথ অস্ত্র ব্যবহারের জন্য পুলিশ প্রাধিকারপ্রাপ্ত। ৫ই আগস্ট উত্তর নতুন বাংলাদেশে পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের প্রাধিকারের বিষয়টি শুধুমাত্র জনশৃঙ্খলা রক্ষায় অর্থাৎ মিছিল-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নেই গভীরভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মিছিল-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে লং আর্মস অর্থাৎ জীবনবিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা স্বভাবতই প্রশ্নবিদ্ধ। এই বিষয়টিই বর্তমানে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গত সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির নবম সভায় পুলিশের কাছে মারণাস্ত্র না থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কোনো মারণাস্ত্র আর অস্ত্র পুলিশের হাতে থাকবে না। এগুলো তাদের জমা দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে থাকবে। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।